‘ফুডকা’র আগে-পরে কেমন ছিল ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীর জার্নি?

আট থেকে আশি তাঁকে ডাকে ‘ফুডকা’ নামে কিন্তু নিজের কোন পরিচয় তাঁর সবচেয়ে বেশি প্রিয়?  কীভাবে শুরু হল ‘ফুডকা’র জার্নি? নিজের পডকাস্ট শো-এ তিনি বেশ ঠোঁটকাটা। নরম স্বরে অবলীলায় অতিথিদের করেন কঠিন প্রশ্ন, এটাও কি ওয়েব দুনিয়ার বিপ্লব? টলিকথার আসরে মনখোলা আড্ডায় আজ অতিথি ‘ফুডকা’ ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী।

প্রঃ ফুডকা যদি ‘লাইফ চেঞ্জিং ডিসিশন’ হয়, তাহলে তার আগের লাইফটা কেমন ছিল?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ আগের লাইফটা ছিল ‘ফুডকা’ ছাড়া। কম্প্যারেটিভলি বোরিং, কিন্তু ভালো। তখন আমি  ব্যাবসা করি, ফুড ব্লগে লিখি ওয়ার্ড প্রেস, যেটা এখনও চলছে। মীরকে আমি তখন বন্ধুর থেকে বেশি সেলিব্রিটি হিসেবে চিনতাম। আমার ছেলে ছোট ছিল, ঘুরত আমার সঙ্গে, ভালোই ছিল।

প্রঃ ফুডকার জার্নি কীভাবে শুরু হল?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ দেখ ফুডকাটা মীর আফসার আলির কনসেপ্ট। তো মীরের সাথে আমার আলাপ হয় ২০১৬ সালের একটি ‘ফুড ওয়াক’-এ।একটি খবরের কাগজ ফুড ওয়াক করিয়েছিল, সেখানে মীর ছিল একটা অ্যাংকর বা সেলিব্রিটি হোস্ট। সেখানে আমি ফুড ব্লগে লিখি। সেই সূত্রে আলাপ। এবার আমি গিয়ে প্রচুর জ্ঞান দিয়েছিলাম। ২০১৭ মীর একটা সময় ভাবে একটা ফুড ভ্লগ চালু করবে সেখানে খাবারের গল্প বলা হবে। কোনও খাবারকে জাজ করব না শুধু গল্পটা বলব এবং ওর কাকার চরিত্রে একজন ভারীক্কি, পাকা চুল একটা লোক দরকার ছিল, যেটা ছিলাম আমি। এইভাবেই শুরু হয়, ফুডের কাকা ‘ফুডকা’।

প্রঃ যারা এরকম নতুনভাবে শুরু করছে বা যারা চিন্তা করছে যে এরকমি প্রফেশনটাকে বেছে নেবে ভ্লগার হিসেবে, তাদেরকে তুমি টিপস কিছু দেবে?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ প্রথমত, আমি এখনও টিপস দেওয়ার জায়গায় এখনও আসিনি। দ্বিতীয়ত, আমার নিজের বিশ্বাস, প্রথম বেশ কিছুদিন, ৬ মাস বা এক বছর ওই কর্ম করে যাও ফলের আসা কর না টাইপের একটা কেস চলবে। আমার মনে আছে ফুডকার ফার্স্ট ভিডিও তখন ১০০০ ভিউস হয়েছিল, আমরা তখন লাফালাফি নাচানাচি করে ফেলেছিলাম, কিন্তু এখন সেই ১০,০০০ ভিউজ হলেও ওই সেলিব্রেশনটা হয়না। প্রথম কদিন ওই কর্ম করতে থাকো ফলের আশা করো না, এটা করতে হবে। আর একটা জিনিস খুব ক্লিয়ার থাকতে হবে যে কেন কাজটা করছি আমি, গল্প বলছি লোকের সামনে কথা বলছি। অনেকেই বলে ফুড ভ্লগার মানেই ফ্রিতে খেতে যাওয়া। কেন করছি সেটা একদম পরিষ্কার থাকা দরকার। সব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এটা করতেই হবে।

প্রঃ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটো দিকে সাপোর্ট করছে। কেউ যদি নিজের লাইফস্টাইল ভ্লগ বানাচ্ছে বা সোশাল মিডিয়ায় ভিষণ অ্যাক্টিভ রয়েছে, সেখানে একদল বলছে সমস্ত প্রাইভেসি না দেখাতে আবার আর একদল বলছে সাকসেস পেতে গেলে সবার সাথে সবকিছুটা শেয়ার করো। যারা শুরু করছে জার্নিটা তারা কনফিউজ। তদের জন্যে কি বলবে?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ আমার মনে হয় যারা শুরু করছে কমবয়সীরা তারা খুবি স্পটেড এবং ক্লিয়ার। তারা জানে কতটা ক্যামেরার সামনে আনতে হয় এবং হয়না। আমি প্রচুর লোককে চিনি যারা ক্যামেরার সামনে স্মার্ট, ফাঙ্কি কিন্তু ক্যামেরার বাইরে তারা অসম্ভব ভদ্র, কিউট বাচ্ছা। আবার উল্টোটাও সত্যি। ফলে আমরা সবসময় যেটা দেখি সেটা নাও হতে পারে। আর কি দেখাবো সেটা আমরা ডিসাইড করব তাতে অডিয়েন্সরা হয় দেখবেন নাহলে দেখবেন না।

প্রঃ তোমার নিজের পডকাস্ট শো ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ যেখানে ভীষণ স্পষ্টবাদ উঠে আসে সবসময়ের জন্য। এটাও কি ওই ওয়েব দুনিয়া বা ওয়েব প্ল্যাটফর্মের রেভোলিউশনের জন্য?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ রেভোলিউশনের জন্য নয়। আমার বয়েসে আমরা লং ফরম্যাট গল্প শুনতে পছন্দ করি। আমি সেই সাদা কালো টিভির সময়কার লোক। সেখান থেকে আমরা দেখছি ফোনের মধ্যে পৃথিবীটা এসে গাছে। ওই জায়গা থেকে আমাদের এরম লম্বা গল্প পছন্দ বা লম্বা আড্ডা। বাংলায় পোডকাস্ট খুবই কম। হয়তো সেই গ্যাপ্টা বা বিভিন্ন ধরণের লোকজনের আড্ডা মারার আইডিয়া থেকেই এটা শুরু। দ্বিতীয়ত আমি একটা ব্যাপারে জানি যে আমি খুব একটা জানিনা। যেটা জানিনা সেটা আমি গেস্টদের থেকে শিখতে চাই।

প্রঃ সবাই বলে ‘বাঙালীর দ্বারা বিজনেস হয়না’- এটা একটা চেনা মিথ। এক্ষেত্রে ধারণাটা একটু একটু করে বেশ খানিকটা বদলে যাচ্ছে। তুমি একটু বলো এটা নিয়ে।

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ এইরকম বাজে ধারণা আমি খুবই দেখেছি। যেমন ভারতের অন্যতম সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যাঙ্ক, সেটি একজন বাঙালি ভদ্রলোকের তৈরি। আমি বন্ধন ব্যাঙ্কের কথা বলছি। চন্দ্রশেখর প্রভু তৈরি করেছে। অন্যদিকে বাঙালিদের একটি বিজনেস ফোরাম আছে, যার নাম বেঙ্গল বিজনেস কাউন্সিল। এটা হচ্ছে বাঙালিদের জন্যে একটা নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম। বাঙালি ব্যাবসায়ীরা যেখানে নেটওয়ার্কিং করতে পারবে, একে অপরের সাথে কাজ করতে পারবে এবং নিজেদের মধ্যে ব্যাবসা জেনারেট করতে পারবে। সেখান থেকেই এই বেঙ্গল বিজনেসের যাত্রা শুরু। যদি আমার কথা বলো আমার ভালোই ব্যাবসা হয়েছে বেঙ্গল বিজনেস কাউন্সিল থেকে।

প্রঃ রিসেন্ট সবাই ফেসবুক বা কোনও ওয়েব প্ল্যাটফর্মে নিজের মতামত বা ধারণা নিয়ে কিছু শেয়ার করলে একটা বিতর্কের দিক চলে আসে, সেই জিনিসগুলোকে কিভাবে হ্যান্ডেল করা হয়?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ হ্যান্ডেল করিনা তো। বহু যুগ ধরেই এই বিতর্ক চলে আসছে। প্রাচীন দিনে সক্রেটিসরা বহু ঝগড়া, মারামারি করেছে সেটাকে আড্ডা বলা হত। সেটার রেফারেন্স আমরা পাই সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’-এ। তো দুটো লোক তো অন্য কথা বলবেই। ম্যাচিউরিটি সেটাকেই বলে যখন দুটো লোক বুঝবে যে লোকগুলো খারাপ নয়। তাদের মতামত এক নয়। 

প্রঃ তোমাকে একটা অন্য ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে, অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে রঞ্জিত মল্লিকের সাথে, সেই ব্যাপারটা একটু বলো।

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ আমি জীবনে অনেক কিছু ভাবিনি যে হবে। তার জন্য আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই যিনি আছেন ওপরে। যখন নতুন একটা চান্স পাচ্ছি তাহলে কেন শিখবো না। প্রথমত আমি অভিনেতা নই। আমি খুব ভালো অভিনয় জানি সেটা বলবো না। হ্যাঁ মীরের ট্রেনিং নিয়ে ৫-৬ বছর খানিকটা ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ হয়েছি। কিন্তু যখন কেউ আমার ওপর ভরসা রাখছেন আমি নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো সেটাকে করার।   

প্রঃ কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ কঠিন ব্যাপার। ‘ফুডকা’য় মীর আমি কোনদিনই কোন স্ক্রিপ্টিং করিনি। আমরা যেরকম যা মনে এসেছে বলেছি। এই ফরম্যাটে প্রচন্ড কম্ফর্টেবল। কিন্তু যখন সেই স্ক্রিপ্টাকে, মুখস্থ করতে হয়, ডাবিং করতে হয়ে আবার। মানে সেটা খুবই ভয়ংকর।

প্রঃ ‘ফুডকা’র এই জার্নিটা, এখানে কোন মজার অভিজ্ঞতা বা কোন স্মরণীয় ঘটনা হয়েছে?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ প্রথম স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে যেদিন স্বস্তিকা মুখার্জি ফুডকার শুটে এসেছিল। আমার মতন বয়সীদের বুকে একটু ব্যাথা হয়েছিল। দ্বিতীয় হল, ফুডকার প্রথম দিনের শুট, ২০১৭ সালে, তখনও এত ইউটিউবারদের মধ্যে এত রমরমা হয়েনি। মীর যখন প্রথম শুটে আসে, ভীড় হয়েছিল খুব। তখন একজন ক্যামেরা ম্যানকে সরিয়ে ছবি তুলতে গেল। এখন ঠিক ৬ বছর পর ব্যাপারটা নরম্যালাইজ হয়ে গেছে। লোকজন বুঝে গেছে যে এরা একটা কাজ করছে। এখন তারা সেলফি তোলে কিন্তু বুঝে।

প্রঃ নিজেকে কোন ডেসিগনেশনটায় ম্যাচ করছে বলে মনে হয় তোমার?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ আমার একটাই ডেসিগনেশন। আমি একজন খুব ভালো ছাত্র। যেটা আসে আমি মোটামুটি চেষ্টা করি শেখার। আর একটা হল আমি সেটা খুব পছন্দ করি সেটা হল ‘স্পয়েলিং ফাদার’। আমার একটি ১২ বছরের বাচ্ছা আছে। বাড়িতে সবাই ভালো জিনিস শেখাই। কিন্তু আমি তাকে বিগ্রনোর কাজ শেখাই। এই দুটো জিনিসে আমি নিজেকে দেখতে চাই।  

প্রঃ দর্শকদের কি বলবে তুমি?

ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীঃ আপনারা পাশে থাকুন। অনেকগুলো নতুন জিনিস শুরু হচ্ছে। ‘ফুডকা’য় নতুন ভাবে শুরু হচ্ছে। ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’-এ আমি শিখছি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...