কাজল টানা বাঘিনী দৃষ্টিতে এই গোয়েন্দানি ফাঁদ পাতে শত্রুর জন্য

অদ্রিশ বর্ধনের রচিত মহিলা গোয়েন্দা চরিত্র গোয়েন্দা নারায়ণী। মেয়ে গোয়েন্দাদের গোয়েন্দানি বলার চল বোধহয় শুরু হয়েছিল অদ্রিশ বর্ধনের লেখা থেকেই। নারায়ণী বুদ্ধিমতী, সুন্দরী, আকর্ষণীয়া। বুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের আকর্ষণকে মিশিয়ে শত্রুদের ঘায়েল করতেও ব্যবহার করেছে।

যে সকল ডাকাবুকো, ছকভাঙা মেয়েদের কথা গোয়েন্দা সাহিত্যে পাওয়া গেছে নারায়ণী তাদের মধ্যে অন্যতম। নারায়ণী প্রসাধন পছন্দ করে না। কাজল টানা চোখের থেকে তার কাছে বুদ্ধিমতী চোখ অনেক বেশি আগ্রহ উদ্বোধন করে। নারায়ণীর নিজের চোখও যথেষ্ট উজ্জ্বল। বাঘিনী চক্ষু বললেও চলে। নারায়ণীর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক অদ্রিশ বর্ধন লিখেছেন "সুরমা টানা চোখের চাইতে অনেক বেশি বিপদজনক ওর পিঙ্গল চক্ষুর চাহনি। বাঘিনী চক্ষু বললেই চলে। নিমেষে হিপনোটাইস করে ফেলে। রসিকা প্রকৃতি দেবী তার অধর আর ওষ্ঠের আধারে এত রস দিয়েছেন যে রঞ্জক পদার্থ দিয়ে তাদের আকর্ষণ বৃদ্ধির দরকার পড়ে না।" এখানেই সাহিত্যিক অদ্রিশ বর্ধনের লেখার এবং ভাবনার মুন্সিয়ানা।

c59499bc-e35b-4630-bc99-f5556d4c391b

গোয়েন্দা সাহিত্যে যৌনতা, শুঁড়িখানা, বেশ্যালয় এইসব হামেশাই এসেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধিনীদের জগৎ ছিল এটা। সেই ভাবনার মূলে আঘাত করেন অদ্রিশ বর্ধন। তিনি যৌনতার ক্ষেত্রে স্বয়ং গোয়েন্দানীর চরিত্রেও তার প্রসঙ্গ আনেন। পাঠক তাকে মেনেও নিয়েছে।

একটি দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে অদ্রিশ বর্ধন লিখেছেন "এই মুহূর্তে নারায়ণী তার মুক্তোর মত সুন্দর সাজানো দাঁত দিয়ে কামড়ে রয়েছে নীচের ঠোঁটের বাম প্রান্ত। সে ভাবছে। খুন করবে না স্রেফ পিটিয়ে ছেড়ে দেবে।"

এমন সাহসী ভাবনা তার কলম এবং চিন্তাভাবনার প্রকাশ। গোয়েন্দা সাহিত্য যে পরিণত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে তার প্রমাণ ছিল গোয়েন্দা নারায়নী চরিত্রটি।

আরেকটি জায়গায় তিনি লিখেছেন " আয়নার ঠিক ওপরে জোরালো স্পটলাইট ফোকাস করে রয়েছে ওর তিলোত্তমা, দেহবল্লরীকে। প্রতিটি লোমকূপে বিধৃত অজস্র রূপের কণা। বিধাতা মাঝেমধ্যে এইরকম একেকটি রমনীতে সৃষ্টি করেন। পুরুষের প্রতাপ ভাঙার জন্য। অন্যায়ের কাণ্ডারিদের নিধন করার জন্য। তিল তিল সঞ্চিত রুপরাশি এদের অমোঘ অস্ত্র। সাক্ষীর দামিনী এদের দধীচির অস্থি। এরা সুন্দরী অথচ ভয়ংকরী।"

এমন নারীদের সম্বন্ধে তিনি সাবধানবাণীও করেছেন। অর্থাৎ এই ধরনের নারীদের সমঝে চলা উচিত। অপরাধ জগতে অপরাধীদের শায়েস্তা করতে এমন নারীর কথাই উল্লেখ করেছেন অদ্রিস বর্ধন। একজন পুরুষ সাহিত্যিকের লেখায় এমন ছকভাঙা, দুঃসাহসী নারী চরিত্রের নির্মাণ নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য এবং দৃষ্টান্তমূলক।

লেখক অদ্রিশ বর্ধন কল্পবিজ্ঞানের জগতে অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক। তাঁর সৃষ্টি গোয়েন্দা নারায়ণীর চরিত্র যে ছকভাঙা হবে তেমনটাই কাম্য। সমাজের এমন অনেক দিক রয়েছে যেখানে আজও নারীরা গ্রহণীয় নয়, সেই দিকগুলোয় নারীদের অবাধ প্রবেশ ঘটিয়েছে সাহিত্য। অদ্রিশ বর্ধনের কলম তেমন সাহিত্যেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...