‘জটায়ু’ না ‘একেন’ অনির্বাণ?

কখনও গোয়েন্দা 'একেন'‌ আবার কখনও জটায়ু। এই দুই চরিত্রে অভিনয় করে নিজের ছাপ ফেলেছেন অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী। অভিনয়ে আসার আগে কাটিয়েছেন ঘড়ির কাঁটার চাকরি জীবন। কিন্তু অভিনয়ের খিদেটাও দখল করে রেখেছিল মন-মগজ। তাই চাকরির পাশাপাশি মঞ্চ-থিয়েটার। তারপর ছোটপর্দা-বড়পর্দা-মিনিপর্দা। এখন প্যাশন-প্রফেশন মিলেমিশে এক হয়ে তাঁর পরিচয় সফল অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী। দর্শকদের ‘একেনবাবু’। তবে সাফল্য এমনি ধরা দেয়নি। তার আগে আছে লম্বা স্ট্রাগল পর্ব। অভিনেতা জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের গল্প নিয়ে ‘আড্ডা উইথ অপ্সরা’য় আজকের অতিথি অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী।    

প্র: আপনার ছোটবেলা কেমন ছিল?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমার ছোটবেলাটা কলকাতার বাইরে কেটেছে। আমাদের বাড়ি ছিল বজবজে। কিন্তু আমার স্কুলিং, কলেজ সব কিছুই হয়েছে কলকাতায়। আমরা এখনকার দিনের বাচ্চাদের মতো শুধুমাত্র পড়াশোনা আর টিউশন নিয়ে ব্যস্ত থাকিনি। আমি পড়াশোনা করতাম রেজাল্টও ভাল হত। কিন্তু তার সঙ্গে আবৃত্তি করতাম, আঁকা শিখতাম, নাটক করতাম। তবে এই সব কিছুই মনের আনন্দে করতাম। পরে সেটা নিয়ে কিছু করব এটা ভেবে করিনি। আমি ছোট বয়স থেকেই সিরিয়াস থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। যদিও একটা সময় পর পড়াশোনার জন্য আমাকে নাটক করা বন্ধ করতে হয়েছিল। তারপর যখন চাকরি করতে শুরু করলাম যখন সেই সময় আবার থিয়েটারে অভিনয় করা শুরু করেছিলাম।

 

প্র: চাকরি ছেড়ে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার কথা কখন ভেবেছিলেন‍?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমার অনেকবারই মনে হয়েছে এই ডিসিশনটা নেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না? যেহেতু আমার এই জগৎ সম্পর্কে বেশি কিছু জানা ছিল না। আমার পরিবারের সবাইকে আমি চাকরি করতে দেখেছি। কিন্তু গতানুগতিক একটা লাইফ স্টাইলে থেকে আমি বোর হয়ে গিয়েছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে অভিনয়কেই বেছে নিয়েছিলাম। প্রথম দিকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি তাও চালিয়ে গিয়েছি। আমার পরিবারও আমাকে কিছুতে বাধা দেয়নি।

 

প্র: আপনি কি ফিল্ম স্টাডিজ বা থিয়েটার নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: না। আমি একেবারেই একজন অ্যানট্রেইন্ড অ্যাক্টর। কিন্তু আমি যখন অভিনয় করতে শুরু করেছিলাম তখন আমি এইটুকু বুঝতাম যে এটা করতে আমার ভাল লাগছে। আমি থিয়েটারে অভিনয় করতে করতেই শিখেছি। তবে আমি একটা গ্ৰুপে থেকে অভিনয় করিনি। বিভিন্ন থিয়েটার গ্ৰুপে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অভিনয় করেছি।

 

প্র: জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: এটা শুরু হয়েছিল 'একেন বাবু' থেকে। এই ওয়েব সিরিজের প্রথম সিজন মুক্তি পাওয়ার আগে একেন বাবুর চরিত্রটার প্রচুর প্রোমশন করা হয়েছিল। সারা শহরে আমার গোঁফ লাগানো ছবির হোডিং লাগানো হয়েছিল। আমার ঐ ছবির  সঙ্গে মিল ছিল জটায়ু চরিত্রের। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার ছবি দেখে ভেবেছিলেন  সন্তোষ দত্তের ছবি। বেণুদাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন উনি। বেণুদা বলেছিলেন, ‘এটা অনির্বাণের ছবি’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি অভিনয় করা সত্ত্বেও আমাকে তিনি চিনতে পারেননি। তারপর বিভিন্ন আর্টিকেলে আমার সঙ্গে জটায়ু চরিত্রের মিল রয়েছে এমন লেখা বেরয়। শেষ পর্যন্ত আমাকে সৃজিত ওঁর ফেলুদা সিরিজে জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করার কথা বলেন।

 

প্র: 'একেন বাবু'র চরিত্র কখনও নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমি নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে চাই সব চরিত্রগুলোকেই। কিন্তু নিশ্চয়ই পরিচালকের সঙ্গে এই বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে হয়। জটায়ু ক্ষেত্রে সবার একটা আইডিয়া রয়েছে। কিন্তু একেন্দ্র সেনের গল্প আমি কখনই পড়িনি। তাই শুধুমাত্র চিত্রনাট্য দেখেই আমি চরিত্রটা প্লে করবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একেন্দ্র সেনের সঙ্গে আমার কোনও মিল ছিল না। তাই প্রথম প্রথম অনেকেই বলেছিলেন যে একেন্দ্র সেনের চরিত্রটা কেন আমাকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লেখক নিজেও বলেছেন যে এখন 'একেন বাবু'র কথা ভাবলে আমার অনির্বাণের কথাই মনে পড়ে।

 

প্র: 'একেন বাবু' আর 'জটায়ু'র চরিত্রে অভিনয় করে কী আপনি বোর হয় গিয়েছেন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: এক্কেন বাবু' আর 'জটায়ু'র খানিকটা মিল থাকলেও তারা অনেকটাই আলাদা। ২০১৮ আর ২০১৯ সালের পর থেকেই আমি অনেকগুলো অন্য ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। 'সত্যমেব জয়তে' বলে একটা প্রজেক্টে আমি একটা পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেটা কিন্তু খুব গ্ৰে শেডের একটা চরিত্র ছিল। এছাড়াও 'কাকাবাবুর প্রতাবর্তন', 'মুখোশ'-এর মতো ছবিতে আমি অন্য ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি।

 

এবার র‌্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী।

 

প্র: ফেভারিট পাস টাইম কী?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: যদি বেশিক্ষণ সময় থাকে তাহলে ট্রাভেল করতে। আর সেটা না হয়ে তাহলে পড়তে।

 

প্র: টি পার্সন না কফি পার্সন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: কফি।

 

প্র: আপনি কী ফুডি?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমি খেতে পছন্দ করি। কিন্তু 'একেন বাবু'র মতো প্রচুর পরিমাণে খাই না।

 

প্র: রেনি পার্সন না সানি পার্সন?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমি দুটোই পছন্দ করি যদি আমাদের বাড়ি থেকে বেরতে না হয়। আমার চাই সারা বছর শীতকাল থাকুক।

 

প্র: লং ওয়াক না লং ড্রাইভ?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: লং ওয়াক।

 

প্র: সোশ্যাল মিডিয়াতে কতটা সময় স্পেন্ড করা হয়?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: আমি কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে গুলো পোস্ট করি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর নিউজ দেখি।

 

প্র: মুভিজ না ওয়েব সিরিজ?

অনির্বাণ চক্রবর্তী: দুটোই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...