কীভাবে শ্যুটিং ফ্লোরে জমত প্রাক্তন-বর্তমানের টক্কর?

Jiyo Adda 1 - 'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’র ‘স্ত্রীভুজ’ চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় আর জয়া আহসান। দুজনেই হাইভোল্টেজ অভিনেত্রী, কীভাবে শ্যুটিং ফ্লোরে জমত প্রাক্তন-বর্তমানের টক্কর?  অকপট আড্ডায় তাঁদের মুখে শুনুন ‘অর্ধাঙ্গিনী’র কথা

প্রঃ পোস্টারের দুই নারীর অর্ধেক মুখ, দুই মুখ মিলে এক হয়েছে তারা, এই পোস্টার ভাবনা কীভাবে এল, তোমরা কি এমন ভাবনার মাধ্যমে অন্য কিছু বোঝাতে চাইছ?

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ জয়া, তুমি বলো, তোমার কী মনে হয়েছে…

জয়া আহসানঃ আমি কী বলব, মানে অর্ধাঙ্গিনী কথার অর্থ তো আমরা জানি সবাই বিবাহসূত্রে বা বিবাহের পরে একজন পুরুষের স্বত্বা এবং জীবনের উপস্থিতিতেও- দুই মিলে যখন এক হয় তখন  তাকে একজন ধরা হয়। এখনকার দিনে যদিও মনে হয় কনসেপ্টটা একটু ভিন্ন হয়তো সেটা পরে বলব। কিন্তু আমাদের পোস্টারে যে কনসেপ্টটা ইয়ামরা দেখতে পাচ্ছি দুজন নারীর মুখ। একটা আমি যে চরিত্রটা করেছি সেই চরিত্রের কিছু অংশ এবং বাকিটা চূর্ণীদির চরিত্রের অংশ-দুটো জুড়ে দিয়েছে। এটা বোধহয় কৌশিকদার আইডিয়া থেকেই আসতে পারে। আমরা ধরে নিই অর্ধাঙ্গিনী মানে পুরুষ মুখের অর্ধেক দেখতে পাওয়ার কথা ছিল, সেটা না করে উনি ব্লেন্ড করে দিয়েছেন। ছবিটি আমি, চূর্ণীদি কেউ দেখিনি, কোন কনসেপ্টের জায়গা থেকে এমন করেছেন তখন বুঝতে পারব।   

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমি এভাবে ইন্টারপ্রেট করলাম- যে মানুষটা তো কোমায় রয়েছে, তার দুই স্ত্রী একসঙ্গে এসেছে কোনও কিছুর সমাধান করার জন্য, তাকে যেন বর্তমান স্ত্রী যেমন সামনে থেকে তার সমস্ত প্ল্যান, স্বপ্নের কথা জানে তেমন প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে কিন্তু অতীতের সমস্ত স্মৃতি, দুই মিলে মানুষটার একটা সম্পূর্ণতা আসছে।

প্রঃ চূর্ণীদি, তুমি এরকম এই চরিত্রে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিলে কেন? কী দেখে পছন্দ হয়েছিল চিত্রনাট্য?

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ জয়ার সঙ্গে অভিনয় করব, এত মেধাবী একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করা, আর চরিত্রর দিক থেকে বলব খুব কমপ্লেক্স একটা ক্যারেক্টার। অনেক তার সাইকোলজিক্যাল লেয়ারস রয়েছে যেগুলো থেকে আমার এই চরিত্র করা

প্রঃ জয়া, একই প্রশ্ন তোমার কাছে, এটা কি কৌশিকদার ছবি বলে তোমাকে আরও বেশি করে টেনেছিল?

জয়া আহসানঃ কৌশিকদার যে ছবি আমি করেছি, বিজয়া, বিসর্জন বা যেগুলো আমি করেছি সেগুলো নয়, সব ছবিতেই মানবিক সম্পর্ক নিয়ে, মানবিক সম্পর্কের অনেক জটিলতা, লেয়ারস থাকে, সকলের ছবিতে সেগুলো দেখা যায় না। লেয়ারসগুলো খোলে না বা কমিউনিকেট করতে পারে না। কৌশিকদার প্রতিটি ছবিতে সেটা আছে। এই ছবিতে সেটা আরও বেশি। কৌশিকদার সঙ্গে কাজ করলে নিজেকেও অ্যাক্টর হিসেবে আবার পরীক্ষায় ফেলা যায়। খুব সূক্ষ সূক্ষ কাজ থাকে। কৌশিকদা অভিনেত্রী হিসেবে আমাকে অনেকখানি তৈরী করেছেন।

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ জয়া আর আমি এতো ফিল করে কাজটা করেছি, যে আমরা নিজেদের মধ্যে শ্যুটিংয়ের সময় কমিউনিকেট করতাম না। এমনিতে আমাদের খুব সুন্দর সুসম্পর্ক। বড্ড ভালবাসি আমি ওকে, কিন্তু যখন শ্যুটিং হচ্ছে তখন চরিত্রকে ধরে রাখার জন্য সিন ঠিক রাখার জন্য কমিউনিকেট করতাম না।

জয়াঃ একটা ডিসটেন্স তৈরী করেছিলাম।

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ সেটা অটোমেটিক্যালি হয়েছে।

জয়া আহসানঃ আমারটা তো অসম্ভব সুন্দর চরিত্র, কিন্তু ওঁর চরিত্রে জায়গাগুলো আমি কতটা স্পেস দেব আর দেব না- এটা যে কী খেলা!

প্রঃ চূর্ণীদি আমি তোমাকে যত বছর দেখেছি তোমায় সবাই একটু বেশি সিরিয়াস রোলে কাস্ট করে তোমার কি ইচ্ছে করে মজার, কমেডির চরিত্রে অভিনয় করতে?

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমার ভাল লাগে গো, আমি আগে কমেডি করেওছি তবে খুব কম। কমেডিটা পুরোটাই টাইমিং-এর ব্যাপার। তবে একটু কমপ্লেক্স ক্যারেক্টার বা সেনসেটিভ ক্যারেক্টার দিতে আমায় পছন্দ করে যখন আমি রোলস পাই। তবে আরও কিছু কাজ রয়েছে সেখানে নিশ্চয়ই মজার চরিত্রে পাওয়া যাবে।

প্রঃ তুমি দুটো ক্ষেত্রেই কাজ করো, পরিচালক চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী, কোনটা তোমার কাছে বেশি আকর্ষণীয়, কোনটা তুমি বেশি করতে চাও?

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আকর্ষণীয় এবং বেশি করতে চাওয়ার মধ্যে তফাৎ রয়েছে। বেশি করতে চাই সুন্দর ভাল কাজ। যেটাই হোক সেটা। পরিচালনার ক্ষেত্রে বলব, যেটা হয় আমি তো নিজে আমার ছবিগুলো লিখিও, লেখার সময় থেকে আমি একটা অডিয়ো ভিজ্যুয়াল দেখতে পাচ্ছি, যে আমি কী ল্যান্ডস্কেপ, সাউন্ডস্কেপ দিচ্ছি আমার দর্শককে। সেটা যখন আম,ই স্ক্রিপ্ট লেভেলে এডিট হয় সেটাকে থ্রু প্রোডাকশন ডিজাইন,থ্রু দ্য কালার প্যালেট, থ্রু দ্য ক্যামেরা লেন্স এবং তার সঙ্গে আবহ বিশাল একটা জায়গা-সেটা যে তৈরী করতে পারার একটা তৃপ্তি যেটা ভেবেছিলাম সেটা দেখাতে পাচ্ছি এই যে ফুল ডেলিভার করা একটা বাচ্চাকে সেটার একটা আনন্দ, সাংঘাতিক স্যাটিসফ্যাকশন। আর অভিনয়তে আমি অনেকটা টেনশনমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারি, কারণ বাকি জিনিসগুলো আমাকে ভাবতে হচ্ছে না। আমি কেবল আমার চরিত্র নিয়ে ভাবছি-সেইটা হয়।

জয়া আহসানঃ আমি যতদূর জানি, চূর্ণীদি বোধহয় ছবি করবার সময়, যেটা আমি শুনেছি সবার থেকে যিনি কালার প্যালটটাকেও দেখেন খুব কম মানুষই এইরকম ডিটেলিং দেখেন। ওঁর ছবির প্রতিটি সিনের কালার প্যেলেট কী হবে সেগুলো নাকি একদম ওঁর মাথায় থাকে। ইভেন টয়লেটের প্রবস কী কালার হবে সেটাও।

প্রঃ জয়া, তুমি অসাধারণ একজন অভিনেত্রী, দুরন্ত সব রোলে দেখেছি। এখনও কোন চরিত্রের অপেখায় থাকো তুমি, কেমন চরিত্র প্রত্যাশা করো?

জয়া আহসানঃ স্পোর্টস বিষয়ে, বা খুব টাফ কোনও চরিত্র। আমায় স্ক্রিনে লোকে দেখে ভাবে আমি খুব নরমসরম, কিন্তু মোটেই তেমন নয়। আমার অ্যাকশন খুব ভাল লাগে ওরকম টাফ চরিত্র করতে চাই। কমেডিও করতে চাই। এখানে হয়ত করিনি, তবে বাংলাদেশে অনেক করেছি। ভিলেন চরিত্র করতে চাই। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...