‘নীহারিকা’ পরিচালকের চোখে "লক্ষ্মীমন্ত" কে, অনুরাধা না অনিন্দ্য?

পরিচালকের চোখে "লক্ষ্মীমন্ত" কে? অনুরাধা না অনিন্দ্য?  শুটিং-এর মাঝে ভুলে যেতেন ডিরেক্টর! কীভাবে  নাজেহাল হতেন তাঁরা? ‘টলিকথা’য় মজার আড্ডায় আজ সঙ্গী টিম 'নীহারিকা'(Niharika In the Mist)- অনুরাধা মুখোপাধ্যায়  (Anuradha Mukherjee, Actress), অনিন্দ্য সেনগুপ্ত (Anindya Sengupta, Actor) এবং ছবির পরিচালক  ইন্দ্রাশিস আচার্য (Indrasis Acharya, Director)। তাঁদের মুখে শুনুন সিনে-সেটের  গপ্পো

প্র: রেজাল্ট বেরনোর পর কেমন ফিল হচ্ছে?

ইন্দ্রাশিস : পথ চলতে চলতে বন্ধু হয়ে যায়। আড়াই তিন বছর ধরে চলতে চলতে সেগুলো আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকে যায়। যতক্ষণ না সেগুলোকে বের করতে পারছি আর একটা যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। যেটার জেদের বসে আমরা ছবিটা শেষ করেছি। আমার কাছে বিরাট পাওনা। যুদ্ধ জয়ের পর যে তৃপ্তি যে আমি জিতে গেছি বা রাজত্ব করছি সেই অনুভূতিটা হচ্ছে।

অনিন্দ্য: ইন্দ্রাশিষদার এই ছবির সঙ্গে যাত্রাটা অনেক লম্বা সেই তুলনায় আমারটা কিছুই না বলা যেতে পারে। তাও আমার প্রায় দু বছর হয়ে গেল ছবিটার সঙ্গে। প্রাথমিকভাবে যখন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি করা হয় তখন খুব বড় হার্ডল থাকে দর্শক পর্যন্ত পৌঁছানো। আজকে যে আমরা সেটা করে ফেলতে পেরেছি সেটাই একটা জয়ের অনুভূতি দিচ্ছে। তারপর তো শেষ কথা দর্শক বলবে।

অনুরাধা: এটা না অনেকটা বাড়ি বানানোর মতো। প্রথমে একটা জমি কেনে। তারপর ইনভেস্ট করে। লোকজন আসে। বাড়িটা তৈরি হয়। ফাইনালি মানুষ ভিতরে ঢোকে। এতদিন ধরে আমরা ইনভেস্ট করেছি, বাড়ি তৈরি হয়েছে। এখন রিলিজ হওয়ার পর মনে হচ্ছে লোক ঢুকছে। এতদিন ধরে আমরা বাড়িটা তৈরি করেছি।  নীহারিকা তো আফটার অল একটা বাড়ির গল্প। ওই ফিলিংটা হচ্ছে। কতজন লোক ঢুকবে, ইন্টিরিয়ার কেমন লাগবে সেটা তো দর্শকরা বলবে। কিন্তু আমাদেরটা সাকসেসফুল।

প্র: এরকম একটা ছবি করার ভাবনা কীভাবে এল?

ইন্দ্রাশিস :  ২০১৩ সালে উপন্যাসটা যখন পড়ি তখন নানা রকম মুভমেন্ট চলছিল। ভালবাসার বিপ্লব নানা দেশে নানাভাবে প্রকট হচ্ছিল আস্তে আস্তে। তখন গল্পটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছিল। যদিও ইনসেস্টেন্ট ব্যাপারটাকে আমরা অতটা সিরিয়াসলি অতটা দেখিনি। কিন্তু আমার একটা জিনিস মনে হয়েছিল যে একজন মানুষ তার নিজস্ব আইডেন্টিটির বাইরে যদি ভালবাসার আইডেন্টিটি যদি আলাদা হয় সেটা ভালোবাসানোর দায় কেন সে নেবে যদি সেটা অন্য দিকে বইবে তাহলে সেটা একটা আলাদা ইন্ডিপেন্ডেন্ট আইডেন্টিটি। As a humanbeing im an independent আইডেন্টিটি। ভালবাসা কোন দিকে যাবে সেটাকে ধরে রাখার আমি কে।  হাজার বছর ধরে একটা ট্রাডিশন চলে আসছে এই হয় এই হতে পারে নিয়ে। সেই প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন থেকেই সঞ্জীব বাবুর ভয় উপন্যাসটা লেখা। সেখান থেকে মাথায় আসে উপন্যাসটা নিয়ে কাজ করার। দ্বিতীয় হচ্ছে পরিবেশ আর জায়গা। একটা মোরাম বিছানো রাস্তা যেখানে বিষন্ন সন্ধ্যে নামে। বাড়ির সামনে জঙ্গল থাকে। জঙ্গল পেরিয়ে দীঘি। স্বাধীনভাবে চলা ফেরা করতে পারি। এরকম একটা জায়গায় প্রেমের পরিসর কী? কতটা প্রভাব ফেলে। সেটা পুরোটাই দীপার ওপর একটা গল্প। দীপার প্রেম, ভালবাসা, জেন্ডার আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, সমস্ত কিছু ডিপেন্ড করে এইরকম একটা জায়গা, তার চারপাশের লোকজন মাফিক। এরকম বিষয়ের ওপর ছবি খুব একটা দেখিনি। আমার কাছে তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবি এটা।

প্র: অনুরাধা, অনেক দিন ধরে এই ছবিতে কাজ করেছ, চরিত্রটার সঙ্গে কতটা নিজেকে মিল পেয়েছ?

অনুরাধা: এই ছবিটার সঙ্গে কানেকশন অনেক বছর। একটা চরিত্রের সঙ্গে অনেকদিন থাকলে  একটা ইমপ্যাক্ট চলে যায়। অনেক সময় এরকম হয়েছে কোনও সিন্ শুট করতে করতে নিজের কোনও অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যায়। নীহারিকায় যে সময়ের কথা বলা হয়েছে সেই সময় আমি জন্মেছি। পরিবর্তনগুলো দেখেছি। ছোটবেলায় খুব বই পড়তাম। শরৎ, বঙ্কিম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলো, সেখানে 'হাওয়াবদল' কথাটার সঙ্গে খুব ছোটবেলা থেকে পরিচিত ছিলাম। যখন পারফর্ম করতে গেলাম ইন্দ্রাশিস দা পুরোটা বোঝালো শিমুলতলায় গেছি তখন শুধুমাত্র অভিনেত্রী বলে নয়, মানুষ হিসেবেও ব্যাপারটা খুব ভিতরে গেছে। ওটা দীপার আড়ালে কোথাও একাত্ম হয়ে গেছে। শিমুলতলায় গেলে যে কোনও মানুষের এই চেঞ্জটা হবে। জায়গাটার প্রভাব পড়ে। প্লাস আমি এতবার গেছি। জায়গাটা অনেক বেশি দীপা।

প্র: অনিন্দ্য, তোমার তো অনুরাধার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ কেমন লাগল?

অনিন্দ্য: আমার যতদিনের অভিনয় জীবন সেখানে যাদের সহ অভিনেতা অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছি সেদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান। তারা অত্যন্ত ভাল।  অনুরাধার সঙ্গে সেটে পারফর্ম করা, তার আগে কোনও সিন্ আলোচনা করছি যে কীভাবে এপ্রোচ করব, কোন জায়গা ছাড়ব কোন জায়গা ধরব এটায় কোনও সন্দেহ নেই যে ও সাংঘাতিক রকম প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে। আমার সৌভাগ্য যে ও আমার কো এক্টর হয়েছে।

প্র: ইন্দ্রাশিসদা, ছবিতে তিনটে ঋতু নিয়ে কাজ করা হয়েছে সেটায় আরও বেশি করে ছবিটার গুরুত্ব দর্শকদের কাছে?

এমনি ছবি করতে গেলে ১৪-১৫ দিনে শেষ করে দিতে হয় তাতে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত সব একসঙ্গে দেখায়। খুব একটা ম্যাটার করে না আমাদের কাছে। এই ছবিটায় এভাবে করার সুযোগ পেয়েছি। সেই সুযোগ এসেছিল আমাদের দুর্দাশার জন্য। ফান্ড ক্রাইসিস চলছিল। যখন যে ফান্ড পাচ্ছিলাম সেইভাবেই শুট চলছিল। যখন সব হয়ে গেল তখন পজেটিভলি নিয়েছিলাম যে ঋতুতে ঋতুতে শুটিং করতে গেছে। এটা একটা অন্য রকম মূর্ছনা তৈরি করেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...