কাশির জন্য কি আমাদের লাইফস্টাইল দায়ী?

কাশির জন্য কি আমাদের লাইফস্টাইল দায়ী? অতিরিক্ত কাশি থেকে কী কী সমস্যা হতে পারে? কাফ এটিকেট এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন? শুকনো কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া পদ্ধতি কী কী হতে

পারে? কাশি ও শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যায় পরামর্শ দিলেন ডাঃ দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত (Dolanchampa Dasgupta, General Chest Practitioner

কাশি কী? কাশি কেন হয়?

সে প্রসঙ্গে দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, কাশি কোনও রোগ নয়। কাশি হল উপসর্গ। কাশি দিয়ে আমরা বুঝতে পারি আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার গভীরে আমাদের যেতে হবে। কাশির কারণ কী? কাশি হল লক্ষণ।

কাশি হল প্রতিবর্ত ক্রিয়া। যেখান দিয়ে শ্বাস নিচ্ছি, মানে আমাদের শ্বাসনালীতে বাইরে থেকে যদি কিছু বিজাতীয় পদার্থ ঢুকে যায়, ধূলো, ধোঁয়া, জীবাণু সংক্রমণ হয় তাহলে আমাদের শরীর নিজে নিজেই চায় জিনিসটা বের করে দিতে। তখন যে পদ্ধতির মাধ্যমে সেটা হয় তা একটি বিশেষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া, কফ হল সেই ক্রিয়া যার মাধ্যমে সেটিকে বের করে দিতে চায়। সেই জন্যই আমাদের কাশি হয়।

কাশির জন্য লাইফস্টাইল অবশ্যই দায়ী। আমাদের ছোটবেলায় গুরুজনরা শেখাতেন মুখে হাত দিয়ে কাশতে। রান্নাঘরে যিনি রান্না করতেন রান্নার সময় কাশি পেলে আলাদা কাপড় থাকত, পরিষ্কার কাপড়ে রান্না করা, কাশি, হাঁচি কোনওভাবেই যেন খাবারে না যায়- লাইফস্টাইলের এই জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ যিনি অসুস্থ, ফুসফুসের অসুখে ভুগছেন তিনি রান্নার সময় কাশির মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে দিচ্ছেন এবং শুধু তাই নয় পরিবারের বড়দের থেকে, স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকাদের থেকে ছোটরা মুখে হাত দিয়ে কাশি, সঙ্গে রুমাল রাখা এই আচার নিয়ম শিখত। কাশি লাইফ স্টাইল ডিজিজ বলতে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আমাদের  শিশু থেকে বৃদ্ধ হওয়া অবধি প্রতিটি পদক্ষেপে রোগ প্রতিরোধ ব্যাপারটা জানতে হবে।যদি কোনও শিশুর চার সপ্তাহের বেশি কাশি হয় তাহলে তাকে বলা হয় যে সেই শিশুর ক্রনিক কাফ হয়েছে। জ্বর, ঠান্ডা লাগা এগুলো কাশির খুব সাধারণ কারণ। শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্যই।

শিশুর কাশি যদি চার সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে এবং প্রাপ্ত বয়স্কর ক্ষেত্রে যদি আট সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে তা ক্রনিক কাফের মধ্যে পড়বে। এটা অতিরিক্ত কাশি। কাশতে কাশতে হাঁফ ধরে যাওয়া, কাশতে কাশতে গলা চিরে যাওয়া, কাশির সঙ্গে রক্তপাত এই সবই অতিরিক্ত কাশির উপসর্গ। এক্ষেত্রে কোনওরকম দেরী না করে কিন্তু দ্রুত চিকিৎসকের পরামৰ্শ নিতে হবে।শুকনো কাশি এক বিরক্ত কারণ হয়ে উঠেছে এখন। শহর গ্রাম দুই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্যই। শহরে গাড়ির ধোঁয়া দূষণের বড় কারণ তাছাড়া কল কারখানা থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, এছাড়া গ্রামের দিকে ফুলের রেণু, পোলেন গ্রেইনস তা থেকেও নানা রকম এলার্জি হয়। শুকনো কাশির বড় কারণ এলার্জি। কাশতে কাশতে রোগীর এমন হচ্ছে যে তার শরীরের ভিতর ব্যথা হচ্ছে।

কোভিড পরবর্তী বহু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে শুকনো কাশি সারতেই চায় না।

ডাঃ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে ইনহেলারের ব্যবহার নেই । চিকিৎসক যখন দিচ্ছে ইনহেলার তখন তারা ভাবছে এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এবং এটা ব্যবহার করলে সারা জীবনই ব্যবহার করতে হবে। এই ধারণা একদমই ঠিক নয়।চিকিৎসকরা বুঝছেন দেওয়াটা প্রয়োজনীয় বিশেষ করে ড্রাই কফের ক্ষেত্রে। অনেক সময় স্টেরয়েড ইনহেলার দেওয়া হয় সেটা কিন্তু এই মুহূর্তে প্রথম সারিতেই পড়ছে। ওষুধ হিসেবে যেটি ব্যবহার করার। কারণ খুব দ্রুত ভাল ফল দেয় এবং যে সমস্যাটা হয় তাকে দ্রুত সারিয়ে দেয়।

চিকিৎসককে বিশ্বাস করুন তিনি যদি বলেন যে এই ইনহেলার বা স্টেরয়েড ইনহেলারটা আপনি নিন বা নেবুলাইজ করুন, ড্রাই কাফের জন্য এটা দরকারি তাহলে অবশ্য করেই সেটা করবেন।

বাসক পাতা, তুলসী পাতা, মধুর রোগ সারাতে বড় ভূমিকা আছে। অল্প কাশিতে একটা দুটো তুলসী পাতা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে রোগ সেরে যায়। বাসক পাতা ফুটিয়ে খেলে কাজ দেয়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে এগুলো বেশ ভাল। তবে খুব বেশিদিন নির্ভর করা উচিত নয়।কারণ ভাইরাস নিজেকে যেভাবে বদলে ফেলছে, জটিল হচ্ছে সেখানে পুরনো পদ্ধতি, ঘরোয়া টোটকার ওপর এক তরফা নির্ভর করে থাকলে চলবে না। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতেই হবে।

কাফ এটিকেট এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্যানডেমিক থেকে পৃথিবী সবে সেরে উঠেছে এবং অতি মারীর আসল কারণ আমরা কেউ জানিনা। যদিও তা নিয়ে আমরা বিভিন্ন আন্দাজ চালাই। সমস্যার কারণ যাই হোক না সমাধান আমাদের কাছে এটাই ছিল যে যতদিন না ভ্যাকসিন আসছে ততদিন নিয়ম মেনে চলতে হবে। কাফ এটিকেট এই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কাশির সময় প্রতিটি বায়ুকণা অজস্ৰ ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।

ভারতে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রোগ টিউবারকুলেসিস বা টিবি, যক্ষা। এই রোগ সমাজের সব শ্রেণীতে হয়। শুধুমাত্র আর্থিকভাবে অনগ্রসর দুর্বল শ্রেণীতে হয় এমন নয় ধনীদের মধ্যেও হয়

যক্ষা প্রতিরোধের বড় উপায় কাফ এটিকেট। কারণ ভিড় ট্রেনে যাওয়া বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাওয়া, বাতানুকূল জায়গায় যখন যক্ষা আক্রান্ত কোনও মানুষ এসে বসছেন তখন কাশলেই উল্টো দিকের মানুষটি আক্রান্ত হচ্ছে। কাফ এটিকেট যদি থাকে, যদি মাস্ক পরা যায় বা রুমালে কাশা যায়, দূরে বসা যায় তাহলে কিন্তু অনেকটাই প্রতিহত করা যায়। তাই কাফ এটিকেটকে খুব গুরুত্ব দেওয়া দরকার।মহামারীর সময় যেভাবে প্রচার হয়েছিল সেভাবেই একেবারে ছোট থেকে সকলকে শেখানো দরকার কাফ এটিকেটের গুরুত্ব।প্রতিটি শিশুর মাস্ক, রুমাল ব্যবহার, মুখ ঢেকে কাশা শিখতে হবে। কাফ এটিকেট না শিখলে আগামী দিনে বড় সমস্যা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...