বাঙালিদের একটি বড় অংশ মা কালির উপাসক। আমাদের প্রিয় শহর কলকাতার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বহু কালি মন্দির। কলকাতার মধ্যে রয়েছে এমন একটি কালী মন্দির যা অন্যতম, ফিরিঙ্গি কালি মন্দির। প্রায় ৫০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এই মন্দিরটি। আজ জেনে নেওয়া যাক বৌবাজার ফিরিঙ্গি কালি মন্দিরের সমস্ত অজানা ইতিহাস।
মন্দিরের কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন যে এই ফিরিঙ্গি কালী মন্দির যত পুরোনো তত তার ইতিহাস বিশাল। এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিৎ হয় ৯০৫ বঙ্গাব্দে। তখনও জন্ম হয়নি কলকাতা শহরে। জায়গাটি ছিল অরণ্য সঙ্কুল।
উনিশ শতকে পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত কবিয়াল অ্যান্টনি হেন্সম্যান এসেছিলেন তাঁর কাকার সাথে। উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা করার। এখানে এসেই তিনি চন্দননগরের ফরাসডাঙ্গায় থাকা শুরু করেন। সেখানে থাকাকালীন এক বিধবার নারীর সাথে সম্পর্ক হয় তাঁর। তাঁর নাম হচ্ছে সৌদামিনী। ফলে, হিন্দু ঠাকুর দেবতার সাথে তাঁর একটু আগ্রহ জন্মায়। মন্দিরের পেছনে ছিল অ্যান্টনি সাহেবের মামার বাড়ি। মাঝে মাঝেই আসতেন এখানে তিনি।
এই মন্দিরের সবথেকে প্রাচীন হল শিব। ফলে, শুধু তাঁর মাথায় একটি গম্বুজ আছে। এই মন্দিরে শিব আগে স্থাপিত, পরে মাকে স্থাপিত করা হয়েছিল। ফলে, এখানে এসে তিনি আরাধনা করতেন এবং দেখতেন বহু দেব-দেবী রয়েছেন। কিন্তু কালী মায়ের কোনও মূর্তি নেই।
এরপর সৌদামিনীর সাহায্যে এই মন্দিরেই মায়ের মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। তারপরেই এই মন্দিরের আসেন ফিরিঙ্গি কালী মা।
এই মন্দিরে কখনই কোনও ধর্ম, জাত কিছুই নেই। সবরকম মানুষজন এখানে আসতে পারবে এবং এসেছেন। এই মন্দিরটি সমস্ত সেবায়েতরা পালা করে চালায়।
তবে, প্রথম থেকেই মা কালী এরকম ছিলেন না। তিনি দক্ষিণমুখী। সিদ্ধেশ্বরী রুপ মায়ের। অর্থাৎ খুবই শান্ত রুপ তাঁর। যেমন ছিলেন তেমনই আছেন। শুধু আকারে বড় হয়েছেন। সেই সময় মাটির মূর্তি ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে মূর্তি নষ্ট হয়ে যেতে কনক্রিটের মূর্তি বানানো হয়। সিদ্ধেশ্বরী কালীর পাশে রয়েছে পাশে অষ্টধাতুর দুর্গা, জগদ্ধাত্রীর মূর্তি ও নারায়ণ শিলা।
এই মন্দিরে আগে পশুবলি হত কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখনও এখানে পূজা হয় সম্পূর্ণ বৈদিক মতে। তবে, মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী আত্মবলির প্রথা চালু হয়েছে। ফলে, প্রতি কালীপুজোতেই এই মন্দিরে আত্মবলি প্রথা চালু হয়ে মায়ের পুজো হয়ে আসছে।
বহু ভক্ত আসেন এই মন্দিরে ।
এই মন্দিরটি সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া সকাল ৭:৩০ সময় পুজো হয়। তবে, শনিবার এবং মঙ্গলবার একটু দেরী হয়।
কিভাবে আসবেন এই মন্দিরটিতে? ফিরিঙ্গি মায়ের কাছে আসতে হলে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে নেমেই এক মিনিটের হাঁটা পথ। আসলেই পৌঁছে যাবেন মায়ের কাছে।
 In English
 In English 
													

