ধর্মের প্রতি মানুষের অগাধ বিশ্বাস, তাই ভারতবর্ষের দিকে দিকে ছড়িয়ে রয়েছে নানান তীর্থক্ষেত্র। শুধু আজ নয়, ভগবানের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা বহু যুগ ধরে চলে আসছে সেই একই ভাবে। সেই ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে ভারতের বহু মন্দিরের বুকে।
তেমনই একটি মন্দির রয়েছে এই বাংলার বুকে যা বাবা বড় কাঁছারীর নামে সকলের কাছে পরিচিত।
লোকমুখে শোনা যায় যে এই মন্দিরে যে কেউ মানত করে পুজো দিলেই নাকি সেই সব মনষ্কামনা পূরণ হবেই। ২৫০ বছরেরও পুরানো বাবা বড় কাঁছারী মহিমা শুনলে এখনও সবার মন শিউরে ওঠে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরের ইতিহাস বড়ই অলৌকিক।
চলুন, আজ জেনে নেওয়া যাক এই মন্দিরের মাহাত্য এবং বাবা বড় কাঁছারী বহু অজানা কথা।
জানা গিয়েছে যে বড় কাঁছারী শব্দটার অর্থ হল বড়ো কোর্ট। এই মন্দিরের অর্থ শুধু একটা নয়, রয়েছে আরও এক নাম। ভূতের কাঁছারী। এই মন্দিরে রয়েছে স্বয়ং ভোলানাথ। এখানে সকলের কাছে তিনি পরিচিত বাবা ভুতনাথ হিসেবে।
দেখা গিয়েছে যে এই মন্দিরটি অবস্থিত একটা বড় অশ্বত্থ গাছের নিচে এবং সেই গাছের গোড়া অর্থাৎ ঠিক তাঁর নিচেই রয়েছে শিবলিঙ্গ।
১৭৫০ সাল। সেই সময় বাংলায় নবাব আলিবরদি খায়ের শাসনের চলছিল। সেই সময় যখন মারাঠিরা বাংলায় আক্রমণ করেছিল। তাদের অত্যাচারের জেরে স্থানীয় লোকেরা বাধ্য হয়ে ঠাই নিয়েছিল এক জঙ্গলে। সেই জঙ্গলটা ছিল আসলে একটা শ্বশান। তারপর থেকেই এই বড় কাঁছারী বাবার পরিচিতি শুরু হয়।
আরও একটা গল্প রয়েছে এই মন্দিরের পেছনে। শোনা যায়, এই মন্দিরে নাকি স্বয়ং ভূতনাথ বিচারসভা বসাতেন। আর তাই এই স্থান বড় কাঁছারী নাম পরিচিত।
এখানেই শেষ নয়, তার কিছু বছর পর এক সাধু এই মন্দিরে আশ্রয় নেন। তারপর থেকেই এইখানে উপক্রিয় হতে লাগে স্থানীয় লোকেদের। এইখান থেকেই তাঁদের বিশ্বাস যে এই সাধুই স্বয়ং মহাদেব।
এছাড়া জানা যায় যে এই অশ্বত্থ গাছের তোলাতেই সেই সাধু প্রাণত্যাগ দেন। এরপর গ্রামের সমস্ত মানুষদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে সাধুর দেহ না পুড়িয়ে সেই গাছের নিচেই তাঁকে সমাধি দেন এবং সেখানেই শুরু হয় যায় পুজো।
সাধুর সমাধি দেওয়ার পর হঠাৎ অলৌকিক ভাবেই সেইখান থেকে বেরিয়ে আসে এক অশ্বত্থ গাছ। ভক্তদের মনে বিশ্বাস জাগেযে এটা সেই সাধুরই আশীর্বাদ আর তাঁদের সেই বিশ্বাসেই নিজেদের মনোস্কামমা পূরণ হতে থাকে এবং দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বাবা বড় কাঁছারীর মাহাত্য।
এই মন্দিরে মনোস্কামনা পূরণ করতে ভক্তরা একটা লাউড কাগজে লাল পেন দিয়ে নিজেদের মনের কথা লিখে বাবার কাছে রেখে যান আর তারপর বাবার মাথায় জল ঢেলে পুজো দেন।
কিভাবে আসবেন বাবা বড় কাঁছারী মন্দিরে? দক্ষিণ ২৪ পরগনার, মহানগরের সীমান্তে ঝিকুরবেরিয়া গ্রামে প্রথমে আসতে হবে। তারপর আমতলা কিংবা ঠাকুরপুকুর এসে, সেখান থেকে একটা অটো করলেই পৌঁছে যাবেন বাবার কাছে।
জেনেই গেলেন মন্দিরের বিষয়ে সমস্ত কথা। এবার আর দেরি না করে একবার বড় কাঁছারী বাবার দর্শন করে আসুন এবং নিজের মনের কথা জানিয়ে আসুন।