কালী কথা: নৃসিংহপুর কালনাঘাটের ৫২ হাত কালী

আজকের কালীকথায় বাহান্ন হাত কালীর গল্প, নদীয়া হল চৈতন্যের জেলা। পাশাপাশি নদীয়ার মাটি আগমবাগীশেরও জন্মভূমি। এ জেলার শাক্ত আর বৈষ্ণব মত মিলে মিশে একাকার। পৌষ সংক্রান্তির কালীপুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে নদীয়া। শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ফেরিঘাটে ভিড় করেন লক্ষাধিক পুণ্যার্থী। পুজোকে ঘিরে দশ দিনের মেলার আয়োজন করা হয়। নৃসিংহপুরের ৫২ হাতের কালীকে ঘিরে রয়েছে ইতিহাস ও লোক বিশ্বাস। কথিত আছে, যে ঘাট দিয়ে নিমাই গঙ্গা পার হয়েছিলেন, সেই নৃসিংহপুর কালনাঘাটে ৪৭ বছর ধরে মহাসমারোহে পূজিতা হয়ে আসছেন ৫২ হাতের কালী প্রতিমা।

IMG-20240202-WA0011

জানা যায়, বাহান্ন হাতের কালী পুজোর বয়স ৪৭ বছর। ১৯৭৭ সাল নাগাদ নৃসিংহপুরের দশ জন ব্যবসায়ী প্রথম পৌষকালীর পুজো শুরু করেছিলেন। সব্বাই আলাদা আলাদা ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। স্বপ্নাদেশ পাওয়ায় তাঁরা মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে ফেরিঘাটের পাশেই পৌষকালীর পুজো করতেন। তখন প্রতিমার উচ্চতা ছিল ২১ হাত। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে একদা পুজো চলাকালীন মায়ের মূর্তি ভেঙে পড়েছিল। তারপর একটি তালগাছের নীচে মায়ের পুজো শুরু হয়। তখন পুজো উদ্যোগক্তারা ঠিক করেন, তাল গাছটির উচ্চতার সমান হবে মায়ের মূর্তির উচ্চতা। মেপে দেখা যায় তালগাছের উচ্চতা প্রায় ৫২ হাত। তারপর থেকে ফি বছর ৫২ হাত উঁচু পৌষ কালীর মূর্তি তৈরি করে পুজো হয়ে আসছে। নৃসিংহপুর ফেরিঘাটের পৌষকালী ৫২ হাতের কালী নামেও পরিচিত। পৌষ সংক্রান্তির একমাস আগে থেকে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমার আকারও যেমন বিশাল, তেমনই তার রূপ। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন নানান প্রার্থনা নিয়ে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মা কাউকেই খালি হাতে ফেরান না। পুজো এবং মেলার আয়োজক 'আমরা সকলে' ক্লাব।

এমন সুবিশাল ৫২ হাত কালী প্রতিমা খুব একটা দেখা যায় না। দেবীর পুজোর সঙ্গে দশ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা চলে। মকর সংক্রান্তির পূর্ণ্য লগ্নে শুরু হয় মাতৃ আরাধনা, টানা দশ দিন চলে পুজো। দেবী এখানে ডাকের সাজে সজ্জিতা। সুবিশাল বাঁশের কাঠামোর উপর পাতকাঠি, খড় এবং মাটির প্রলেপের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় দেবী মূর্তি। প্রায় একমাস সময় লাগে মূর্তি গড়তে। এখন প্রতিমার উচ্চতা ৪২ হাত, অর্থাৎ প্রায় ৬৩ ফুট। পুজো উদ্যোক্তারা মন্দির নির্মাণ করেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে নবনির্মিত মন্দিরে পুজো হচ্ছে। দশ দিন ধরে হোমযজ্ঞ করেন সাধু সন্ন্যাসীরা। প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম। মন্দিরের মধ্যেই মূর্তিতে জল দিয়ে মিশিয়ে ফেলা হয়। শান্তিপুরের নৃসিংহপুর কালনাঘাট হয়ে উঠেছে কালী পীঠস্থান।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...