অপ্সরার আড্ডায় টিম 'লক্ষ্মীছেলে'

কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই করছে সারা পৃথিবী। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এমনই এক গল্প বড় পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ছবির নাম 'লক্ষ্মীছেলে'। বরাবরই নিজের ছবির মধ্যে দিয়ে সমাজ সচেতনের বার্তা দিয়ে এসেছেন পরিচালক। এবারও সেই ধারা অব্যাহত। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে সেই ছবি। এই ছবি নিয়েই কথা বলতে জিয়ো বাংলার আড্ডা উইথ অপ্সরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, উজান গঙ্গোপাধ্যায়, পূরব শীল আচার্য্য ও ঋত্বিকা পাল।

প্র: কৌশিকদা, প্রত্যেকটা ছবিতে কোনও না কোনও সোশ্যাল ম্যাসেজ থাকে। 'লক্ষ্মীছেলে'র মাধ্যমে আপনি কী মেসেজ দিতে চলেছেন?

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: যেটা বলতে চেয়েছি সেটা ছবি দেখার পর আরও ক্লিয়ার হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্ম মানবিকতার ধর্ম। 'লক্ষ্মীছেলে' এমন একটা ছবি যেটা পৃথিবীর যে কোনও জাতি ধর্ম সমস্ত মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। কুসংস্কার সারা পৃথিবীতে রয়েছে। তাই সেটাকে অ্যাড্রেস করা একটা খুব মানবিক গল্পের মধ্যে দিয়ে সেটাই এই ছবি থেকে বেরিয়ে আসবে।

প্র: চূর্ণীদি, আপনার যে চরিত্র ডাঃ মিতালী সেনের সম্পর্কে কিছু বলুন।

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়: 'লক্ষ্মীছেলে'র গল্পটা তিনজন ইয়ং ডাক্তারের গল্প। তারা কীভাবে সমাজ সংস্কারের কাজ করে সেটা রয়েছে ছবিতে। মানুষ যখন খুব স্ট্রংলী কিছু বিশ্বাস করে তখন তার বিরুদ্ধাচরণ করাটা সহজ নয়। তাই আমি ছবিতে ঐ তিনজনের মেন্টরের ভূমিকায় কাজ করছি।

প্র: উজানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: এটা প্রথম নয় এর আগে ছোটবেলায় আমার একটা টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিল উজান। অপরাজিতা আঢ্য ওর মা হয়েছিল। সেখানে অপরাজিতার হাসি শুনে উজান হঠাৎ করে কেঁদে উঠেছিল। তাই জন্য শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর চূর্ণীকে ফোন করে পুরো ঘটনাটা বলার পর ও উজানকে ফোনেই বুঝিয়ে ছিল। তারপর শ্যুটিং শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার আমি একজন ম্যাচুওর ছেলেকে পেয়েছিলাম যে ২১ বছর অপেক্ষা করেছে আমার ছবিতে অভিনয় করার জন্য। ওর বন্ধুরা কাজ করে ফেলেছে। শিবু-নন্দিনী আমাকে বলেছিল এই ছবিটাতে ওকে দিয়ে অভিনয় করানোর কথা।

প্র: চূর্ণীদি আপনার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়: আমার পূরবের দুষ্টুমিটা সব সময় মনে পড়ে। ও সকলকে খুব ভালো মিমিক্রি করে দেখাতে পারে। খুব ট্যালেন্টড ছেলেটা। গান গাইতেও পারে ভালো। এছাড়াও ছবিতে যে মেলাটা দেখানো হয়েছিল সেটা আমাদের টেকনিশিয়ানরাই বানিয়েছিল। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ আমাদের সঙ্গে শ্যুটিং করতেন। যা সত্যিই ভোলার নয়।

প্র: 'লক্ষ্মীছেলে' ছবিতে যে মানব মাহাত্ম্যের কথা বলা হয়েছে সেটা নিয়ে একটু বলুন?

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: মধ্যযুগে দেব-দেবীর থাকা সত্ত্বেও মানুষকে নিয়েই লেখা শুরু করেছিলেন সাহিত্যিকরা। আমরা সবাই সে গল্পগুলো জানি। আমরা দেখেছি কীভাবে দেব-দেবীরাও মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছে। আসলে ঈশ্বর মানুষের মধ্যেই রয়েছে। আমরা কখনও ঈশ্বরকে দেখিনি কিন্তু দেবতুল্য মানুষ দেখেছি। দেবীর মতো নারী দেখেছি। তাই আজকের দিনের 'মঙ্গলকাব্য' হল 'লক্ষ্মীছেলে'।

প্র: উজান তুমি 'লক্ষ্মীছেলে' ছবিতে আমিরের চরিত্রে অভিনয় করেছ। কী বলবে তোমার চরিত্র নিয়ে?

উজান: আমার থেকে অনেকটা আলাদা। কিন্তু কিছু কিছু মিল রয়েছে। আমির যেটা চায় সেটার জন্য খাটতে পারে সে। আমির নিজে খুব ডিটারমাইন্ড। আমির আমার থেকে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে পারে।

প্র: ঋত্বিকা এটা তোমার তৃতীয় ছবি। এই ফিল্মের চরিত্রটা তোমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ঋত্বিকা পাল: আমরা তিন বছর আগে ছবিটা করেছি। ছবির যখন শ্যুটিং শুরু হয়েছিল তখন আমরা কলেজে পড়াশোনা করতাম। সেই কারণে আমাদের বয়স নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু ছবির ‘গায়েত্রী’ চরিত্রটির সঙ্গে আমার কোনও মিল ছিল না। গায়েত্রী অনেক কিছু করে যেগুলো আমি নিজে কখনও করবো না। অন্য মানুষের মতো ভাবনা, চিন্তা করতে সত্যিই আমাদের খুব ভালো লাগে। তাই হয়তো আমরা অভিনয়টা করি।

প্র: ছবিতে তোমার চরিত্রটা সম্পর্কে বলো।

পূরব: আমার ওদের থেকে এক্সপিরিয়েন্সটি একটু আলাদা ছিল। পুরোটা এক না হলেও অনেক মিল রয়েছে আমার সঙ্গে। ছবিতে শিবনাথ কিছু কিছু জায়গায় ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। কিন্তু যখন বন্ধুদের কোনও সমস্যা হচ্ছে তখন সে সব সময় পাশে থাকছে। হয়তো সত্যিকারের জীবনেও সে এরকম।

প্র: উজান প্রথমবার তুমি বাবার পরিচালনায় অভিনয় করছ। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?

উজান: যখন ছবির শ্যুটিং চলছিল তখন আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করছিলাম ইংরেজি নিয়ে। তাই একটু চাপে ছিলাম। বিশেষ করে সংলাপ মুখস্থ করার সময় হচ্ছিল না আমার। তাই আমার বাবার কাছেও বকা খেতে হয়েছিল। কিন্তু বাবা আমাকে পরে বলেছিল যে তোমার এখন পড়াশোনা নিয়ে অনেক চাপ রয়েছে।

প্র: প্যাকআপের পর অনেক ফানি ঘটনা ঘটেছে। সেই নিয়ে কিছু বলো?

পূরব: আমার, ইন্দ্রাশীষদার আর ঋত্বিকা শ্যুটিং এক সঙ্গে শেষ হত। আমরা এক সঙ্গে গাড়িতে করে ফিরতাম। সেটা দারুণ এক্সপিরিয়েন্স ছিল। এছাড়াও আমরা হোটেলে ফিরে এসে গল্প করতাম। গ্ৰামের মেলাতে ঘুরতে যেতাম এক সঙ্গে।

প্র: উজান মায়ের সঙ্গে এক ছবিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

উজান: মা আমার কাছে একজন শিক্ষক। আমার মতো ওরাও খুব ভালোবাসে মাকে। শ্যুটিংয়ের সময় মা আমাকে অনেক সময় গাইড করেছে।

প্র: উজানের মায়ের সঙ্গে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

পূরব: কখনও ভাবিনি এত বড় মাপের একজন অভিনেত্রী সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পাবো। আমি ছোটবেলা থেকেই ওঁর অভিনয় দেখে বড় হয়েছি।

ঋত্বিকা পাল: আমরা কোনও শট দেওয়ার সময় যখন খুব নার্ভাস হয়ে যেতাম তখন লাইটের পেছনে বসে আমাদের দেখবে। আর শ্যুটিং শেষ হওয়ার পর আমাদের বলতেন খুব ভালো হয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...