রসমালাইয়ের বিশ্বজয়, বিশ্বের সেরাদের তালিকায় ঠাঁই পেল বাংলার মিষ্টি

সত্যজিৎ রায়, তাঁর শেষ ছবি আগন্তুকে ছোট মামা অর্থাৎ মনমোহন মিত্রকে দিয়ে সংলাপে বলিয়েছিলেন 'আহারের এতো বাহার এ শুধু বাংলা দেশের পক্ষেই সম্ভব।' সে'কথা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য, ভোজনবিলাসী বাঙালির খাদ্যপ্রীতি তা প্রমাণ করে এসেছে যুগ যুগ ধরে।

সুগার, প্রেসার, কোলেস্টেরল ইত্যাদি যেকোনও রোগকেই বাঙালি সোজা ব্যাটে 'বাপি বাড়ি যা' করে দিতে পারে ভাল খাবারের বিনিময়ে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন কবিতার জন্য অমরত্বকে ত্যাগ করতে পারেন তিনি, আর বাঙালিরা কেবলমাত্র ভাল খানার জন্য যেকোনও কিছু ত্যাগ করতে পারেন। বাঙালির খাদ্যপ্রীতি কোনও নতুন গজিয়ে ওঠা ঘটনা নয়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিবেকানন্দ থেকে সুভাষচন্দ্র সকলেই ছিলেন ভোজনবিলাসী। ভোজনবিলাসের অনেকটা জায়গাজুড়ে রয়েছে মিষ্টি। কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন, এই তেরো পার্বনের একটিও সম্পূর্ন হয় না মিষ্টির অনুপস্থিতিতে। বিশ্বের কেক, পেস্ট্রিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে বাংলার মিষ্টি। জায়গা করে নিচ্ছে সেরাদের তালিকায়। 

IMG-20231102-WA0013

বাঙালির এক প্রিয় মিষ্টি এবার ঠাঁই পেয়েছে পৃথিবীর সেরা পঞ্চাশটি ডেজার্টের তালিকায়। মিষ্টিটি হল রসমালাই। কিছুদিন আগেই বিশ্বের সেরা মিষ্টি প্রস্তুতকারকদের তালিকায় জায়গা পেয়েছিল কলকাতার তিন প্রতিষ্ঠান, বলরাম মল্লিক রাধারমণ মল্লিক, ফ্লুরিজ, কেসি দাশ। এবার কেসি দাশ অর্থাৎ কৃষ্ণচন্দ্র দাশের সৃষ্টি জগৎ সভায় সেরাদের আসনে জায়গা পেল।

খাদ্য ও ভ্রমণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সংস্থা টেস্ট অ্যাটলাস বিশ্বের সেরা ৫০টি ডেজার্টের একটি তালিকা করেছে। তাতে রয়েছে বাংলার রসমালাই। ভারতের আরেক জনপ্রিয় মিষ্টি কাজু কাটলিও জায়গা পেয়েছে সেখানে।

ফ্রান্সে ক্রেপস, ব্রাজিলের বোম্বোকাডো, পেরুর কুয়েসো হেলাডো ও ইতালির তিরামিসুর সঙ্গে টক্কর দিয়েছে বাংলার রসমালাই ও ভারতের কাজু কাটলি। তালিকায় ৩১ নম্বরে রয়েছে রসমালাই। এবং ৪১ নম্বরে আছে কাজু কাটলি। রসমালাইয়ের জন্ম বাংলায়। কুমিল্লার ক্ষীরভোগকে রসমালাইয়ের আদি পুরুষ বলা যেতে পারে। কুমিল্লার রসমালাই আজও জগৎ বিখ্যাত।  রসমালাইয়ের জনক হলেন রসগোল্লার কলম্বাস নবীনচন্দ্র দাশের পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র দাশ। ১৯৩০ নাগাদ কৃষ্ণচন্দ্র মিষ্টির দোকান শুরু করেন। কৃষ্ণচন্দ্র মিষ্টি শিল্পে বিপ্লব ঘটান, রসমালাই তাঁরই সৃষ্টি।

রসগোল্লার আকার ছোট ছোট করে, ক্ষীর ও দুধের সঙ্গে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে রসমালাই তৈরি হয়। সাবেকি রসমালাই তৈরি হত ছোট ছোট রসগোল্লাকে দুধে জ্বাল দিয়ে। ঘন দুধের মধ্যে ডোবানো থাকে। এখন চ্যাপটা রসমালাই তৈরি হয়। কেশর দিয়ে দুধের রঙ কিঞ্চিৎ হলদে করা হয়। উপর থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় পেস্তা কুচি।

অন্যদিকে, কাজু বরফি বা কাজু কাটলির খ্যাতি গোটা দেশেই রয়েছে। উৎসবের মরশুমে এটি উপহার হিসেবে বিলি করেন আত্মীয়সজন, বন্ধুবান্ধবরা। এই সময়টাতে এর চাহিদা প্রশ্নাতীত। বরফি কড়াপাকের মিষ্টি। ক্ষীর দিয়ে তৈরি। যা উত্তর ভারতে বহুল প্রচলিত। কাজু বরফি ক্ষীর ও কাজু বাদাম দিয়ে তৈরি হয়। বাংলার কাঁথির কাজু বরফি এক সময় খুব বিখ্যাত হয়েছিল। স্থানীয় কাজুবাদাম উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে কাঁথির জনৈক কালু ময়রা কাজু বরফি বানাতেন। তাঁর মৃত্যুর পর দোকানটির আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। কাঁথির কাজু বরফি বেশ সুনাম করেছিল গত শতকে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...