জানেন কেন রাখি পূর্ণিমার দিনেই এই মন্দিরের দ্বার খোলা হয়?

আজ ও আগামীকাল দু দিন ধরে পালিত হবে রাখি পূর্ণিমা বা রাখি বন্ধন উত্‍সব। দাদা-ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে এদিন তাদের হাতে রাখি বেঁধে দেবেন বোনের। রাখি বন্ধন উত্‍সবের দিনে আমাদের দেশে নানান ধরনের সামাজিক প্রথা এখনও প্রচলিত আছে।

bansi-narayan-temple_11zon

আমাদের দেশে অনেক ধরণের মন্দির আছে যেখানে আলাদা প্রথা প্রচলিত। সেইসব মন্দিরে জড়িয়ে থাকে অনেক রকমের ঐতিহাসিক গল্প। এরকমি একটা মন্দিরের কথাই আজকে বলবো যেটা রাখি পূর্ণিমার দিনের সাথে সম্পূর্ণভাবে জড়িত।

উত্তরাখণ্ডের বংশী নারায়ণ মন্দির। যে মন্দিরের দরজা সারা বছর বন্ধ থাকে কেবল মাত্র এক দিন সেই দরজা খোলা হয়। আর সেই দিনটি হল রাখি পূর্ণিমার দিন। দাদা-ভাইয়ের শুভ কামনায় এদিন মন্দিরে পুজো দিতে আসেন দিদি-বোনরা।

উত্তরাখণ্ডের চামবোলি জেলায় উরগাম ভ্যালির কাছে অবস্থিত এই মন্দির। পাহাড়ের এক জনমানবহীন এলাকা সেখানেই এটি অবস্তিত। কস্তুরী স্টাইলে নির্মিত মন্দিরটি ১০ ফুট উঁচু। এই মন্দিরে শিব ও বিষ্ণুর মূর্তি পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত। সারা বছর এখানে প্রবেশ নিষেধ থাকে। কিন্তু রাখিপূর্ণিমার দিনে এই মন্দিরে সাধারণ মানুষের ভিড় একেবারে দেখার মতন। এইদিন সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দ্বার।

পুরাণের কাহিনি অনুসারে মহাভারতের কালে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়। কথিত আছে এই মন্দিরে সারা বছর স্বয়ং বিষ্ণু বাস করেন। দেবর্ষি নারদ বছরের অন্য দিনগুলিতে নারায়ণের পুজো করেন। মন্দির লাগোয়া একটি গুহাও রয়েছে। রাখি পূর্ণিমার দিন সেই গুহার মধ্যেই সকলে বিশেষ পুজো দিয়ে আসেন। তাই সেই দিনগুলিতে সাধারণ মানুষের সেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ। মানুষ সেখানে কেবলমাত্র রাখি পূর্ণিমার দিন প্রবেশ করার সুযোগ পান। তাও সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে পুজো করা যেতে পারে।

bansi-narayan-mandir_1645265599_11zon

স্থানীয়দের বিশ্বাস যে এই মন্দিরে পুজো দিলে ভাই-বোনের সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং সেইসঙ্গে দুজনেই জীবনের প্রতি পদে সাফল্য লাভ করেন। তাদের কথায় এখানে পৌঁছানো একদমই সহজ ব্যাপার নয়। মন্দিরে যাওয়ার জন্য ১০-১২ কিমি পায়ে হেঁটে যেতে হবে এবং সেই হাঁটা পথও একেবারেই সহজ নয়। উত্তরাখন্ডের যোশীমঠ অঞ্চলে পৌঁছে এই মন্দিরের জন্য যাত্রা শুরু করতে হয়।

এই মন্দিরের সঙ্গে প্রচলিত একটি কাহিনি হল যে একবার রাজা বলি বিষ্ণুকে তাঁর দ্বাররক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন জানান। বিষ্ণু রাজি হয়ে বলির সঙ্গে তাঁর রাজত্বে যান। বিষ্ণু কোথায় গেলেন তাঁ খুঁজে না পেয়ে চিন্তিত লক্ষ্মী দেবী নারদের কাছে যান। নারদ মুনি তাঁকে জানান যে বিষ্ণু বলি রাজার দ্বাররক্ষক হয়ে আছেন। এই শুনে দুঃখিত লক্ষ্মী বিষ্ণুকে সেখান থেকে বের করে আনার পথ জানতে চান নারদের কাছে। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বলি রাজার কাছে গিয়ে তাঁর হাতে রক্ষাসূত্র বেঁধে দিতে হবে লক্ষ্মীকে। তার প্রতিদানে বিষ্ণুকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানান লক্ষ্মী। সেই দিনে এখানকার রাজা বলি নারায়ণের আরাধনা করেন। সেই থেকে শুধুমাত্র রাখি পূর্ণিমায় এই মন্দিরের দরজা সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। নারায়ণের মূর্তিতে রাখি পরিয়ে দেন ভক্তেরা।

এই মন্দিরে পুজো দেওয়ারও বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। এখানে দাদা বা ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় দিদি-বোনেরা পুজো দিতে আসেন। মন্দিরে বিষ্ণুদেবের এক অতি প্রাচীন বিগ্রহ রয়েছে। সেই মূর্তিতে রাখি ছুঁইয়ে নিজের বাড়িতে গিয়ে দাদার হাতে পরানোর রেওয়াজ রয়েছে। সেইসঙ্গে মন্দির লাগোয়া গুহায় রেখে আসতে হয় মাখন বা মাখন দিয়ে তৈরি কোনও পদ। মনে করা হয়, এই মন্দিরের আরাধ্য ভোগ হল মাখন। বছরে একবার হলেও এই মন্দিরে পুজো করার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছেন একদল পুরোহিত। তাঁরাই রাখির দিনে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করেন এখানে আর সেই পুজোতেই আসেন ভক্তরা।

  • ট্যাগ

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...