‘আমার ভাবনাচিন্তার ভাষাদানের কারিগর রবি ঠাকুর’

'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি অভিনেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় (Ananya Banerjee, Actress)। ২০০০ সালে মিস ক্যালকাটা’র মুকুট উঠেছিল তাঁর মাথায়। অভিনেত্রী, সমাজকর্মী, এন্টারপ্রেনার ছাড়াও তাঁর অন্য পরিচয় তিনি কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সম্প্রতি পরিচালক রাজর্ষি দে’র ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ ছবিতে দেখা যাবে তাঁকে। কীভাবে সামলান সব দিকে একসঙ্গে, কী তাঁর আসল প্যাশন জানালেন মনখোলা আড্ডায়

প্রঃ তোমার শুরুটা কেমন ছিল, পঁচিশে বৈশাখ তুমি কীভাবে পালন করতে?

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ আমি উত্তর কলকাতার মেয়ে। যদিও এখন আছি, আমার কলকাতা কর্পোরেশনের ওয়ার্ড বাইপাস, কিন্তু আমার শিকড় উত্তরা কলকাত। রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই বড় হয়ে ওঠা।  সেই জন্যই একতু আলাদা ভালোলাগা-ভালোবাসা কাজ করে। রবি ঠাকুর আমার কাছেই শুধুই এমন ব্যক্তিত্ব নয় যাঁকে নিয়ে আমি মঞ্চে বক্তব্য রাখলাম বা কিছু বললাম, আমার কাছে উনি একটা উপলব্ধি। আমার ভাবনাচিন্তার ভাষাদানের কারিগর রবি ঠাকুর।

আমাদের ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বড় হওয়া। উত্তর কলকাতার বড় যেওয়া যেমন, মাকে দেখতাম গান গাইছেন। আমিও ‘বাণীচক্রে’ নাচ শিখছি, আঁকা শিখছি- এসব নিয়েই আমার বড় হওয়া। তবে বাড়িতে নাটকের চল খুব ছিল না। কিন্তু নাটক দেখতে যেতাম। উত্তর কলকাতাকে থিয়েটারের স্বর্গ বলা যায়। নাটক দেখতে যাওয়া, রবীন্দ্রনাথ পড়া, গান, নাচ নিয়েই আমাদের ছোটবেলাটা কেটেছে।

আমার কাছে রবীন্দ্রজয়ন্তী মানে সকালবেলা প্রভাত ফেরী, রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে শুরু। বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মালা দেওয়া-এগুলো নিয়ে আমার ছোটবেলার রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি। তবে এখন অনেক বড় করে করি। প্রচুর মানুষকে নিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করি। কবিপক্ষ হয়। গোটা কবিপক্ষ জুড়েই চলে। তবে আমার নিজস্ব ধারণা- বাঙালির আন্তরিকতায় কোথাও বোধহয় ঘাটতি পড়েছে। আমাদের ছোটবেলায় আমরা রবীন্দ্রনাথ পড়তাম। সেটা শুধু পড়ার জন্য পড়া নয়- অনুভব করা। এখন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন হবে তাই তার জন্য শেখা। একটা গান, দুটো নাচ তাতেই শেষ হয়ে গেল। প্রতিদিন পড়া, সেখান থেকে উপলব্ধি, আন্তরিকতা সেটা যেন নেই।   

প্রঃ তুমি ২০০০ সালে মিস ক্যালকাটা হয়েছিলে। ‘মিস বিউটিফুল স্মাইল’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলে। বিউটি কনটেস্ট , মডেল হবে- এই ব্যাপারটা কি নিজের থেকেই করেছিলে?

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ লেট নাইন্টিজে তখন সুস্মিতা সেন মিস ইউনিভার্স হয়েছে, ঐশ্বর্য রাই মিস ওয়ার্ল্ড হয়েছে সেগুলো দেখে ছোটবেলায় একটা প্রভাব পড়েছিল। আমার হাইট ভাল ছিল, লম্বা চুল ছিল- এসবে মনে হয়েছিল এই প্রফেশনটায় কাজ করলে ভাল হয়। আমার বড় হয়ে ওঠা উত্তর কলকাতায়। সেই বেড়ে ওঠার মধ্যে কিছু মূল্যবোধ ছিল। আমার পরিবার উত্তর কলকাতার গোঁড়া পরিবার। আমি যে এই কেরিয়ারটাই নিই সেটা সবাই মেনে নিতে পারেননি। আমার ঠাকুমা তখন আছেন, একেবারেই চাননি আমি এসব করি। কাকা পেশায় চিকিৎসক, সবাই লেখাপড়া নিয়েই রয়েছেন। তাই বাড়ির ছেলেমেয়েরা কেউ অন্য পেশায় যাক সেটায় একটু আপত্তি এসেছিল।

প্রঃ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলে, তারপর রাজনীতিতেও এলে এখন সিনেমা। রাজর্ষি দে’র ‘সাদা রঙের পৃথিবী’তে তুমি ‘আভা সেন’, ডেবিউ করবে। বেনারসের বিধবাদের একটা অন্য দুনিয়া আছে। ওখানে ছবি করতে গিয়ে কি কিছু এক্সপ্লোর করেছ?  

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ যখন মিস ক্যালকাটা হয়েছি তখন একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি যেখান থেকে প্রচুর মানুষকে আমি প্রভাবিত করতে পারি। সেই প্লাটফর্মটা আমি কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। মনের মধ্যে কোথাও একটা মনের মধ্যে কোথাও ছিল যে ‘মাস’র জন্য কিছু করব। সেটা করতে গেলে আমার একটা প্লাটফর্ম দরকার হতই, যেটা আমি একজন স্কুল শিক্ষিকা বা প্রফেসর হয়ে করতে পারতাম না। যেটা আমি রাজনীতি তে এশে করতে পেরেছি অথবা যদি আমি সিনেমা করতাম তাহলে সেখানেই করতে পারতাম। সেই চিন্তাভাবনা একটা ছিল। ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ উইডো ট্রাফিকিং নিয়ে ছবি। যার বিধবা তাদের জীবন নিয়ে ছবি। আমার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই কাজটা করতে সুবিধা হয়েছে। আমি দেখেছি বিধবার সমস্যা। নতুন করে তারা জীবন শুরু করতে চাইলে কী সমস্যা হয়। সেই জন্যই আভা সেনের চরিত্রটা করতে আমার অসুবিধা হয়নি। আমার নিজের মনে হয়েছে চাইল্ড ট্র্যাফিকিং নিয়ে অনেক কাজ হলেও উইডো ট্রাফিকিং নিয়ে সেভাবে কাজ হয়নি। অথচ এটা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দিক। বার্তা দেওয়া যায়। আগামী দিনে শুধু এদের নিয়ে কাজ করা যায় কিনা, আইনগত ক্ষেত্রেও কিছু করা যায় কিনা সেই দিকগুলো জানার সুযোগ হয়েছে।   

প্রঃ এট কিছু তুমি সামলাও কী করে, তোমার কি কোনও প্লেজার টাইম আছে?

অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ আমি বেশি সময় পায় না। অন্যতরকমভাবে কাজ করতে হয়। সক্রিয় রাজনীতিতে আমি জনপ্রতিনিধি, একেবারেই কাউন্সিলর লেবেলে সুতরাং মানুষ সকালে উঠে জল পাচ্ছে কিনা, ময়লা পড়ে আছে কিনা সবটা আমাকেই দেখতে হয়। এটা সারাদিনের কাজ। এতা ঠিকমতো করার জন্য যেটা দরকার ছিল সেটা হল বাড়ির সাপোর্ট। বাড়িতে খুব একটা দায়িত্ব নিতে হয়নি। সময় দিতে পারিনি বলে সমস্যা- এগুলোর মুখে আমায় খুব পড়তে হয়নি। বাড়ির লোক বোঝে। যা আমায় এগিয়ে দিয়েছে। আমার ওয়ার্ডের মানুষও সাহায্য করেছে। শ্যুটিং করতে যাওয়াটাই আমার আনন্দ। সুইচ ওভার করার জন্য মেডিটেশনটা খুব দরকারী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...