গানবাজনার স্পিকারের জগতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আসনে বসে আছে এই বাঙালির কোম্পানি

কে বলে বাঙালি ব্যবসা পারে না। বাঙালি নাকি অলস? ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। এক বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর পুত্রের তৈরী করা, এক বাঙালি পদবি যুক্ত কোম্পানি আজ পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট অডিও মিউজিক সাউন্ড সিস্টেম প্রস্তুত করে। তিনি অমর গোপাল বসু।

তিনি তৈরী করেছিলেন বোস কর্পোরেশন। আজ এই কোম্পানির মিউজিক সিস্টেম পৃথিবীর সবথেকে ব্যয়বহুল গাড়ি, সিনেমা ইত্যাদি জায়গায় ব্যবহৃত হয়। গানবাজনার স্পিকারের জগতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আসনে বসে আছে এই বাঙালির কোম্পানি, নাম বোস। আর অসুবিধা হচ্ছে না নিশ্চয়।

IMG-20231103-WA0027

পঞ্চাশের দশক। অমর গোপাল তখন ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র ছাত্র। বেশ দাম দিয়ে  মিউজিক সিস্টেম কিনেও মন ভরল না। কারণ খুঁজতে গিয়ে বঙ্গসন্তান দেখলেন, প্রেক্ষাগৃহে গায়কের গলার ৮০ শতাংশ সরাসরি শ্রোতার কানে আসে না। আসে দেওয়ালে ছাদে ধাক্কা খেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর পদার্থবিদ্যার এই মূল সূত্রকে কাজে লাগিয়ে নিজেই মিউজিক সিস্টেম তৈরির কাজে লাগলেন।

সিনেমা হলে শব্দের প্রতিফলনের তত্ত্ব কাজে লাগিয়েই এমন এক সাউন্ড সিস্টেমের নকশা বানিয়ে ফেলেন, যাতে রয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট স্পিকার, দেওয়ালের দিকে তাক করা। অর্থাৎ শুধুই সরাসরি স্পিকারের শব্দ নয়, শ্রোতাকে প্রতিফলিত শব্দ শোনানোরও বন্দোবস্তও করে দেন।

তারপর যা হয়েছে তা ইতিহাস। রোমের সিস্টিন চ্যাপেল, মক্কার প্রধান মসজিদ কিংবা লস অ্যাঞ্জেলেসের স্টেপলস সেন্টারে যে সাউন্ড সিস্টেমগুলো বসানো,  সেনাবাহিনী,  বিমানসংস্থা এমনকী নাসা'র মহাকাশচারীরাও যে হেডফোন ব্যবহার করছেন, সে সবই তার কোম্পানির সৃষ্টি!

IMG-20231103-WA0024

অমর গোপাল বসু একাধারে বিজ্ঞানী,  অধ্যাপক এবং শিল্পপতিও বটে। ১৯৫৬ সালে এমআইটি-র অধ্যাপকের পদে যোগ দেন অমর। পরের ৪৫টা বছর অধ্যাপনার সঙ্গেই চলে গবেষণা। একাধারে মেধা অপরদিকে ব্যবসা। দুই প্রতিভাই সমান ছিল তাঁর মধ্যে। বিশ্বের প্রথম ৪০০ কোটিপতির তালিকাতে এসেছিলেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ব্যবসা শুরু করেছিলাম অন্য রকম কিছু তৈরি করব বলে। অর্থ উপার্জনের জন্য নয়।” তাঁর দীর্ঘ গবেষণার কথা মনে করিয়ে সে দিন সহাস্যে জানান, “অন্যের সংস্থায় কাজ করলে হয়তো কয়েকশো বার চাকরি খোয়াতাম!

বাবা ননীগোপাল বোস ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে ভিসা ছাড়াই আসেন মার্কিন মুলুকে। সালটা ১৯২০। শুরু করেন ইমপোর্ট এক্সপোর্টের ব্যবসা। বিয়ে করেন মার্কিন স্কুল শিক্ষিকাকে। ১৯২৯ সালে জন্ম হয় ছেলে অমর গোপালের।

আর তাঁর ‘বোস কর্পোরেশন’-এর জন্ম ১৯৬৪ সালে। সংস্থার প্রথম তৈরি সাউন্ড সিস্টেম তেমন সফল হয়নি। কিন্তু ১৯৬৮ সালে যেটা বাজারে আসে, সেই ‘বোস ৯০১ ডিরেক্ট/রিফলেক্টিং’ স্পিকার সিস্টেম’ পরের টানা ২৫ বছর ‘বেস্ট সেলার’ থাকে। ক্রমশ ‘বোস’-এই ভরসা রাখে সেনা থেকে নাসা।

প্রসঙ্গত অমরের গোটা জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জুড়ে যায় এমআইটি। তাই ২০১১ সালে সংস্থার শেয়ারের বেশির ভাগটাই দান করেন বিশ্ববিদ্যালয়কে। এতে ‘বোস’-এর লভ্যাংশের অর্থ ঢুকবে এমআইটি-র ঘরে।

১২ জুলাই ২০১৩ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিজ্ঞানী ও শিল্পপতি অমর গোপাল বোস।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...