১১৮ তম জন্মবার্ষিকীতে রাশভারী ‘ম্যাটিনি আইডল’ ছবি বিশ্বাস

ক্যান আই টক টু রিনা ব্রাউন?” -  কালজয়ী বাংলা ছবি সপ্তপদী টার্নিং পয়েন্ট ছিল তাঁর জলদগম্ভীর ব্যক্তিত্ব। মেজাজি রিনা ব্রাউন ওরফে সুচিত্রা সেনের মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য যে আবহ দিয়েছিল ছবিটিকে তা একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব বলে ধারনা। অথবাদাও, ফিরিয়ে দাও, ফিরিয়ে দাও আমার সেই বারোটা বছর”; মনে পড়ে যায়সবার উপরে; ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ, শুধু সংলাপ নয় একজন অসহায়-সর্বহারা মানুষের যে অভিব্যক্তি ছবিতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা তিনি ছাড়া অন্য কেউ পারতেন না, এই বিশ্বাসই গেঁথে গিয়েছে সাধারণ দর্শক থেকে সিনে-বোদ্ধাদের মনে। অনেকেরই অজানা ঋত্বিক ঘটককত অজানারেছবি শুরু করেছিলেন তাঁকে নিয়ে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টারের রোলে। শ্যুটিংয়ে ঋত্বিক বারবার কাট করছেন, ‘‘হচ্ছে না ছবিদা। উকিল হয়ে যাচ্ছে, ব্যারিস্টার হচ্ছে না।’’ হতভম্ব হয়ে ঋত্বিককেই বললেন, ব্যারিস্টারের অভিনয় দেখিয়ে দিতে। ঋত্বিকও তা- করলেন। ফ্লোরে সবাই তখন তটস্থ! ঋত্বিকের ফরমায়েশ মতোই শট দিলেন তিনি। পরে বলেছিলেন, ‘‘এ ঢ্যাঙাও (অন্য ‘ঢ্যাঙা’টি হলেন সত্যজিৎ রায়) অনেক দূর যাবে।’’ এমনই ছিলেন তিনি দুরদর্শী-প্রাজ্ঞ-বিনয়ী।

লম্বা, সুদর্শন, প্রাণোচ্ছল অথচ রাশভারী ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রথম পা রাখেন ১৯৩৬-বিশুচরিত্রে। ‘নদের নিমাই’, ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’, ‘সখের চোর’, ‘শিউলিবাড়ি’, ‘রাজা সাজা’, ‘আম্রপালী’, ‘বিচারক’, ‘সপ্তপদী’, ‘নীলাচলে মহাপ্রভু-সহ প্রায় ২৫৬টি বাংলা চলচ্চিত্র তিনটি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। হাঁপানিকে অদ্ভুত ভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি অসামান্য এক বাচনভঙ্গি তৈরি করেছিলেন। চলচ্চিত্র মাধ্যমে পোশাকে-চলনে-বলনে একটা পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। রহমতের আলখাল্লা থেকে বিশ্বম্ভরের বেনিয়ান, সাহেবি হ্যাট-কোট-স্যুট বা জরির জোব্বাসবই যেন তাঁর শরীরে অন্য মাত্রা পেত। অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, সারা ভারতবর্ষের মধ্যে অভিনয়ের একটি ইনস্টিটিউশন। হলিউডের তারকার সঙ্গে তুলনীয়। মঞ্চ এবং সিনেমা দুক্ষেত্রেই ছিলেন দক্ষ। উত্তমকুমার তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে ডায়ালগ বলতে গেলে নাকি সবই ভুলে যেতেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চোখে তিনি রাজকীয় অভিনেতা।

রাজা শশাঙ্ক দেবের উত্তর পুরুষ শচীন্দ্রনাথ দে বিশ্বাস কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯০২ সালের ১২ জুলাই কাত্যায়নীদেবী ভূপতিনাথের এই পুত্র সন্তানকে এমন সুন্দর দেখতে ছিল যে, তাঁর মা তাঁকে পরম স্নেহে ডাকতেনছবিবলে। মায়ের আদরের সেই ছবি হয়ে উঠেছিলেন পরবর্তীকালের রাশভারী ম্যাটিনি আইডল ছবি বিশ্বাস তাঁর ১১৮ তম জন্মবার্ষিকীতেজিয়ো বাংলা পক্ষ থেকে রইল এই সশ্রদ্ধ নিবেদন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...