মাটি আর জল আমার খুব প্রিয়

বহু বছর ধরে ছবি আঁকছি। শুরুটা ছোটবেলায়। আশির দশকে। উত্তর-কলাকাতার মানুষ। জন্ম বাগবাজারে। বছর-তিন চার বয়স থেকেই রং-তুলির প্রতি টান। ছোটবেলা থেকে সঙ্গেই ছিল টানটা।

এক সময় বাগবাজার ছেড়ে আমরা চলে এলাম পায়রাডাঙায়। সেখানেই আমার আঁকার ক্লাসে যাওয়ার শুরু। অভয় বন্দোপাধ্যায়। তাঁর কাছেই ছবি আঁকার হাতে ঘড়ি।

আমার যখন ৬ বছর তখন আবার চলে এলাম কলকাতায়। এখন যে জায়গার নাম চিনার পার্ক, সেখানেই কাছাকাছি থাকতাম। বাসস্টপের নাম দশদ্রোন। আমার পৈত্রিক বসত। নতুন করে আঁকার শুরু।

নেচার নিয়ে ছবি আঁকতে বেশি পছন্দ করি। তখন এই অঞ্চলটা বেশ ফাঁকা ছিল। আজ তো মেগাসিটি। নিউটাউন। পুরোটাই ফাঁকা ছিল। যত দূর চোখ যায় সবুজ। খোলা প্রকৃতি। সবুজ গাছপালা-মাটি খুব টানত। আমার ছবির সাবজেক্ট ছিল জল, আল, ছোট-ছোট পাখি, মাঠ দিয়ে হেঁটে যাওয়া গবাদি- এসব ছোট ছোট বিষয়গুলোই আঁকটাম। বিশেষ করে মাটি আর জল আমার খুব প্রিয়। বরাবর ল্যান্ডস্কেপটাই করতাম। ফিগারেটিভ কাজ কম্পোজিশন এগুলোও করেছি।

আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েছি অনেক পরে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার ইচ্ছে ছিল আমি চাকরি করি। চাকরি আমি করিনি। মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। তাই বাবার ভাবনা ছিল, ‘চাকরি না করলে খাব কী’। আমায় ছবি আঁকতে গেলে বিরুদ্ধে যেতে হত। তাই গেলাম। ছবি আঁকাটাই আমার জীবন হোক এমনটাই চেয়েছিলাম।

টিউশন করে আমার কলেজের রং, কাগজ, ক্যানভাস নিজের খরচ চালাতাম। বাবার যেহেতু আঁকার কেরিয়ারে ইচ্ছে ছিল না, তাই আমায় এভাবেই নিজের পথ নিজে তৈরি করে নিতে হয়েছিল।

শিল্পী সুনীল পালের কাছে আমার ওয়াটার কালার, ল্যান্ডস্কেপ কম্পোজিশন শেখা। ওঁকে আমি ‘জ্যেঠু’ বলতাম। কিছু বছর করার পর উনি বললেন গুরু বদলে নিতে। নব্বই পেরিয়ে গিয়েছেন তখন। দৃষ্টি ছাপসা। উনিই পাঠালেন গণেশ হালুই-এর কাছে।লক্ষ্য-‘ওয়াটার কালার’। এইভাবে প্র্যাকটিস আর কাজ চলতে চলতে কলেজ অফ ভিস্যুয়াল আর্টসে ভর্তি হই। চার বছরের ব্যাচেলার অফ ফাইন আর্টস। ফার্স্টক্লাস পেয়েছিলাম। কলেজের ক্লাসে খুব মন বসত না। আউটডোর, আর্ট ফ্লোর, ক্যাম্প-এগুলোই বেশি টানত। কলেজে থাকাকালীন দু’বার বেস্ট পেইন্টিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলাম।

স্টাডি টাইমটা খুব জরুরি অধ্যায় আমার জীবনের। গ্রামে, কলকাতা- হাওড়া, শিয়ালদায় ঘুরে ঘুরে স্কেচ আর সিটিস্কেপ করটাম। গঙ্গা নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি। প্রচুর ছবি ঘাঁটতাম।

পরপর চারবার বিড়লা একাদেমি অ্যাওয়ার্ড, অবন্তিকা কনটেস্ট পুরস্কার পেয়েছিলাম। ‘শ্যামল দত্ত অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পাই। তারপর থেকেই আমার একটা পরিচিতি শুরু হয়। একাডেমি অব ফাইন আর্টস, বিড়লা একাডেমি, সংস্কৃতি, আকারপ্রকার, গ্যাঞ্জেস, সিমা সব জায়গাতেই মোটামুটি এক্সজিবিশন করেছি।

এখনও পর্যন্ত আমি সারা পৃথিবী জুড়ে ৪৬ টা শো করেছি। ইতালি, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, হংকং- বিদেশের প্রচুর জায়গায় কাজ আছে।

শুভাপ্রসন্ন মহাশয়ের আর্টস-একরে বেঙ্গল মিউজিয়ামে ওয়াটারকালারের আলাদা কক্ষ করা হয়েছে। সেখানে আমার দুটো  ছবি জায়গা পেয়েছে। এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওনা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...