ডাক্তার থেকে গায়ক সিধু

নব্বই দশকে বাঙালির নস্ট্যালজিয়ার অন্য নাম 'ক্যাকটাস'। 'সেই যে হলুদ পাখি'র সুর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল একটা গোটা প্রজন্মকে। সেই গান আজও স্মৃতি জাগায়। মনে পড়ে যায় হারানো ছোটবেলা। ব্যান্ড ক্যাকটাসের অন্যতম মুখ সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ওরফে সিধু। একাধারে গায়ক, গান লিখিয়ে আবার পাশাপাশি তিনি একজন ডাক্তার। তবে আজও বাঙালির কাছে একডাকে ‘ক্যাকটাসের সিধু’। এক সময় নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ডাক্তারি ছেড়ে গান-বাজনাকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এবার জিয়ো বাংলার আড্ডা উইথ অপ্সরা অনুষ্ঠানে সেই সময়ে তার জার্নির গল্প শেয়ার করলেন গায়ক সিধু।

প্র: আপনি ডাক্তারি পড়ছিলেন মেডিকেল কলেজে। সেখানে থেকে গানের জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এই জার্নিটা কেমন ছিল?
সিদ্ধার্থ রায়: আমি যখন ডাক্তারি পড়ছিলাম তখন আমার থার্ড ইয়ার চলাকালীন ১৯৯২ সালে 'ক্যাকটাস' শুরু হয়েছিল। তারপর আমি পড়াশোনা শেষ করি। আমার ইন্টার্নশিপ শেষ করি একটা প্রাইভেট নার্সিংহোম জয়েন করি। সেখানে বছর দুয়েক কাজ করার পর এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসেছিলাম। তারপর ডিএনবি মেডিসিন নিয়ে একটা হাসপাতালে কাজ করা শুরু করেছিলাম। যেহেতু আমার বাবা ডাক্তার, ঠাকুরদা ডাক্তার তাই ছোটবেলা থেকেই আমি জানতাম আমাকেও ডাক্তার হতেই হবে। কিন্তু আমার বাড়িতে মিউজিকের চর্চা ছিল। তাই আমি বাড়িতে থেকেই গান-বাজনা শিখেছিলাম‌। ১৯৯৯ সালে আমাদের প্রথম অ্যালবাম রিলিজ হয়েছিল। অ্যালবামের গানগুলো হিট হয়েছিল। তারপরেই 'নীল নির্জন'-এ ছবিতে গান গাওয়ার অফার এসেছিল। এই ছবি গানগুলোও খুব হিট করেছিল। তখন 'ক্যাকটাস' কলকাতার বাইরেও অনেক শো করবার অফার পাচ্ছিল। সেই কারণেই ২০০৩ সালে আমি হাসপাতাল ছেড়ে গান-বাজনাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম।

প্র: 'সেই যে হলুদ পাখি' গানটা কী আপনার ছোটবেলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিল?
সিদ্ধার্থ রায়: হ্যাঁ একদমই। কলেজ জীবন শুরু হওয়ার পর আমি একা একা বাসে ট্রামে যাতায়াত করবার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাতে যেমন মনে আনন্দ হয়েছিল তেমনি কোথাও যেন আমার শৈশবের সারল্যটা হারিয়ে গিয়েছিল। সেই দূঃখটা আমার মধ্যে ছিল। এই হারিয়ে যাওয়া সারল্যটাই বোধহয় 'হলুদ পাখি' গান হিসেবে উঠে এসেছে।

প্র: আপনাকে বাংলা রকের ‘পায়োনিয়র’ বলা হয়। এই বাংলা এবং রক নিয়ে যে একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছিল। যারা আপনার গান শুনছিল তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল এই নিয়ে?
সিদ্ধার্থ রায়: সেই সময় আমরা অনেক কলেজে ফেস্টের মিউজিক্যালগুলোতে অংশগ্রহণ করতাম। আমি লক্ষ্য করেছিলাম ইংরেজি রকের যে কভার সংগুলো সেখানে অন্য ব্যান্ডগুলো গাইত। গানের লিরিক্স নব্বই শতাংশ দর্শকরাই বুঝতে পারতেন না। তাই আমি ভাবলাম নিজের মাতৃ ভাষায় গান করবার কথা। প্রথমে এই জন্য অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল আমাদের। কিন্তু ২০০০ সালের পর সকলেই আমাদের অ্যাকসেপ্ট করা শুরু করেছিল।

প্র: খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। ছোটবেলার সময়টা কেটেছে মায়ের সঙ্গে। সেই সময়টা কেমন ছিল?সিদ্ধার্থ রায়: আমার বাবা আর্মির ডাক্তার ছিলেন। খুব ডিসিপ্লিনড একজন মানুষ ছিলেন। ভায়োলিন বাজাতেন। বাবার থেকে হয়তো আইকিউ ও মিউজিকটা পেয়েছি। কিন্তু ডিসিপ্লিনটা আর জীবনেও পাবো না। তাই বাবা চলে যাওয়ার পর মা কখনও স্নেহময়ী আবার কখনও তিনি একদম কড়া। ফাইনাল এম.বি.বি.এস পরীক্ষার মাঝে আমাদের একটা শো ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শো শুরু হওয়ার আগে মা চলে এসেছিলেন। তখন আমার মা ওতো ছেলে-মেয়ের লাইন দেখে কেঁদে ফেলেছিল। বলেছিল, তোর গান শোনার জন্য এত ছেলে-মেয়ে লাইন দেয়।

প্র: এমন‌ কোন গান আছে যেটা আপনি নিজের মনে গাইতে থাকেন?
সিদ্ধার্থ রায়: কোনও ঠিক নেই। কোন দিন কোন গান গুনগুন করি নিজেরই মাথায় থাকে না।

প্র: সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় থেকে আজ আপনি গায়ক ‘সিধুদা’ হয়েছেন। কেমন লাগে পুরনো দিনের কথা মনে পড়লে?
সিদ্ধার্থ রায়: আনন্দ, তৃপ্তি আর কোনও ভাবে দুঃখিত নই যে একটা পেশা ছেড়ে অন্য পেশাকে বেছে নিয়েছি বলে। সেখানে হয়তো অর্থনৈতিক আনুকুল্য অনেক বেশি থাকত। কিন্তু আমি খুশি যে অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।

এবার র‌্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে গায়ক সিদ্ধার্থ রায় ওরফে সিধুদা।

প্র: চা না কফি?
সিদ্ধার্থ রায়: চা।

প্র: রেনি পার্সন না সানি পার্সন?
সিদ্ধার্থ রায়: রেনি পার্সন।

প্র: ভোরবেলা উঠতে ভালোবাসেন নাকি লেট নাইট পছন্দ?
সিদ্ধার্থ রায়: আমি ভোরবেলা উঠতে পছন্দ করি।

প্র: লং ড্রাইভ না লং ওয়াক?
সিদ্ধার্থ রায়: লং ড্রাইভ।

প্র: মুভিজ না টিভি সিরিজ?
সিদ্ধার্থ রায়: মুভিজ।

প্র: সিঙ্গার সিধুদা, কম্পোজার সিধুদা, লিরিসিস্ট সিধুদা নাকি ডাক্তার সিধুদা?
সিদ্ধার্থ রায়: কম্পোজার সিধুদা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...