কিভাবে রামরাজাতলায় সরস্বতী মন্দিরে শুরু হল শ্রী রাম ও সীতা দেবীর পুজো? জানুন এই মন্দিরের সেই অজানা ইতিহাস

কিছু মাস আগে সারা দেশ মেতে উঠেছিল অযোধ্যার রাম মন্দির নিয়ে। এই রাম মন্দিরই ভারতেরবাসীদের কাছে একটা অপূর্ব নির্মাণ। শোনা গিয়েছে এই মন্দির তৈরির সময় ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি ও দেশের বিভিন্ন প্রাচীন রাম মন্দির থেকে মাটি নিয়ে আনা হয়েছিল অয্যোধ্যায়। সেই মাটি মিশিয়েই তৈরি করা হয়েছে ‘রামলালা’র মন্দির। তারই মধ্যে একটা মন্দির রয়েছে বাংলায়। হাওড়া শহরের রামরাজাতলায় অবস্থিত রাম মন্দির। আজ চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই মন্দিরের সমস্ত অজানা কথা।

প্রায় ৩০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল রামরাজাতলার রাম মন্দির। সেই সময়ের জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী এই মন্দিরের নির্মাণ করেন।

তবে হঠাৎই এই মন্দির নিয়ে শুরু হয় এক বিবাদ। সেই সময় গ্রামের লোকেরা এই স্থানে সরস্বতী পুজো করতেন। ফলে, গ্রামের অনেকেই চাইছিলেন না যে সেই স্থানে রাম পুজো হোক। তারপর অনেক আলোচনার পর, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে এই স্থানে যেমন রাম সীতার মূর্তি থাকবে তেমনভাবেই তাঁদের মাথায় বিরাজ করবেন মা সরস্বতী।

তাই সেই থেকেই আজ অব্দই ওই একই ধরণের মূর্তি প্রতি বছর গঠন করা হয়। সেখানে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা ছাড়াও বিরাজ করেন মা সরস্বতী ও নানান দেব-দেবী।

প্রতিবছর রাম নবমীর সময় এই মন্দিরে রাম ও সীতার বিশেষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই মূর্তি চার মাস ব্যাপী বিরাজ করে মন্দিরে। পুজো চলে। এরপর শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার বিসার্জন করা হয় এই মূর্তিকে। ফলে, বাকি আটটা মাস সম্পূর্ণ নির্জন থাকে এই মন্দির।

ভক্তদের কল্যাণের জন্যে এই মন্দিরে নতুনভাবে স্থাপন করা হয় রাম সীতার নব প্রতিমা, যা এখানে সবসময় বিরাজমান থাকবে। দেখা গিয়েছে যে এই মূর্তিটি বানানো হয়েছে সাদা শ্বেত পাথর দিয়ে। সেই পাথর আনা হয়েছে ভারতের উত্তর-পশ্চিম রাজ্য অর্থাৎ রাজস্থান থেকে। পাশাপাশি এই মন্দিরে রাখা হয়েছে বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মূর্তি। এছাড়া রয়েছে হনুমানের মূর্তি।

প্রতিদিন নিয়মিত দু’বেলা ধরেই এই দেব দেবীর পুজো এবং আরতি করা হয়।

মন্দিরের এক সেবায়েত জানিয়েছেন যে এখানে ২০২০ সাল অর্থাৎ করোনা পরিস্থতিকাল থেকেই নিত্য দেব দেবীরফ সেবা চলে আসছে।

প্রত্যেকদিন সকাল ৮:৩০টা-৯টা করে এই মন্দির খোলে এবং বেলা ১২টা করে মন্দিরের দ্বার বন্ধ করা হয়। ফের সন্ধ্যে ৬টা-৬:৩০টা করে মন্দির খোলা হয় এবং রাত ৯টা করে বন্ধ হয় মন্দির। তবে, বিশেষ দিনে একটি সময়ের পর এই মন্দিরের দ্বার সবসময় খোলা রাখা থাকে। পূর্ণিমার দিনগুলোয় বিশেষ পুজো হয় এই মন্দিরে।

এই মন্দিরে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়না দেব-দেবীদের। সকালবেলায় ফল, মিষ্টি ও নৈবেদ্য দিয়ে পুজো করা হয় এবং সন্ধ্যেবেলায় শুকনো ভোগ যেমন চিঁড়ে, মুড়কি, মিষ্টি দিয়ে পুজো করা হয়। তবে, বিশেষ বিশেষ দিনে লুচি ভোগ দেওয়া হয় এবং পুর্ণিমার দিনে সিন্নি দেওয়া হয় ঠাকুরকে।

জানা যায় যে এই মন্দিরের নামেই এই স্থানের নাম হয় রামরাজাতলা। এখানকার সংলগ্ন এলাকা জুড়ে সারা বছর নানান দোকান পাঠ এবং রামনবমীতে এই জায়গা হয়ে ওঠে আরও জমজমাট। চার মাস জুড়ে চলে রাম মেলা। সেই মেলা ও রাম ঠাকুরকে দর্শন করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে বহু ভক্তরা।

এই মন্দিরে আসতে হলে আপনাদের ট্রেনে করে নামতে হবে হাওড়া রামরাজাতলা স্টেশনে। সেখান থেকে কিছুটা পায়ে হেঁটে আসলেই পৌঁছে যাবেন এই মন্দিরে। এছাড়া হাওড়া থেকে যদি বাসে আসেন, তাহলে সাঁতরাগাছি মোড় অথবা জানাগেটে নামতে হবে। সেখান থেকে এক টোটোতেই পৌঁছে যাবেন মন্দিরের দ্বারে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...