সুমন কল্যাণপুর, হারিয়ে যাওয়া এক তারার নাম

না তুম হামে জানো

না হাম তুমে জানে

মগর কুছ লাগতা, হ্যায় এয়সা

মেরা হমদম মিল গ্যায়া...

 

এই গানে ডুব দিলে দিকশূন্যে পাড়ি দেয় মন। নিঝুম হয়ে দু’দন্ড বসে। কিন্তু গানের মৌতাতটুকু ফুরিয়ে গেলেই গানের মতোই অধরা গাইয়ে। কেউ খোঁজ রাখেনি কোকিলকণ্ঠী সেই গায়িকার।

অথচ সাফল্যের খতিয়ান তাঁর খুব কম ছিল না। 

‘বাত এক রাত কি’, ‘দিল এক মন্দির’, ‘নুরজাহান’, ‘দিল হি তো হ্যায়’, ‘জাহান আরা’, ‘পাকিজা- এমন নাম শুধু বেড়েই চলবে, তবু তিনি আজ অন্তরালে। বলিউডের আলো থেকে বহু দূরে নিভৃতে তাঁর বাস। তবু শ্রোতারা ভুলতে পারে না তাঁর নাম। সুমন কল্যাণপুর। এক হারিয়ে যাওয়া তারার নাম।

ad

সাংবাদিক ইকবাল মাসুদ একবার লিখেছিলেন, ‘ হিন্দি ছবির গানের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি সুমন কল্যাণপুরের ভাগ্য’।

হঠাৎ শুনলে মনে হবে লতা গাইছেন। আসলে সুমন। অনেক সময় সুমনের গান হিট করেছে। কিন্তু সাধারণ শ্রোতারা ভেবেছেন এ গান বোধহয় লতার’।

লতার সঙ্গে তাঁর গায়কীর কিছু মিল ছিলই, কিন্তু তা একেবারেই কাকতালীয় সাদৃশ্য। তবে সেই সাদৃশ্যই কাল হয়েছিল তাঁর।

ছোটবেলা থেকে কোনওদিনই গায়িকা হতে তিনি চাননি। চেয়েছিলেন চিত্রশিল্পী হবেন। বড় হয়ে ওঠাও সেভাবেই। বোম্বাইয়ের সেন্ট কোলাম্বা স্কুলের পরে সুমন ভর্তি হয়েছিলেন স্যার জেজে স্কুল অব আর্টস-এ।

ac

কিন্তু নিয়তি তাঁর জন্য অন্য কিছু স্থির করে রেখেছিল। গান গাইতে ভালোবাসতেন। স্কুল, কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতেন। সেভাবেই একবার নজরে পড়ে যান মারাঠি সঙ্গীত পরিচালক কেশবরাও ভোলের। তিনিই তাঁর প্রথম গানের গুরু। উস্তাদ খান, আব্দুল রহমান খান, নবরং খানের কাছেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

প্রথম প্লেব্যাক মারাঠি ছবি দিয়ে। তালাত মাহামুদ মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর কণ্ঠে।  হিন্দি ছবিতে সুযোগ আসতেও খুব সময় লাগেনি।শচীনদেব বর্মন,  হেমন্ত মুখোপাধ্যায়,  মদনমোহন প্রায় সব বিখ্যাত সুরকারদের সঙ্গে তিনি গান গেয়েছেন। রফি ও সুমন কল্যাণপুর প্রায় ১৪০ টি ডুয়েট করেন।

ab

ছায়াছবির বাইরেও গান করেছেন সুমন। হিন্দি, মারাঠির বাইরে বাংলা, অসমিয়া, গুজরাতি, কন্নড়, ভোজপুরি, ওড়িয়া, মৈথিলীর মতো প্রায় সব আঞ্চলিক ভাষাতেই গান গেয়েছেন।  তবু কোথাও যেন ‘লতার সঙ্গে মিল’ কাঁটা হয়ে পথ আটকেছে মসৃণ কেরিয়ারে। কিন্তু তিনি হেরে যাননি। লড়াই করেছেন। সুরের সাধনায় আরও বেশি করে ডুবিয়ে দিয়েছেন নিজেকে।

ae

১৯৩৭ সালের ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের ঢাকা শহরে তাঁর জন্ম হয়। ২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি  দ্রৌপদী মুর্মু তাঁকে সম্মানিত করেন পদ্ম সম্মানে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...