কলকাতা শহরে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হল ত্রিপুরা সুন্দরী মায়ের মন্দিরটি?

ইতিহাসের প্রাচীন শহর ত্রিপুরা। বহু ইতিহাসে মোড়া এই শহর।

এই শহরের জাগ্রত দেবী হল ত্রিপুরা সুন্দরী মা। এই মন্দিরে দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা নিজেদের মনোবাঞ্ছা পুরণ করতে। তবে এবার আর ত্রিপুরা যেতে হবে না মা ত্রিপুরা সুন্দরীকে দর্শণ পেতে, এখন এক টুকরো ত্রিপুরা রয়েছে শহর কলকাতাতেই।  

দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া এলাকার কাছেই রয়েছে এরকমই একটা জায়গা। এখানেই রয়েছে সেই ত্রিপুরা সুন্দরীর মায়ের মন্দির। জানা গিয়েছে যে এই মন্দির খুব বেশি পুরোনো না হলেও এই জায়গাটার ইতিহাস বহু পুরোনো।

আদ্যাশক্তি মহামায়ার দশটা রূপকে বলা হয় ‘দশমহাবিদ্যা’। এই মহাবিদ্যার তৃতীয়া দেবীর নাম ষোড়শী, বা ত্রিপুরসুন্দরী। ত্রিপুরায় যেমন তাঁর জাগ্রত মন্দির রয়েছে তমনই এই কলকাতাতেও রয়েছে মায়ের মন্দির।

এই মন্দির ঘুরলেই বুঝবেন খুবই শান্ত একটি পরিবেশে অবস্থিত। একবার এলেই মন জুড়িয়ে যাবে সকলের।

এবার মা ত্রিপুর সুন্দরীর ব্যপারে জেনে নেওয়া যাক। অনেকেই পরিচিত নন এই দেবীর সঙ্গে। কথিত আছে যে স্বর্গ, মর্ত ও পাতাল, এই তিন পুরের কর্ত্রীই তিনি এবং তাঁর রক্ষ ভৈরব হলেন শ্রী শ্রী পঞ্চানন দেব। 

এই মনিদিরের সাথে জড়িয়ে আছে পাল ও সেন যুগের ইতিহাস। এককালে এই দেবীর মন্দিরের পূর্ব সীমা দিয়ে বয়ে যেত আদিগঙ্গা ভাগীরথী। সেই সময় মন্দিরে এসে ব্যাবসায়ীরা পূজো দিতেন। মগ ও জলদস্যুদের অত্যাচারে ভাগীরথীর শাখা শুকিয়ে যায় এবং দেবীপীঠকে কেন্দ্র করে যে সমৃদ্ধশালী জনপদ গড়ে উঠেছিল, সেটা লুপ্ত হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে মন্দিরও ভগ্নদশা হয়ে যায়।

পরবর্তীকালে, সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, জগদীশ ঘোষ নামের এক পূর্ববঙ্গীয় ধনী জমিদার এই মন্দিরের সংস্কার করেন ও বোড়াল গ্রামের শ্রীবৃদ্ধি করেন। কিন্তু সেই ব্যক্তির মৃত্যু হতেই আবার সেই মন্দির ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায়।

এর পরে, জগদীশ ঘোষের উত্তরসূরী হিরালাল ঘোষ এই মন্দিরের পূর্ননির্মাণ করেন এবং আবারও শ্রীবৃদ্ধি লাভ করেন এই গ্রাম।

বইর্তমানে মায়ের যেই মূর্তিটা রয়েছে সেটা একেবারে নবনির্মিত। কুমোরটুলী থেকে মূর্তিটি গড়িয়ে আনা হয়েছে। দেখা গিয়েছে যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, মহেশ্বর ও সদাশিব পঞ্চ দেবতার পঞ্চ-মস্তকের খুরের উপরে, দেবীর আসন রচনা করেছেন। মাকে দেখলেই মন ভরে যাবে, এটা নিশ্চিত।

কি করে আসবেন এই মন্দিরে? এই মন্দিরটি অবস্থিত বোড়ালে। মেট্রো করে আসলে, কবি নজরুল মেট্রো স্টেশনে নেমে সেখান থেকে একটা অটো করলেও পোঁছে যাবেন মায়ের দরবারে। প্রত্যেকদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মন্দিরটি।

এবার আর দেরি করবেন না, মা ত্রিপুর সুন্দরীর জাগ্রত মন্দিরটি একবার ঘুরেই আসুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...