কলকাতার টালিগঞ্জে কিভাবে প্রতিষ্ঠা হল মা করুণাময়ী? জেনে নিন সেই ইতিহাস

মা কালীর ভুবন জোড়া মহিমা। তাঁর অনেক কথা, লোককথা আমরা শুনে থাকি লোকমুখে। কলকাতায় এমন কিছু মন্দির রয়েছে যেখানে মা কালীর ভক্তরা তাঁদের মনোস্কামনা পূরণ করতে আসেন। এইভাবেই সেই মন্দির হয়ে জগৎ বিখ্যাত। ঠিক তেমনি হল কলকাতা টালিগঞ্জ এলাকায় করুণাময়ী কালীমন্দির।

শোনা যায় এখানে নাকি কন্যাহারা পিতার আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন মা করুণাময়ী! চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এই মন্দিরের সেই কাহিনী।

জানা যায় যে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রায় চৌধুরীদের কুলতিলক নন্দদুলাল রায়চৌধুরী।

কথিত আছে, কেসবরাম রায়চৌধুরীর দ্বিতীয় পুত্র কৃষ্ণদেব রায়চৌধুরীর একমাত্র পুত্র নন্দদুলালের জন্মদিন হয় ১৭২২ সালে। এরপর নন্দলদুলালের পর পর তিনটে পুত্র সন্তান হয়। তাঁদের নাম দেন রাঘবেন্দ্র, রামচরণ ও জগন্নাথ।

কিন্তু এই তিন পুত্র সন্তানের পর ননদুলালের একটি কন্যা সন্তান লাভের ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছে পূরণ হয়। জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। নাম দেন করুনাময়ী।

কিন্তু মাত্র সাত বছর বয়সে করুণাময়ীর অকালপ্রয়াণ ঘটে। কন্যার অকাল মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েন নন্দদুলাল। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

 সেইরকমই এক রাতে স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেখানে তাঁর কন্যা করুণাময়ী তাঁকে বলছে, " বাবা তুমি কেঁদো না। আমি তোমায় কোনও দিনই ছেড়ে যেতে পারব না। কাল ভোরে তুমি আদিগঙ্গার ঘাটে যেও। সেখানে একটা বটগাছের তলায় একটা কষ্টিপাথর দেখতে পাবে। সেই পাথর দিয়ে তোমার ইষ্টমূর্তি গড়ে প্রতিষ্ঠা করো। আমি ওই মূর্তির মধ্যেই চিরদিন চিন্ময়ী রূপে বিরাজ করব।"

পরদিন ভোরবেলা নন্দদুলাল গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বটগাছের তলায় সত্যিই কষ্টিপাথর দেখতে পান! চোখের জল মুছে সেই শিলা তুলে নিয়ে আসেন তিনি। তারপর শুভদিন দেখে জনৈক ভক্ত ভাস্করকে দিয়ে নির্মাণ করান মায়ের স্বপ্নাদিষ্ট সেই অপূর্ব নয়নাভিরাম করুণাময়ী মূর্তি।

এরপর ১৭৬০ সালের কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে আদিগঙ্গার পশ্চিমপাড়ে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয় সেই বিগ্রহের এবং নির্মিত হয় নবচূড়া সহযোগে মা করুণাময়ীর নবরত্ন মন্দির। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে ১৪০ বছরের মধ্যেই মা করুণাময়ীর মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়। তবে, মন্দির ধ্বংস হলেও নন্দদুলালের প্রতিষ্ঠিত করুণাময়ী মায়ের মূর্তি আজও অম্লান রূপে বিরাজমান।

নিত্যপূজো ছাড়াও কালীপুজোর দিন রাজবেশে সাজানো হয় মা করুণাময়ীকে। এই মন্দিরে বড় করে কুমারী পুজো হয়। সকালে কুমারীপুজো এবং রাতে দেবীর বিশেষ পুজো সম্পন্ন হয়। সেদিন বেনারসি শাড়ি ও গয়নায় সাজানো হয় মাকে।

রাতে মায়ের জন্য সমস্ত রকমের ভোগের পদ থাকে। ১১ রকমের মাছ, সাত রকমের ভাজা, সাত রকমের তরকারি, সাদা ভাত, পোলাও, খিচুড়ি, লুচি, ছোলার ডাল, দই, মিষ্টি, পায়েস ইত্যাদি নানা রকম আয়োজন করে ভোগ দেওয়া হয় মাকে।

এই বিশেষ দিনে বহু ভক্তের সমাগম হয় মন্দিরে। তবে, নিত্যদিনের পুজো দিতেও আসেন বহু ভক্তরা।   

কিভাবে আসবেন এই মন্দিরে? এই মন্দিরে আসতে হলে মহানায়ক উত্তম কুমার মেট্রো স্টেশনে নেমে অটো করলেই পৌঁছে যাবেন করুণাময়ী মায়ের কাছে। অথবা আপনাকে হরিদেবপুর মোড়ে এসে মাত্র পায়ে হাঁটা দূরত্বে পেয়ে যাবেন করুণাময়ী কালী মন্দিরের দ্বারে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...