অভিনয়ের সুবাদে পেয়েছিলেন উত্তম কুমারের সান্নিধ্য

প্রত্যেক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের মতো গ্ৰাজুয়েশন শেষ করেই চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল বিপ্লব দাশ গুপ্তকে। শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্কুলে। কিন্তু হঠাৎ একদিন একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ভয়েস ওভারের কাজ করার সুযোগ আসে। সেখান থেকেই বদলে যায় জীবন। প্রথমে ভয়েস আর্টিস্ট তারপর বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ ও পরে অভিনয় জগতে।  অভিনয়ের সুবাদে উত্তম কুমারের সান্নিধ্য পেয়েছেন তিনি। জীবনের এমন বহু ঘটনার কথা জিয়ো বাংলার আড্ডা উইথ অপ্সরা অনুষ্ঠানে জানালেন অভিনেতা বিপ্লব দাশ গুপ্ত।

প্র: আপনি প্রথমে ছিলে শিক্ষক তারপর বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করেছেন পরে আবার অভিনয়েও করেছেন বহু ছবিতে। জীবনের এই ট্রানজিশনটা কেমন ছিল?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: আমি কখনও এই রচনাটা লিখিনি, যে আমার জীবনের লক্ষ্য কী? আমি ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করেছি তাই গ্ৰাজুয়েশনের পর চাকরি খুঁজছিলাম। তখনই নব নালন্দা স্কুলে ইংরেজি পড়ানোর চাকরি পেয়েছিলাম আমি। সেই সময় নব নালন্দা দূরদর্শনে একটি অনুষ্ঠান করেছিল যার নাম ছিল 'ক্ষীরের পুতুল'। সেখানে আমি ভয়েস ওভার করেছিলাম। আমার ভয়েস শুনে প্রোডিউসার আমাকে বলেছিলেন তাদের প্রেজেন্টেশনে জয়েন করার জন্য। তারপর আমি স্কুল ছেড়ে বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। পাশাপাশি থিয়েটারও করছিলাম। একবার অঞ্জন, মানে অঞ্জন দত্তের সঙ্গে একটা থিয়েটারের শো করছিলাম। তখন ও আমাকে একটি ভিডিয়ো সিরিজে অভিনয় করার কথা বলেছিল। তখনই আমি প্রথম কোনও ভিডিয়োতে অভিনয় করেছিলাম। তারপরেই একের পর এক ছবিতে কাজের সুযোগ আসে আমার কাছে।

প্র: আপনি ছবিতে অভিনয় করেন, নাটকে অভিনয় করেন, ভয়েস ওভার দেন ও স্ক্রিপ্ট লেখেন। এতগুলো সত্ত্বা কীভাবে মেনটেইন করেন?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: আমার মনে হয় কিছু জিনিস নিয়ে আমি আশির্বাদ পেয়েছি। কিন্তু আমি যে যে কাজগুলো করছি প্রত্যেকটাই কিন্তু কমিউনিকেটিং করার কাজ। তবে আমার জীবনে এমন একজন মেনটর পেয়েছি যার নাম শমীক বন্দোপাধ্যায়। ওঁর পান্ডিত্য অসামান্য। এখন ৮২ বছর বয়সেও কিছু না কিছু শিখি ওঁর থেকে। আমি সাহিত্য, ইতিহাস, নাটক ছাড়াও বহু বিষয়ে সম্পর্কে জেনেছি ওঁর থেকে।

প্র: সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে আপনার ‘অ্যা হলি কন্সপিরেসি’ ছবিটি। যেখানে নাসিরউদ্দিন শাহ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন আপনি। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: একজন অভিনেতা সব সময় চাইবে এমন একজনের সঙ্গে কাজ করতে যার থেকে সে কিছু শিখতে হবে। নাসিরউদ্দিন শাহ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দুজনেই মহারথী। প্রতি মুহূর্তেই তার থেকে কিছু না কিছু শিখছি আমরা। কারণ অভিনয় তো শুধু কারিগরি নয় নান্দনিকও। ছবির শ্যুটিংয়ের সময় নাসিরজীর সঙ্গে ১২ দিন ও সৌমিত্রদার সঙ্গে ১৪ দিন কাজ করেছিলাম আমি। আমি বলেছিলাম আমার যেদিন শ্যুটিং থাকবে না সেদিন আমি নাসির জি আর সৌমিত্রদার অভিনয় দেখব।

প্র: বহু বছর আপনি অভিনয়ে, উত্তম কুমার, তরুণ কুমারের সান্নিধ্যও পেয়েছেন।  তখনের সঙ্গে এখনের কী তফাৎ আছে বলে মনে হয়?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: হ্যাঁ, তফাৎ তো আছেই। কারণ তখনকার দিনে অভিনয় ছিল সকলের ধ্যান জ্ঞান। কিন্তু এখন ডেডিকেশনের খুব অভাব দেখা যাচ্ছে সকলের মধ্যেই। তাই ভালো অভিনেতাও অভাব দেখা যাচ্ছে।

প্র: ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আপনি কী বলবেন?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমা দেখার মাধ্যমগুলো বদলেছে।‌ একসময় সকলে হলে সিনেমা দেখতে যেত এখন মোবাইলে দেখা শুরু করেছে। তাই হলে গিয়ে ছবি দেখার অভ্যাসটা চলে গিয়েছে।

প্র: আপনি কী ফুডি?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: না।

প্র: আপনার প্রিয় ক্যুইজিন কী?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: ডিম দিয়ে তৈরি যে কোনও পদ।

প্র: আপনার প্রিয় ঋতু?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: শীতকাল।

প্র: লং ওয়াক না লং ড্রাইভ?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: আমার লং ড্রাইভে ড্রাইভারকে নিয়ে যেতে ভালো লাগে। কিন্তু নিজের গাড়ি চালাতে ভালো লাগে না।

প্র: ফেভারিট পাস টাইম কী?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: গান শোনা ও ছবি দেখা।

প্র: আপনি টি না কফি পছন্দ করেন?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: টি।

প্র: আপনার প্রিয় ছবি কোনটা?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: যে কোনও একটা ছবিকে এভাবে বেছে নেওয়া সহজ নয়।

প্র: থিয়েটার, সিনেমা, টেলিভিশন ও ওটিটি কোনটা বেশি পছন্দ?
বিপ্লব দাশ গুপ্ত: থিয়েটার।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...