দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলেই তৈরি ব্যারাকপুরের এই মন্দির! জেনে নেওয়া যাক শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দিরের অজানা ইতিহাস

একবার দেখলে চিনতেই পারবেন না এটা এক অন্য মন্দির। অবিকল কলকাতার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলেই তৈরি করা হয়েছে এই মন্দিরটি। তবে, এখানে মা ভবতারিণী অর্থাৎ মা কালী নয়, রয়েছে মা অন্নপূর্ণা। প্রায় ১৫০ বছর তৈরি হয়েছে এই অন্নপূর্ণা মন্দিরটি।

রানী রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বা দেবী এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। শোনা গিয়েছে যে মন্দির উদ্বোধনের দিন শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।

এই মন্দিরের বহু কাহিনী রয়েছে। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক মা অন্নপূর্ণা ও ব্যারাকপুরের তালপুকুর অঞ্চলের এই শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দিরের সমস্ত জানা-অজানা কথা।

১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মন্দিরটি। রানী রাসমণির মেয়ে জগদম্বা দেবী মা অন্নপূর্ণা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। তবে, মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক বাধা পেয়েছেন জগদম্বা।

স্বামী মথুরামোহন বিশ্বাসের মৃত্যুর কারণে এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ নিয়ে যাবতীয় ভার নিজের কাঁধে বহন করেছিলেন জগদম্বা দেবী এবং তাঁর বড় পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস। অবশেষে ১৮৭৫ সালের ১২ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তির দিন চাণক-এ শ্রী রামকৃষ্ণ দেব এই মন্দির উদ্বোধন করেন। এই চাণকই হল আজকের ব্যারাকপুর।

মন্দির ঢোকার মুখেই ওপরে পড়বে একটা বড় সিংহর মূর্তি। কিন্তু সেই সিংহ স্থাপন নিয়েও অনেক ধরণের বাধা সৃষ্টি তৈরি করেছিল বৃটিশ দলেরা। ফলে, জগদম্বা দেবী এবং তাঁর পুত্র দ্বারিকানাথ লড়াই করে সিংহ স্থাপন করেছিল।

এখানে আছেন রূপোর পদ্মের ওপর আসীনা অষ্টধাতুর শ্রীশ্রীশিবশক্তি অন্নপূর্ণা ঠাকুরানী। সম্মুখে মহাদেব। দেবী অন্নপূর্ণার নিত্য পুজো হয়।

মা অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠার অনেকরকম উপাখ্যান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল কাশী উপাখ্যান, যা খুবই জনপ্রিয়। এই কাশী উপাখ্যানকেই বহু ভক্তরা বিশ্বাস করেন।

কথিত আছে, কৈলাসে শিব ও পার্বতী সুখে সংসার করছিলেন। সেই সময় তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা যায়। এরপরেই মা পার্বতী স্বয়ং মহাদেবের ওপর রাগ করে কৈলাস ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় মর্ত্যে দেখা যায় মহামারী। ভক্তরা আকূল হয়ে শিব-পার্বতী এবং অন্যান্য ভগবানদের কাছে প্রার্থণা করছিলেন একটু খাবারের জন্য। সেই দুঃখ দেখেই ভক্তদের জন্যই শিব ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু কোথাও কিছু পাচ্ছিলেন না। তখনই মহাদেব শুনতে পান যে কাশীতে এক মহিলা সবাইকে ভাত দিচ্ছেন। শিব বুঝতে পারেন, কে সেই মহিলা। মাকে দেখে মহাদেব একটুও ভুল করেননি। এরপর মায়ের থেকে ভিক্ষা নেন শিব। এরপরেই ধীরে ধীরে মহামারি ঘুচে যায়। তারপরেই কাশীতে মা অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে হয়।     

অন্নপূর্ণা পুজো নিয়ে মন্দিরের এক পুরোহিত জানিয়েছেন যে গতবছরের থেকে এইবছর ভক্তদের সমাগম আরও অনেক বেড়ে গিয়েছে। ফুল, মালা, সোনার গয়না দিয়ে এই বিশেষ দিনে মা অন্নপূর্ণাকে সাজানো হয়েছিল। ১৩ রকমের মাছ, রকমারি ভাজা, খিচুড়ি, পোলাও, পায়েস, এরকম বহু ধরণের খাবার দিয়ে এদিন বিশেষ ভোগ দেওয়া হবে মা অন্নপূর্ণাকে।

এই মন্দিরে আসতে হলে শিয়ালদহ থেকে ব্যারাকপুর লাইনের যেকোনও ট্রেনে উঠে ব্যারাকপুর কিংবা টিটাগড় স্টেশনে নেমে একটা টোটো কিংবা অটো করলেই পৌঁছে যাবেন মন্দিরের দ্বারে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...