অপ্সরার আড্ডায় ফেলুদার 'তোপসে'

ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন আর বর্তমান দুই মহাতারকা তাঁর ঘরের লোক। পুরো পরিবার ফুটবল পরিবার। যে পরিবারের শ্বাসে-প্রশ্বাসে-শিরায়-ধমনীতে বইছে ফুটবলপ্রেম। কিন্তু তাঁর প্রেমের দুনিয়াটা বাড়ির থেকে এক্কেবারে আলাদা। তাঁর শিরায় বইছে সিনেমা। সেখানেই তাঁর দুনিয়াদারি। তিনি কখনও ফেলুদার 'তোপসে', কখনও'ইতি  মৃণালিনী'র ‘অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়’। সুব্রত ভট্টাচার্যর পুত্র, ভারতীয় ফুটবল টিমের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর শ্যালক, ফুটবলার হিসেবে নয় অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। জিয়ো বাংলার আড্ডা উইথ অপ্সরা অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের এমনই নানা অজানা গল্পের সন্ধান দিলেন অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য।

প্র: সুব্রত ভট্টাচার্য আপনার বাবা। এত স্ট্রিক্ট ফ্যামিলিতে বড় হয়েছেন আপনি। আপনার ছোটবেলাটা কেমন কেটেছে?
সাহেব ভট্টাচার্য: খুবই মিডিল ক্লাস ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি আমরা। একটা সাতশো স্কোয়েরফিটের ফ্ল্যাটে আমরা থাকতাম। মা, বাবা, আমি , বোন, দাদু, ঠাকুমাকে নিয়ে ছিল আমাদের পরিবার। প্রচুর টাকা-পয়সা না থাকলেও কিছু এথিকস ও মরাল নিয়ে আমারা বড় হয়েছি। সেগুলোই এখন কাজে লাগাচ্ছি।

প্র: আপনার সঙ্গে আপনার বোন সোনমের সম্পর্ক কেমন ছিল?
সাহেব ভট্টাচার্য: মেম ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড ডানপিটে। আমি খুবই শান্তশিষ্ট ছিলাম। আমার থেকে একেবারে আলাদা। ছোটবেলা থেকেই আমাদের কাছে বন্ধুর মতো ছিল। এখন আবার মায়ের মতো আমাকে সাজেশন দেয়।

প্র: আপনার ছোটবেলায় খেলাধূলার কতটা প্রভাব ছিল, বাবা একজন জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন।
সাহেব ভট্টাচার্য: আমাকে অনেকেই এই প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করেন। আমি সকলকে একটা কথাই বলি যে ছোটবেলা থেকেই অনেক বুদ্ধি ছিল তো তাই ফুটবলের দিকে যাইনি। বাবা সুব্রত ভট্টাচার্য আর এখন সুনীল ছেত্রী জামাইবাবু। তাই ফুটবলার হওয়াটা সত্যিই খুব কষ্টের ছিল। আসলে নব্বইয়ের দশকে ফুটবল মাঠের পরিবেশটা খুব খারাপ ছিল। দর্শকরাও অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। আবেগের থেকে বেশি হিংস্রতা ছিল। তাই মাঠে গিয়ে খেলা দেখা বারণ ছিল আমাদের। কিন্তু ক্রিকেট দেখতে যাওয়ায় বারণ ছিল না। এই জন্য ফুটবল নিয়ে ছোটবেলা থেকেই টানটা তৈরি হয়নি। এক সময় ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু ফুটবল খেলার ইচ্ছা বা সুযোগ কোনওটাই আমার কাছে আসেনি।

প্র: আপনি শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
সাহেব ভট্টাচার্য: চিন্ময় রায় একটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করেছিলেন যার নাম ছিল 'ভালোয় ভালোয়'। সেই টেলিফিল্মে আমি আর আমার বোন অভিনয় করেছিলাম। সেখানে আমি তরুণ কুমারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আর সেই টেলিফিল্মের কাজ করার সুবাদে আমি অঞ্জন চৌধুরীর 'সংঘর্ষ' ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রসেনজিৎ, রঞ্জিত মল্লিক ও তাপস পালের মতো জনপ্রিয় অভিনেতারা সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

প্র: 'তোপসে'র চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সাহেব ভট্টাচার্য:  তখন আমি খুব এক্সসাইটেড ছিলাম। কিন্তু এখন ভাবি যে আমার হয়তো নার্ভাস হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমি ভাগ্যবান যে প্রথম ছবিটা দর্শক পছন্দও করেছিল। তখন সন্দীপ স্যার আমাকে চরিত্র নিয়ে আলাদা কিছু করতে বলেননি। তিনি শুধু স্ক্রিপ্টটা দিয়েছিলেন। চরিত্রটা আমাকে নিজের মতো করে অভিনয় করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।

প্র: 'তোপসে' চরিত্রে অভিনয় করার পর আপনার কখনও মনে হয়েনি যে টাইপ কাস্ট হয়ে যেতে পারেন?
সাহেব ভট্টাচার্য: আসলে অনেক অভিনেতার মনে হতে পারে যে আমি 'তোপসে'র চরিত্র করেছি তাই সব ধরনের চরিত্রে আমি অভিনয় করব না। কিন্তু এই ব্যাপারটা আমার কেরিয়ারের শুরুতে ছিল। তাই 'তোপসে'র চরিত্রে অভিনয় করার পর আমি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি।

প্র: আপনার সঙ্গে সুনীল ছেত্রীর কেমন সম্পর্ক? শুনেছি, প্রথম দিকে সোনম আর সুনীলের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে আপনার ভূমিকা ছিল। এই নিয়ে কী বলবেন আপনি?
সাহেব ভট্টাচার্য: আমি আগেই বলেছি যে আমার বোন আর আমি ভাল বন্ধু ছিলাম। আমাকে মেম সব কিছুই জানাত। একাবার আমাকে নিয়ে একটা শপিং মলে সুনীলের সঙ্গে দেখা করতে যায়। তারপর মেম ওখানে সুনীলের সঙ্গে দেখা করত আর আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতাম। হঠাৎ একদিন সকাল সকাল সুনীল মেমের সঙ্গে বিয়ের কথা বলতে এসেছিল আমাদের বাড়িতে। বাবা কথাটা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল। তারপর বাবা বলেছিলেন মা আর আমার সঙ্গে কথা বলে নিতে‌।

প্র: আপনার আপকামিং প্রজেক্টগুলো কী কী?
সাহেব ভট্টাচার্য: গত বছর শুট করেছিলাম 'সিন্ডিকেটের জন্য'। সেটা কমপ্লিট হয়ে আছে। এছাড়াও রিসেন্টলি লন্ডনে দুটো ছবির শুটিং শেষ করে এলাম। অন্যদিকে আমি দুটো দলে নাটক করছি।

প্র: আপনি কি ফুডি?
সাহেব ভট্টাচার্য: হ্যাঁ।

প্র: আপনার প্রিয় ক্যুইজিন কী?
সাহেব ভট্টাচার্য: বিরিয়ানি।

প্র: ফেভারিট পাস টাইম কী?
সাহেব ভট্টাচার্য: পাস টাইমে গান শুনি, নাটকের রিহার্সাল করি, সিনেমা দেখি।

প্র: আপনার প্রিয় খেলা কী?
সাহেব ভট্টাচার্য: ফুটবল।

প্র: টি অর অ্যা কফি পার্সন?
সাহেব ভট্টাচার্য: কফি পার্সন।

প্র: রেনি পার্সন না সানি পার্সন?
সাহেব ভট্টাচার্য: সানি।

প্র: লং ওয়াক না লং ড্রাইভ?
সাহেব ভট্টাচার্য: লং ড্রাইভ।

প্র: ফিল্মস, সিরিয়ালস না ওটিটি?
সাহেব ভট্টাচার্য: তিনটেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...