গত সোমবারই উটিতে প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আসলে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার হয়না। পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তেমন কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সাধারণ প্লাস্টিক অবশ্যই ক্ষতিকর। তবে অভিনব উপায়ে কেউ যখন এই প্লাস্টিককেই ব্যবহারযোগ্য করে তোলে, তখন বাহবা প্রাপ্য হয় বৈকি।
তেমনই একজনের কথা শোনাবো আপনাদের। কলকাতা শহরেই সাদামাটা দোতলা বাড়ি। কিন্তু একটু ঠাহর করলেই বোঝা যায়, সেই বাড়িতেই ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে অন্তত হাজার পাঁচেক গাছ। প্রত্যেকটি গাছ যত্নে পরিপুষ্ট হয়ে উঠেছে। যেটা উল্লেখ করার মত বিষয়, তা হল প্রত্যেকটি গাছ রয়েছে বিভিন্ন রকম প্লাস্টিকের বোতলের টবে। বুঝলেন না তো? বাড়ির মালিক পার্থসারথি গঙ্গোপাধ্যায় মজে আছেন নিজের বাড়িতে গাছ লাগানোর নেশায়। প্লাস্টিকের বোতল, টিনের ক্যান, চামড়ার টায়ার, প্লাস্টিকের জার ইত্যাদির মধ্যে সুন্দর করে রং করে, নানা রকম ছবি এঁকে টব তৈরী করেছেন পার্থসারথি বাবু। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে জ্যারিকেনও। ঘরে ঢোকার মুখেই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী মা দূর্গা আপনাকে স্বাগত জানাবেন। কাজের শুরু অবশ্য পরিবেশের কথা ভেবে নয়। নিজের খেয়ালেই শুরু করেছিলেন তিনি। এখন গোটা বাড়িটাই হয়ে উঠেছে তাঁর স্টুডিও। একদিকে ফেলে দেওয়া বর্জ্যকে শিল্পের রূপ দেওয়া অপরদিকে সেই শিল্পের গায়ে সবুজের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা-এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে তাঁর সৃষ্টিতে।
রাস্তা থেকে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কন্টেনার বাড়িতে এনে ধুয়ে, মুছে তাতে প্রথমে রং করেন তিনি। এর পর গাছ লাগান। কিন্তু শুধুই রং নয়, কোনো কোনো সময় তিনি কিছু বোতল একত্রিত করে কোনো আকার দেন। যেমন মা দূর্গা বানিয়েছেন। একটি জ্যারিকেনকে মুখের আদল দিয়ে তার হাতলটিকে বানিয়েছেন নাক, পাশে দু'টি জলের বোতল হয়েছে চোখ, ছোট ছোট দশটি বোতল দিয়ে হাত। ভাঙাচোরা সিডির টুকড়ো দিয়ে তৈরী করেছেন সারা গায়ের সাজ। এভাবেই জ্যারিকেন কেটে নিজের শৈল্পিক বুদ্ধি দিয়ে তৈরী করেছেন গণেশের মূর্তী।
তিনি নিজেকে বলেন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুখী মানুষ। হবে নাই বা কেন, যাঁর এমন কাজের নেশা, তাঁর তো এরকম বলারই কথা। তবে তিনি কিন্তু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। গলায় ক্যান্সার হয়েছিল। ডাক্তারবাবুরা বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে নিজেকে তুলে এনেছেন পার্থবাবু। তিনি চান, সকলেই গাছের প্রতি এমন সচেতনতা নিয়ে বাড়িতে কিছু গাছ অন্তত লাগাক, যাতে পরিবেশের ভারসাম্য অল্প হলেও রক্ষা পায়।