গ্রামের এই সরল মহিলা কাঁথা সেলাই করতে করতেই রহস্যের সমাধান করেছিলেন

গ্রামের এক সরলমতি মহিলা। ‌ ছোটবেলায় শহরে থাকলেও বড় হয়ে গ্রামে এসেছিলেন। গ্রামের পৈতৃক বাড়িতেই থাকতেন তিনি। সংসারের কাজ সামলে যেটুকু ফুরসত পেতেন তাতে নিজের বুদ্ধিকে শানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেন। সেই বুদ্ধির জোরেই নকশীকাঁথায় ফুল তুলতে তুলতে সমাধান করে ফেলতেন রহস্যের। তিনি বিন্দিপিসি। সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় রচিত গোয়েন্দা চরিত্র। ১৯৬০ সালে দেব সাহিত্য কুটির থেকে প্রকাশিত ‘অপরূপা’ নামের একটি পত্রিকার বার্ষিকীতে প্রকাশিত হয়েছিল বিন্দিপিসির গল্প। কিশোর-কিশোরীদের জন্য রচিত এই গল্পগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। এমনকি বিন্দিপিসি চরিত্রটিও সেই সময় অন্যরকম নারী হিসেবে উদাহরণ স্থাপন করেছিল।

সৌখিন কাঁথায় সেলাইয়ের ফুল তুলতে তুলতে রহস্য সমাধান করে ফেলেছিলেন বিন্দিপিসি। সহজ, সরল ছোটখাটো চেহারার এই মহিলা সৌরেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কলমে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন।

নিজের গ্রামের বাড়িতে দুজন সর্বক্ষণের সাহায্যকারী আর দুজন ঝিকে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন তিনি। তাঁরা নানা কাজ করে দিলেও বিন্দিপিসি কিন্তু নিজের সময় নষ্ট করতেন না। অবিবাহিতা এই পিসির কয়েকজন ভাইপো-ভাইঝি ছিল বড় আপন। বিন্দিপিসির ভাইয়েরা থাকতেন শহরে। ‌ বিন্দিপিসি যখন শহর থেকে গ্রামে চলে আসে তখন তার বয়স ৫০ ও পেরোয়নি। বিন্দিপিসির চরিত্রটি ঘরোয়া আটপৌরে তবে বুদ্ধিমতী। সর্বদা আগ্রহী থাকতেন গ্রামের মানুষের নানা খবর শোনার জন্য। কেউ যদি তাঁকে গ্রামের কোন খবর না দিতে পারতেন রেগে যেতেন পিসি। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের পিসি সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিব্যি একা থাকতেন। কাঁথা সেলাই তাঁর শখ হলেও পাড়ার সকলের খবর নেওয়া ছিল তাঁর প্রধান এবং একমাত্র কাজ। বিন্দি পিসির প্রিয় সাগরেদ সুহাস যদি কোনদিন এসে বলত "আজ তো আর তেমন কিছু শুনতে পেলুম না পিসিমা।" অমনি বিন্দিপিসির মন-মেজাজ সব বিগড়ে যেত। সেদিনের মতো খাওয়া দাওয়া ঘুচে যেত।

এমনই একদিন পাড়ার খবর শুনতে শুনতেই একটা রহস্যের সমাধান করে ফেলেছিলেন। ভাইপো-ভাইঝিদের সঙ্গে নিয়ে এভাবেই গ্রামের সরলমতি এক মহিলা গোয়েন্দা বিন্দিপিসি হয়ে উঠেছিলেন।  বিন্দিপিসি চরিত্রের রচয়িতা সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় যথেষ্ট গুণী মানুষ ছিলেন। পেশায় আইনজীবী এই মানুষটি একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক এবং অনুবাদক ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার ইছাপুরে জন্ম সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের। বাবা হরিদাস মুখোপাধ্যায়। দাদু কৃষ্ণ সখা মুখোপাধ্যায় হাইকোর্টের উকিল এবং জনপ্রিয় নাট্যকার নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মাতামহ ছিলেন। ছোট থেকেই সংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা। নিজেও বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করেছেন। বিন্দিপিসির গল্প গুলো মূলত শুরুতে বিভিন্ন পত্রিকাতেই প্রকাশিত হত। পরে সেগুলি বই আকারে প্রকাশিত হয়।

যে সময়ে বিন্দিপিসির কাহিনীগুলি রচিত হয়েছিল তখন মহিলা গোয়েন্দাদের কথা কেউ চিন্তাই করতে পারত না। একজন পুরুষ লেখক-এর কলমে এমন ডাকাবুকো নারী চরিত্র গড়ে ওঠা নিঃসন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক। তাই বিন্দি পিসির উদাহরণ ছকভাঙ্গা নারী চরিত্রদের মধ্যে অন্যতম।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...