কৃষ্ণনগরের প্রাচীন জাগ্রত মন্দির আনন্দময়ী কালীমাতা মন্দিরের অজানা কাহিনী

কৃষ্ণনগর মানে ঐতিহ্য আর বনেদিয়ানার মেলবন্ধন। শহর ঘুরলেই চোখে পড়বে বহু গৌরবময় ইতিহাসের কথা। বর্তমান কৃষ্ণনগরের পূর্ব নাম ছিল ‘রেউই’। নদিয়ার বিখ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পূর্বতন পুরুষ ছিলেন রাজা রাঘবের পুত্র মহারাজ রুদ্র।

রাজা রুদ্র ছিলেন পরম কৃষ্ণভক্ত। ভক্তি পরবসত তিনি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নামানুসারে রেউই-এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন আজকের কৃষ্ণনগর।

অষ্টদশ শতেকের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে নদিয়া জেলার ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়। জ্ঞান, বিদ্যাচর্চা, শিল্প কলাই শুধু নয়, সেই সময় এই জেলা গড়ে উঠেছিল বহু মন্দিরের বিশিষ্ট্য স্থানও।

কৃষ্ণনগরের প্রাচীন জাগ্রত মন্দিরগুলির মধ্যে আনন্দময়ী কালীমাতা মন্দিরটি খুবই বিখ্যাত। এই দেবীর নামানুসারে মন্দির সংলগ্ন এলাকার নাম আনন্দময়ীতলা।

এই মন্দিরটি ১৮০৪ সালে স্থাপিত হয়েছিল। গিরিশচন্দ্র রাজা হওয়ার ঠিক ২ বছর পর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

মন্দিরটির শিল্পশৈলী দেখলেই অনুমান করা যায় তার প্রাচীনত্ব। এই মন্দিরের ছাদ নির্মিত করা হয়েছে কাঠের কড়ি বরগা দিয়ে। অন্যদিকে এই মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনেই পাঁচ খিলানযুক্ত বারান্দা রয়েছে। সমতল ছাদ দালানের উপর চারচালা শিখরযুক্ত মন্দিরে দেখা যায় সামান্য পঙ্খের অলংকরণ। দক্ষিণমুখী আনন্দময়ী মন্দিরটি সাধারণ দোতলা বাড়ির থেকে সামান্য উঁচু এবং মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে তিনটি ধাতুনির্মিত ফলক।

এরপর মূল ফটক দিয়ে মন্দির গর্ভে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে যে ডানপাশে রয়েছে মা অন্নপূর্ণা ও গৌরাঙ্গদেবের মন্দির এবং বাঁপাশে দক্ষিণ-পশ্চিমে দোতলায় রয়েছে আনন্দময় শিব মন্দির। ঠিক এর নিচের তলায় সিংহাসনে রয়েছেন গোপাল বিগ্রহ।

এই মন্দিরে এলে মন জুড়বেই। সাথে আনন্দময়ী কালীমূর্তি দর্শন করলেই আপনার চোখ জুড়ে যাবে। দেবী আনন্দময়ীকে দেখা যাবে মহাদেবের বুকের উপরে পদ্মাসনে বসে থাকতে । এই বিগ্রহটি কষ্টিপাথর দ্বারা নির্মিত। উচ্চতায় সাড়ে ৩ ফুটের কাছাকাছি ও দেবী চতুর্ভুজা।  

জানা গিয়েছে যে পূর্বে মা আননদময়ীর গায়ে বস্ত্র ছিল না।  তবে, পরবর্তীকালে অর্থাৎ বর্তমানে ভক্তদের অনুরোধে তাঁদের দেওয়া কাপড় মাকে পরানো হয়।

এই মন্দির সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত খোলা থাকে। আবার বিকেল ৩.৩০-৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।  

মন্দির যাওয়া খুবই সহজ। কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে রিকশায় আনন্দময়ী রোড ধরে মিনিট-কুড়ি গেলেই রাস্তার পাশে চোখ পড়লেই দেখা যাবে আনন্দময়ী কালীমাতার মন্দির।

তাহলে আর দেরি করছেন কেন? অবশ্যই আস্তিক মননে একবার দর্শন করেই আসুন এই মন্দির।         

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...