‘শিবপুর’-এ কোন বিতর্কে জড়িয়েছিলেন খরাজ-পরমব্রত?

'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি টিম 'শিবপুর' (Shibpur) অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chattopadhyay,Actor), অভিনেতা  খরাজ মুখোপাধ্যায় (Kharaj Mukhopadhyay,Actor) এবং ছবির প্রযোজক অজন্তা সিংহ রায় (Ajanta Sinha Roy, Producer)। 'শিবপুর'-এর নেপথ্যের গল্প শুনুন তাঁদের মুখে।

প্রঃ পরম, এই ছবিতে  তোমার এই পুলিশ অফিসারের চরিত্রটা সেটা একদমই বাস্তব চরিত্র। এরকম লাইভ চরিত্র তুমি প্লে করলে কাল্পনিক চরিত্র থেকে অনেকটাই আলাদা। প্রথম হচ্ছে কেন এই চরিত্রটা তুমি অ্যাক্সেপ্ট করেছিলে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে এই চরিত্রটা করতে গিয়ে তোমায় কো চ্যালেঞ্জের  মুখোমুখি হতে হয়েছে?

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ঃ প্রথম কথা বলি, যে সিনেমা মাত্রই কাল্পনিক। বড়জোর বলা যেতে পারে বাস্তবকে  আধার করে বা বাস্তবধর্মী কিছু একটা তৈরি করা হয়েছে। কারণ একজন মানুষের জীবন ৬০-৭০ বছর। সিনেমার সময়   ২ ঘন্টা। তো বলা বাহুল্য বাস্তব নয় সিনেমাটা। আমি যেই চরিত্রটিতে অভিনয় করেছি শিবপুর ছবিতে সেই চরিত্রটিও, আমার কথার সুত্র ধরেই বলি, যদি বাস্তবধর্মী  চরিত্র, বাস্তব চরিত্র হয়, সেখানে এই চরিত্রটি আদৌও বাস্তবে এক্সিস্ট করে থাকে, তিনি কিছু জিনিস করেছিলেন সেগুলি আছে আবার তিনি তিনি আরও কিছু করেছিলেন সেগুলো হয়তো নেই এই ছবিতে। যেটা আমার করার কারণ এই চরিত্রটি সেটি হচ্ছে যে আমাকে একটি পুলিশের চরিত্রে অনেকবার দেখেছেন মানুষ সেটা ‘সাত্যকি সিনহা’ হোক, ‘অভিজিৎ পাকড়াশি’ হোক বা সেটা আরণ্যকের ‘অঙ্গাদ মালিক’ হোক। এখন আপাত দৃষ্টিতে দেখলে আরও একটি পুলিশের চরিত্র? এরম মনে হতেই পারে। কিন্তু আমার করার কারণটা এই চরিত্রটি হচ্ছে যে আদেও এই বাস্তব চরিত্রের কাছাকাছি কিনা অন্য প্রশ্ন, কিন্তু আমি যেই চরিত্রটি অভিনয় করেছি, সুলতান আহমেদ নামক খুব ধুরন্ধর, মানে তিনি সাত্যকি সিনহা, অভিজিৎ পাকড়াশি বা আঙ্গাদ মালিকের মতন, নিশ্চয় কর্তব্য নিষ্ঠ কর্ম প্রনায়ন পুলিশ অফিসার।কিন্তু তিনি অনেক বেশি আজকে প্র্যাক্টিকাল রক্ত মাংসের মানুষ একজন পুলিশ ছিলেন যার ওপর এক দিক থেকে প্রশাসনের চাপ থাকে, যার অন্যদিক থেকে পরিবারের চাপ থাকে, তার বেক্তিগত জীবনে চাপ থাকে, অন্যদিকে তার কর্মক্ষেত্রের সেই অপরাধ জগতের এক প্রচন্ড প্রেসার থাকে। তো ইনি কিন্তু খুবই পর খাওয়া এবং ধুরন্ধর একজন পুলিশ অফিসার, একজন আইপিএস অফিসার। যিনি জানেন এই চালটা দিলে অমুখ সময় দাবার ঘুটিটা এখান থেকে এখানে মুভ করা যাবে। ইনি শুধু আমি একজন সৎ পুলিশ অফিসার বলে যাননি, ইনি কিন্তু একই সঙ্গে অনেক রকম ক্যাল্কুলেশন্স করে ফেলে এবং দ্যাট ইজ ওহ্যাট  মেকেস আ ক্যারেকটার আ লট মোর ইন্টারেস্টিং। সেই কারণে আমার মনে হয়েছিল এই চরতিত্রের সঙ্গে এই চরিত্রটি মধ্যে দিয়ে থাকতে পারলে ভালো হয়।

প্রঃ খরাজদার কাছে আসব, তুমি যে চরিত্রটা করেছ ‘মাছ তপন’, এবং তিনি এক্সিস্ট করতেন, একটা দুর্ধর্ষ চরিত্র এবং এখানে একটু টুইস্ট আনা হয়েছে। তোমার এই চরিত্রটা করতে গিয়ে তোমার কেমন লেগেছে কারণ এর মধ্যে আবার একটু স্বস্তিকাকে সাপোর্ট করার জায়গা দেখছি তোমার চরিত্রের।

খরাজ মুখোপাধ্যায়ঃ একটা অন্য জায়গার কথা বলি, একটা বাস্তবমুখী, ধরা গেল এক পুলিশের চরিত্র, প্রশাসন বিভাগের একটা লোক, তার কতটা ভাল দেখানর দরকার বা কতটা খারাপ দেখানর দরকার, এইসব কিন্তু নির্বাচন করেন নির্দেশক বা স্ক্রিপ্ট রাইটার। দুজনে মিলে আলোচনা করে নির্ধারণ করে। কতটা ভাল দেখাব বা কতটা খারাপ, বা শুধুই ভালগুলো দেখাবো, বা শুধুই খারাপগুলো দেখাব, সেটাতে কিন্তু মানুষটা কতখানি বাস্তব হল্ম যেমন ছিল তেমন হল কিনা, সেটা বিষয়বস্ত নয়। তেমনি এই লোকটার ক্ষেত্রেও একটা মানুষ সম্পূর্ণ রূপে খারাপ সেটা হয় না। দেখা গেল আমি নিজেই অনেক অ্যান্টি সোশ্যালকে সামনাসামনি দেখেছি, তাদের সঙ্গে খানিকটা সময়ও কাটিয়েছি তাদের দেখে বুঝতে পেরেছি। ধরো একজন ডাকাত এখন আমাদের বাড়ির চাষ বাস সামলান। তিনি পেশাগতভাবে ডাকাত ছিলেন, তারপর তাঁর ছেলেরা সেই কাজটা করে। কিন্তু ভদ্রলোক এরমই ছিলেন। আমরা যখন তার সঙ্গে দেখা করেছি, এখন দেখে তার সেই ডাকাতের রকম সকম কিছুই বুঝতে পারিনা। একবার দেশের বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল সেটা উনি প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন যে ডাকাত পড়েছে গ্রামে, এবং এটা ওঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছেন। এটাই বলছি যে ভালো মন্দ মিশিয়েই তো, সেরমই এই লোকটা সেই একটা মাছের ব্যাবসা করত, তারপর সে নিজের পাওয়ারে নানারকম সামাজিক পরিবেশে থেকে, সেখান থেকে লোকটা ওরকম একটা জায়গায় চলে গেছেন। সেখানেই এই একজন মহিলা নিজের ব্যক্তিগত অনেক সমস্যা নিয়ে আসেন। একটা সাহায্য চেয়েছিলেন যদি আপনি করেন। এরম পাওয়ারফুল লোক তো দরকার, পুলিশের কাছে গিয়ে সেরম কিছু হবে বলে তিনি আশা করেনি, তাই উনি অন্য একটা পথ বেছে নিয়েছেন। তার কাছে আসার পর, সেও তার মতন সাহায্য করেছেন এবং ভদ্রমহিলা এটাও জানেনা কি দিতে হবে তার বদলে, গয়নাগাটি এরম কিছু। ভদ্রলোক তার আরজেন্সিটা বুঝে বলে ‘ঠিকাছে আমি হেল্প করে দেব’। এটা তার ভালো জায়গা। ভালো মন্দ মিশিয়েই আছে। দিনেরবেলায় যদি মাছের ব্যবসা করে তখন মাছ কেটে যার ৩ কিলো পাওয়ার কথা তাকে তো ২ কিলো দেয় না, না ? এইবার এই জায়গাটায় কাজ করতে যাচ্ছে তখন কিন্তু সে খুব নটোরিয়াস। সেই জায়গাগুলোয় তার যাবতীয় কুকর্মগুলো করতে গিয়ে তার একটুও কাঁপে না। তিনি একটা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল ওই অঞ্চলে। এঁর কাজ ছিল মোকাবিলা করা। তো সুলতান আহমেদ প্রথম এসে দেখে যে এখানে তাকে মকাবিলা করতে হবে। সবটায় কিন্তু ভাল হয়ে থাকলে চলবে না। ওই কৃষ্ণের মতন , কিছুটা খারাপ। কিছুটা বুদ্ধিহতটা দিয়ে আমাকে এটা ওভারকাম করতে হবে। আমাদের ‘শিবপুর’ ছবির বিষয়বস্তু একটা পুরো সন্ত্রাসময় পরিবেশকে মুক্তো করার একটা গল্প।

প্রঃ খরাজদা তোমার ডায়লেক্টটা শুনে বীরভূমের ডায়েলগ মনে হচ্ছে। সেখানে কি তোমাকে এইভাবেই দেখানো হয়েছে?

খরাজ মুখোপাধ্যায়- এই জিনিসটা যেটা আমি শুনেছিলাম সেটা পরবর্তীকালে পরে জানতেও পেরেছি, ইটস ট্রু। কারণ যখন শুটিং করছিলাম এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। যার চরিত্রে আমি করছি তার ভাইয়ের সঙ্গে  দেখা হয়েছিল মাছের বাজারে, এবং তিনি ঠিক করে দিয়েছিলেন কালীঘাট বাজারের লোকের সাথে। খুব কথা হয়েছিল। তিনি বলেন এমনি তো এই সমস্ত মানুষের থেকে দূরে থাকা ভাল। তাদের ওই ভদ্রলোক গল্প শোনাতেন, কাকে গুলি করে মারছে, কার হাত ফেটে সেইখান থেকে জানতে পেরেছি সেই ভদ্রলোক হাওড়ার মানুষ নয় বাইরের মানুষ। আমি ভাবলাম সেটাকে যদি কোনও কালার দিতে হয় তাহলে একটা ডায়লেক্টে দিলে চট করে কানেক্ট করিয়ে দেওয়া যায়।

প্রঃ পরম অনেকদিন বাদে স্বস্তিকার সঙ্গে কাজ করলে। ভালো বন্ধু হিসেবে একটা গ্যাপের কেমন লাগল? 

পরম্ব্রত চট্টোপাধ্যায় – খুব বেশি গ্যাপ নয় কিন্তু। আমরা ২০১৮ সালে শাহজাহান রেজেন্সি শুট করেছিলাম এবং ২০১৯-ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। শাহজাহান রেজেন্সিতে যে পরিমানে এক সঙ্গে আমাদের স্ক্রিন টাইম ছিল, এটাতে কম । জুটি বলা একদমই যায় না। যদিও এটা জুটি বলার ছবি নয় একেবারে কারণ ছবিটা অন্য স্পেসের। তবে হ্যাঁ, খুব গ্যাপের নয় ৩-৪ বছরের গ্যাপের। আবার কাজ করব।

প্রঃ ৩০ জুন ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, দর্শকদের যদি তোমরা কিছু বলতে চাও?

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়- দেখো, প্রত্যেক অভিনেতা, অভিনেত্রী বা পরিচালক চান যে তার ছবি হলে গিয়ে মানুষজন যেন দেখে এবং অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জিজ্ঞেস করা হয় যে কেন দেখবে মানুষ থিয়েটারে গিয়ে। প্রত্যেক দর্শক কারও অভিনয় নিয়ে বলে। কলাকুশলীদের কথা খুব একটা কেউ বলে না। হয়তো সাধারণ মানুষদের আকৃষ্ট করে না। আমি সিনেমা জগতের ভিতরকার লোক তাই আমি একটু স্বাধীনতা নিয়ে একটা কথা বলতে চাই যে একজন টেকনিশিয়ানের জন্যে ছবিটা দেখা উচিত। আমার মতে যিনি প্রকৃত স্টার, তিনি হচ্ছেন ছোট্ট একটা মানুষ, এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফার প্রসেনজিৎ চৌধুরী। ছবিটা যেরকম দেখতে লাগছে, একটা লুকিং ফিল তৈরি হয়েছে। লোকজনের একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ট্রেলার দেখে  কেউ ভাবতে পারেনি এরকম ছবি বাংলায় তৈরি হবে। তার  কৃতিত্ব পুরোটাই প্রসেনজিতের। যারা একটু টেকনিক্যাল মাইন্ডের তারা শুধুমাত্র ওর কাজটার জন্যে এই ছবিটা দেখুন।

খরাজ মুখোপাধ্যায় – এমন অনেক ঘটনা আছে, প্রথমত আমরা ভুলে যাই বা আমরা জানিনা এমন অনেক কিছু। সেরম ছবি হচ্ছে একটা ইতিহাস নির্ভর গল্প অনেকেই তৈরি হয়েছে, এখন একটা ট্রেন্ড, সেরম এটাও একটা ছবি। বাংলাতে এরকম ছবি খুবই কম হয়, হিন্দিতে সেটার চেষ্টা প্রচুর হয়েছে। গেমের ওপর, অনেক ঘটনার ওপর গল্প হয়েছে। সেটার মধ্যে বাংলায় এটা অন্যতম ছবি এবং যতটা সম্ভব করেছি ইতিহাস বিকৃত না করে জিনিসটাকে নিয়ে আসার এবং ফাইনাল একটা সুস্থ পরিবেশকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার সাধারন মানুষের সামনে, তারই গল্প ‘শিবপুর’।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...