কোন লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন?

কোন লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে যে ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন? জ্বর ছাড়াও ডেঙ্গুর আর কী কী উপসর্গ দেখা যায়? বাড়িতেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা কি সম্ভব? এই রোগ থেকে বাঁচতে প্রাথমিকভাবে বাড়িতে কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত? বিস্তারিত জানালেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অফ মেডিসিন ডাঃ ময়ূরবাহন মুখোপাধ্যায় (Dr. Mayur Bahan Mukherji, Associate Professor of Medicine)

ডেঙ্গুর জ্বর আর সাধারণ জ্বরের মধ্যে পার্থক্য কী? ডাঃ ময়ূরবাহন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রতিবার বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় ডেঙ্গুর জ্বর প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে। ১০৪- ১০৫ জ্বর হবে রোগীর।  প্যারাসিটামল খেয়েও কমবে না। চোখের পিছনে ব্যথা হবে। এমন অসহ্য ব্যথা যে মনে হবে দেখতে পাব না। বমি করবে, গা গুলোবে।  খাওয়ার ইচ্ছে একদম চলে যাবে। অনেক ডেঙ্গুতে ডায়রিয়া হয়। ডেঙ্গুর আর এক নাম ব্রেক বোন ফিভার। এমন ব্যথা হবে যেন মনে হবে হাড় ভেঙে দিই। পিঠে কোমরে অসহ্য ব্যথা। এগুলো ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ। মহিলাদের ডেঙ্গু হলে মাসিকের সমস্যা হয়। ঋতচক্র এগিয়ে আসে। প্লেটলেট কমতে থাকে। জ্বরের সঙ্গে আগাম পিরিয়ড হলে তার মানে খুব সচেতন থাকতে হবে যে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্লেটলেট কমে যাচ্ছে, পরিস্থিতি বিপদজনক।

ডেঙ্গুর তিনটে স্টেজ আছে। অ্যাডিস এজিপ্টি - স্ত্রী মশা থেকে ডেঙ্গু ছড়ায়। ভোরের দিকে কামড়ায়। মশার জন্ম হয় খুব তাড়াতাড়ি। ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে ডিম পাড়ে পরিষ্কার জলে। শৌচালয়, রান্নাঘর জল জমে থাকে এরকম জায়গায় থাকে।

খিদে চলে যাওয়া, বমি, ডায়েরিয়া হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ জরুরি। এই পরিস্থিতিতে স্যালাইন লাগে যাতে রোগীর শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় থাকে।  ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে ঢুকলেই লিভারে যায়। আরও শক্তিশালী হয়ে টেম্পোরারি হেপাটাইটিস হয়। সেই জন্যই বমির প্রবণতা দেখা যায়। ডেঙ্গুর রোগীর সেদ্ধ খাবার, প্রচুর জল, ডাবের জল খেতে হবে। জ্বর হলে যদি দেখা যায় স্প্যাইক ১০৪, তিনবার আসছে রুলার থ্রি তখনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। তাতে পজেটিভ এলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে। ডেঙ্গুতে ব্লিডিং সমস্যা দেখা যায়। নাক, মুখ দিয়ে রক্তপাত হয়। শ্বাস কষ্ট হয়, রক্তচাপ কমে যায়। হাইপোটেন্সিভ শকে চলে যায়। শকে গেলে তা থেকে বেরনো খুব মুশকিল।

ডেঙ্গু কোন অঞ্চলে বেশি হচ্ছে সেই ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগে থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা করতে হবে। পুরনো বাড়ি বা পরিতক্ত স্থানে যাতে জল জমে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। গামাকক্সিন ছড়াতে হবে। ডেঙ্গু হওয়ার পর প্রতিরোধ করার চেয়ে আগে থেকে সাবধান হওয়া দরকার। ডেঙ্গুর কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ, ভ্যাকসিন নেই।

ডেঙ্গু হওয়ার পর ২১ দিন খুব সাবধানে থাকতে হবে। ভারি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৮ ঘন্টা ঘুমতে হবে। ডেঙ্গু খুব দুর্বল করে দেয়। ডেঙ্গু জ্বর হলে খাওয়াদাওয়া ডায়েট বড় ব্যাপার। লিভার এনজাইম বাড়ায় টেম্পোরারি জন্ডিস হয় তাই সেদ্ধ খাবার খেতে হবে। সবজি ফল খেতে হবে প্রচুর পরিমানে। জলও খেতে হবে প্রচুর। ফলের রস, নারকেল জল, ভিটামিন সি আছে এমন ফল খেতে হবে। স্বাদ ফেরাতে পোস্ত খাওয়া যেতে পারে। প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...