'ভটভটি' নিয়ে আড্ডায় বিবৃতি ও ঋষভ

অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আসছে 'ভটভটি' । রূপকথার গল্পের মৎসকন্যাকে পর্দায় দেখাতে চলেছেন পরিচালক। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেতা ঋষভ বসু ও অভিনেত্রী বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়। আগামী ১১ আগস্ট মুক্তি পাবে এই ছবি তার আগে জিয়ো বাংলার আড্ডা উইথ অপ্সরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন ঋষভ ও বিবৃতি।

প্র: 'ভটভটি' ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় দেখা গিয়েছে তোমাদের। কেমন ছিল তোমাদের অভিজ্ঞতা?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: ছবির প্লটটা আমরা খুব বেশি বলতে পারবো না কিন্তু 'ভটভটি' হল বিশ্বাসের গল্প। এখানে আমি একটি মৎসকন্যার চরিত্রে অভিনয় করছি। ছবিতে একটি ছেলের সঙ্গে তার দেখা হয়। তারপর তাদের সম্পর্ক কোন দিকে এগোবে সেটাই দেখানো হয়েছে ছবিতে।

ঋষভ বসু: বাংলা সাহিত্যে বার বার এই ম্যাজিক বা রূপকথার গল্প ফিরে এসেছে। সত্যজিৎ রায়ের 'গুপি বাঘার' গল্পেও কোথাও রূপকথা বা ম্যাজিক লুকিয়ে রয়েছে। তাই বিশ্বাস বিশ্বাসটা রাখতে হবে। সুতরাং দর্শক বন্ধুরা যদি বিশ্বাস করেন জলপরী আছে। তাহলে অবশ্যই তারা দেখতে পাবে তাকে।

প্র: এই ছবিতে তোমরা তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছ। কতটা নিজেদের মতো করে কাজ করবার সুযোগ পেয়েছ?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: আমরা প্রায় দু-আড়াই মাস রিহার্সাল করেছি। কিন্তু কখনও আমাদের বলা হয়ে যে এভাবেই তোমাদের কাজ করতে হবে। তথাগতদা আমাদের বলেছিলেন যে এটা একটি ক্যারেক্টার হিসেবে না ভেবে নিতে।

ঋষভ বসু: তথাগতদা'র সঙ্গে আমার পরিচয় ২০১৭ সালে। এই ছবিতে কাজ করবার জন্যেই তিনি আমাকে ডেকে ছিলেন। একটি বিখ্যাত স্প্যানিশ ছবি নিয়েই আমাদের মধ্যে গল্প হয়েছিল। কোথাও যেন সেই ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে 'ভটভটি'র। তারপর দীর্ঘ দিন রিহার্সাল চলেছে। আমি থিয়েটার করার সময় এভাবে রিহার্সাল করেছি। কিন্তু থিয়েটারের অভিনয় আর ছবি অভিনয়ের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। তবে তথাগতদা আমাদের বলেছিলেন, "থিয়েটারে যেমন ভাবে অভিনয় করো সেভাবে তুমি ছবিতেও অভিনয় করো।" অভিনয় করার জন্যে তিনি আমাদের একটা ফ্রি স্পেস দিয়েছিলেন।

প্র: ছবির প্রমোশন নিয়ে কতটা ব্যস্ত এখন তোমরা?

ঋষভ বসু: খুব এক্সাইটেড। কারণ 'ভটভটি'র শুটিং ২০১৯ সালে হয়েছে। ছবিটার শুট, প্রি-প্রোডাকশন, ডাবিং মিলিয়ে প্রায় একবছর আমরা ছবিটার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই আমার মনে হয় আমার ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে যে ফিলিংস হয়েছে দর্শকদেরও সেই ফিলিংসটা হবে।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: প্রত্যেকে রিলেটও করতে পারবে। কোন না কোন ক্যারেক্টারের সঙ্গে তারা নিজেদের রিলেট করতে পারবে।

প্র: বিবৃতি তোমার কেমন এক্সপিরিয়েন্স ছিল? তুমি নাকি ‘পালিয়ে গিয়েছিলে’ স্ক্রিপ্ট শুনে!

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: আমি যখন স্ক্রিপ্ট পড়েছিলাম তখন আমার মনে হয়েছিল আমি পারবো না ক্যারেক্টারটা প্লে করতে। সেটা আমি ওদের বলেও দিয়েছিলাম। কিন্তু তার দু’একদিন পরেই আমাকে ফোন করা হয়। তারপর আমি অডিশন দিয়েছিলাম। কিন্তু চরিত্রটার সঙ্গে আমার কোন মিল নেই। আমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

প্র: ঋষভ, তুমি কতটা রিলেট করতে পেরেছ তোমার চরিত্রটা?

ঋষভ বসু: যে কোনও চরিত্রে যখন আমি অভিনয় করি তখন নতুন কিছু আবিষ্কার হবে সেই আনন্দটা আমার মধ্যে থাকে। সেটা কারুর খারাপ লাগতে পারে আবার কারুর ভালো লাগতে পারে। কিন্তু নিজের মধ্যে থেকেই কীভাবে চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তোলা যায় সেটাই চেষ্টা করি আমি। তথাগতদা আমাকে বলেছিলেন তুমি একটা শিশুর মতো অভিনয় করার চেষ্টা করো। যেমন একজন শিশু জানে না তাকে কী করতে হবে আমাকেও সেভাবে ভাবতে হবে। ছবিতে আমার চরিত্রটা এরকমই।

প্র: এটা কী তোমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল?

ঋষভ বসু: চ্যালেঞ্জিং তো ছিলই। কারণ দুম করে নিজের বয়সটা কমে গিয়েছে এটা ভাবা আর অভিনয় করা খুব ডিফিক্যাল্ট। তাই আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি এই চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে।

প্র: তোমার জন্য‌ কতটা ডিফিক্যাল্ট ছিল?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: এই ছবি জয় ছিলাম আমি আর বসন্তী ছিল ঋষভ। তবে আমার সংলাপ না থাকায় আমাকে আরও বেটার এক্সপ্রেশান দিতে হয়েছে। কিন্তু আমি খুব এনজয় করেছি।

প্র: অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা রয়েছেন এই ছবিতে। তাদের সঙ্গে কাজ করার এক্সপিরিয়েন্স কেমন?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: আমার মনে আমরা খুব লাকি বলেই এই সুযোগ পেয়েছি।

ঋষভ বসু: এই ছবিতে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেকেরই অভিনয় দেখে আমরা বড় হয়েছি। বিশেষ অনির্বাণ দা'কে কখনও এমন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।

প্র: শুটিংয়ে সময় তোমাদের কী কী ফানি ঘটনা ঘটেছে? সেগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করো?

ঋষভ বসু: 'ভটভটি' শুটিংয়ের ইন্সিডেন্ট নিয়ে লিখতে গেলে মোটামুটি একটা তিন খন্ডের বই হয়ে যাবে। তবে একবার পুরুলিয়ায় শুটিংয়ে সময় একটা নদী পার করে আমাদের যেতে হত। তখন বিবৃতি শাড়ি পরেছিল বলে ওকে সবাই মিলে চ্যাঙদোলা করে তুলে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সেটা খুব ভালো এক্সপেরিয়েন্স ছিল।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: শুটিংয়ের সময় একবার দেবলীনাদি ঋষভের চুল কেটে দিয়ে ছিল।

প্র: ছবিতে তোমাদের লুকটা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। সেটা সম্পর্কে কিছু শেয়ার করো আমাদের।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: এই কাজের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাবো পৌলমীদি ও দেবলীনাদিকে। প্রতিদিন মৎসকন্যার লুকে যখন আমাকে সাজানো হতো তখন দেবলীনাদি আমার মেকআপ করত। তাই আমার মনে হয় যদি দেবলীনাদি না থাকত তাহলে হয়তো লুকটা এরকম হতো না।

ঋষভ বসু: ছবিতে আমাকে যে সব জামাকাপড় পরতে দেখা গিয়েছিল সবই ছেঁড়া ছিল। যদি কোনও জামাকাপড় নতুন লাগে সেগুলোকে আবার ধুলো মাখানো হতো। তাছাড়াও কে কোন জামাকাপড় পরবে সেটার জন্য মিটিং হয়েছে। সবাই ইনভলভড ছিল কাজটার সঙ্গে।

প্র: ছবিতে আন্ডার ওয়াটার শুট করতে হয়েছে তোমাদের। তার জন্যে কী ট্রেনিং করতে হয়েছিল?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: আমি আগে সুইমিং পারতাম না। তাই ছবির শুটিং শুরু হওয়ার আগে সুইমিং শিখতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু ঋষভ আগে থেকেই সুইমিং জানত। তবে বম্বেতে আন্ডার ওয়াটার শুটিং করার আগে আমাদের ট্রেনিং করতে হয়েছিল।

ঋষভ বসু: ফেব্রুয়ারী মাসে জলের তলায় অনেকক্ষণ শুট চলেছে আমাদের। এক সময় আমাদের ক্যামেরা ম্যানের হাত ঠান্ডায় ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। তাই গরম জলে অনেকক্ষণ হাত চুবিয়ে রাখতে হয়েছিল। অন্যদিকে আমাকে জলের তলায় অ্যাক্টিং করতে হয়েছিল। তবে আশা করছি কাজটা সত্যিই সকলের খুব ভালো লাগবে।

প্র: ঋষভের স্বপ্ন ছিল আরজে হওয়ার। সেখান থেকে অভিনয় জগতে আসলে কীভাবে?

ঋষভ বসু: হ্যাঁ, আমার ফিল্মে কাজ করার ইচ্ছা কখনও ছিল না। কিন্তু জার্নালিজমের স্টুডেন্ট বলে আমি ক্যামেরার কাজ শেখার ইচ্ছা ছিল। আমার এক পিসতুতো দিদি সিরিয়াল করত। তাই ক্যামেরার কাজ দেখার জন্য আমি শুটিং সেটে যেতাম। সেখানেই একজন আমাকে বলেছিল আমাকে অভিনেতা হিসেবে ভাল মানাবে। তারপর আমার অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা জন্মেছিল। তাই জন্যে থিয়েটার গ্ৰুপ জয়েন করেছিলাম।

প্র: তোমার পরিবারের কেউ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত নয়। তুমি কখন ভাবলে অভিনয় জগতে আসার কথা?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: আমি ঐশ্বর্য্য রাই আর সুস্মীতা সেনকে দেখে আমি মিস ইন্ডিয়া হতে চেয়েছিলাম। আমি ফিল্মজ স্টাডিজ বা মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করিনি। আমি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিলাম। আমার প্রথম বাংলা প্রজেক্ট ছিল 'ব্যোমকেশ গোত্র'।

প্র: ফেভারিট পাস টাইম কী?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: ঘুমানো।

ঋষভ বসু: সিনেমা দেখা।

প্র: মুভিজ না টিভি সিরিজ?

ঋষভ বসু: ফিল্মস।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: ফিচার ফিল্ম।

প্র: টি না কফি?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: কফি।

ঋষভ বসু: কফি।

প্র: রেনি ডে না সানি ডে?

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: সানি ডে।

ঋষভ বসু: সানি ডে।

প্র: লং ড্রাইভ না লং ওয়াক?

ঋষভ বসু: লং ওয়াক।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: লং ওয়াক।

প্র: ইটিং আউট না ইটিং অ্যাট হোম?

ঋষভ বসু: ইটিং আউট।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: ইটিং অ্যাট হোম।

প্র: সোশ্যাল মিডিয়াতেকে কতটা সময় স্পেন্ড করো?

ঋষভ বসু: কাজের জন্য করতে হয়।

বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়: আমি সব সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় অন থাকি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...