ছোটবেলায় শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলেন ঋতুপর্ণা

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নামটুকুই যথেষ্ট। কাউকে বলে দিতে হয় না তিনি কে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আসলে এক অধ্যায়ের নাম। বহমান সময়ের ধারা। ‘শ্বেত পাথরের থালা’ থেকে ‘বেলাশুরু’ যতটা পথ ততটাই লড়াই আর চ্যালেঞ্জের কাহিনি। নবাগতা থেকে বাংলা ছবির স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন নিজের জেদ আর প্রতিভার জোরে। নিজেকে বারবার ভেঙেছেন, গড়েছেন, শিখেছেন। তার মধ্যে দিয়েই আজ তিনি হয়ে উঠেছেন বহু মানুষের ভরসা। সেই জার্নির গল্পই এবার জিয়ো বাংলার 'আড্ডা উইথ অপ্সরা' অনুষ্ঠানে শেয়ার করলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

প্র: আপনার পরিবারের কেউ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তাই ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে কতটা স্ট্রাগেল করতে হয়েছিল?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: আমার মনে হয় স্ট্রাগল ছাড়া একটা সাকসেসটা যতটা এনজয় করা যায়, স্ট্রাগেল না করে সেই সাকসেসটা বেশি এনজয় করা যায় না। আমার মা খুব ভাল লিখতেন, মাসি থিয়েটার করতেন, আমার পিসোমশাই কয়ার করতেন। সবাই কালচারালি কোন না কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এটা ঠিক যে, ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কাজ করেননি। আমাদের পরিবারের সকলকেই পড়াশোনার দিকে বেশি নজর দিতে বলা হত। কারণ আমার কাকু-কাকিমা ডাক্তার ছিলেন। বাবা 'ফাইজার'-এ চাকরি করতেন। কিন্তু আমার ভাগ্যে ছিল হয়ত। আমার ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার। আমি ছোটবেলায় বাড়িতে টিচার সেজে পড়াতাম। বাড়ির দেওয়ালকেই ব্ল্যাক বোর্ড ভেবে প্যাস্টেল দিয়ে আমি রঙ করে দিতাম। তারপর কলেজে পড়ার সময় নাচের জন্য আমার খুব নাম হয়েছিল। তাই জন্যে আমার এক বান্ধবী ছিলেন যার দাদা আমাকে 'সাদা পায়রা' বলে একটা প্রজেক্টে কাজ করতে বলেন। তারপরে প্রভাতদা আমাকে 'শ্বেত পাথরের থালার' জন্যে সিলেক্ট করলেন। ছবিটা খুব হিট হয়েছিল। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল। যদিও প্রথমে বাবা চাননি আমি অভিনয় করি। কিন্তু প্রযোজকদের ফোন আসা শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন থেকে।

প্র: 'শ্বেত পাথরের থালা'র  তিতলি থেকে 'বেলাশেষ'-এর মিলি। এই জার্নিটা কেমন ছিল?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: এটা খুবই একটা ইন্টারেস্টিং জার্নি ছিল। পুরো জার্নিটা একটা লার্নিং এক্সপিরিয়েন্স। তাই জন্য আমি খুব নিজেকে ব্লেসড মনে করি। আজ বহু প্রযোজক আমার উপর ভরসা করে। আমাকে ছবিতে নেওয়া মানে আমার উপরে একটা দায়িত্ব চলে আসে। তাছাড়াও বলিউডে ও সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি আমি। তাই যে এতো কাজের মধ্যে থাকতে পেরে আমার জীবনটা আরও ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠেছে।

প্র: 'পারমিতার একদিন' ছবিতে অভিনয়ের জন্যে আপনার অনেক প্রশংসা করা হয়েছে। সেই ছবির এক্সপিরিয়েন্সটা কেমন ছিল?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: আমি কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ঐ ছবিটি করেছিলাম। কারণ তখনও আমার বিয়ে হয়নি, আমি মা হইনি। তাই আমাকে অনেক বেশি খাটতে হয়েছিল। সোহাগ সেন আমাকে ওয়ার্কশপ করিয়েছিলেন। এছাড়াও অপর্ণা সেনের মতো পরিচালনা, সবাই দারুন অভিনয় করেছিলেন।

প্র: আপনার কাম ব্যাক ছবি ছিল 'প্রাক্তন'। সেই এক্সপিরিয়েন্সটা কেমন ছিল?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: 'প্রাক্তন' আমার জন্যে একটা ভালো এক্সপিরিয়েন্স ছিল। আমি আর প্রসেনজিৎ প্রায় ১৫ বছর পর এক সঙ্গে কাজ করেছিলাম। কিন্তু তখনও যে মানুষ আমাদের জুটিকে মনে রেখে এটা ভাবাও যায় না। আমি সিনেমা হলে গিয়ে দেখে ছিলাম বহু মানুষ আমাদের ছবিটা দেখার জন্যে একটা আলাদা উৎসাহ দেখিয়েছিল। তারপর 'দৃষ্টিকোণ' করেছি সেটাও হিট হয়েছে।

প্র: আপনার সঙ্গে সঞ্জয়দার দেখা কীভাবে হয়েছিল?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: আমাদের দেখা হয়েছিল একটা ড্রইং স্কুলে। আমার বর তখন ক্লাস টেনে পড়ে আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। তখন আমি খুব ভালো নাচতাম তবে সঞ্জয় খুব ভালো সরোদ বাজাতে পারে। প্রথম থেকেই আমার ডান্সকে খুব অ্যাপরিসিয়েট করত। তবে আমার বাবার একটাই ক্রাইটেরিয়া পড়াশুনা জানতেই হবে। ও তো হাইলি এডুকেটেড। তাই বাবা ওকে খুব পছন্দ করত। তারপর আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাকে বহু বার আমেরিকার থেকে ইন্ডিয়া আর ইন্ডিয়া থেকে আমেরিকায় আসা যাওয়া করতে হয়েছে। তারপর আমার ছেলের জন্মের পর আমরা সিঙ্গাপুরে সিফট করে যাই। এখন আমরা সিঙ্গাপুরেই থাকি।

প্র: আপনি ফিট থাকার জন্য কী রুটিন ফলো করেন?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: খুব সহজ রুটিন। আমি সেভাবে জিম করি না। কিন্তু হেলদি ফুড খাই। এছাড়াও যোগ ব্যায়াম করছি।

প্র: আপনি জাঙ্ক ফুড খান?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: না খুব একটা খাই না। কিন্তু মাঝে মাঝে খাওয়া হয়ে যায়। বিশেষ করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইটা আমার ফেভারিট।

প্র: চা না কফি?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: কোনটাই খেতাম না। কিন্তু এখন আমি টি বেশি প্রেফার করি। গ্ৰিন টি বা হার্বাল টি বেশি প্রেফার করি।

প্র: আর্লি রাইজার না নাইট আউল?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: আমি ঠিক লেট রাইজার নই। কিন্তু লেট নাইট পর্যন্ত কাজ করতে পারি।

প্র: লং ওয়াক না লং ড্রাইভ?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: লং ওয়াক।

প্র: ওটিটি না ফিচার ফিল্ম?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: সব সময় ফিচার ফিল্ম। কারণ ফিচার ফিল্ম আমাকে এত বড় প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে। তবে ওটিটির খুব ভালো জায়গা তৈরি করেছে। আমি দুটো মিডিয়ামকেই রেসপেক্ট করি।

প্র: আপনি কতক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন?

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: আমি খুব অ্যাগ্ৰেসিভ সোশ্যাল মিডিয়া পার্সন না। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাল কিছু থাকলে সেটা সব সময় অ্যাকটিভলি করা উচিত। তবে মাঝে মাঝে ট্রোল করা হয় যা দেখে সবারই খারাপ লাগে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...