সিরিয়াস পাঠকদের কাছে লাইব্রেরী মন্দির সমান। কিন্তু তাঁরা কি জানেন বিশ্বের প্রথম লাইব্রেরির সন্ধান?
বিশ্বের প্রথম লাইব্রেরীটি রয়েছে মরোক্কোয়। নাম আলকারাউইন লাইব্রেরী। আর আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, ভিন্ন সময়ের দুই মহিলা লাইব্রেরীটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন অতপ্রত ভাবে।
৮৫০ শতকে ফতিমা আল ফহেরি, পিতৃবিয়োগের পর লাইব্রেরিটি স্থাপন করেন। সে সময় ‘লাইব্রেরী’ নির্মাণের জন্য যাবতীয় সম্পত্তি দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এই আলকারাউইন লাইব্রেরীটির প্রায় ৫,৬০০টি স্বত্ব আছে, যে গুলি মূলত ১২ শতক আগের। তার মধ্যে ৪০০০টি বিরল হিসেবে গণ্য করা হয়। সেখানে মসজিদ সংযুক্ত একটি স্থান রয়েছে যা উপাসনা ও শিক্ষার প্রসারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। প্রায় ১০০ বছর ধরে গ্রন্থাগারটি বুদ্ধিজীবিদের পড়াশোনা ও মত আদান প্রদানের আখড়া হয়ে উঠেছিল।
অবশেষে, ফের লাইব্রেরীটি সংস্কার করতে এগিয়ে আসেন আরও এক মহিলা। ২০১২-য় আজিজা চাওউনির হাত ধরে প্রত্যাবর্তন ঘটে এই শতাব্দী প্রাচীন লাইব্রেরীটির। সংস্কার প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আনন্দে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মরক্কোর ফেজ-এ অবস্থিত এই প্রাচীন গ্রন্থাগারটির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল আজিজার। প্রপিতামহ ছিলেন আলকারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাঁর শৈশবে, গ্রন্থাগারটি সার্বজনীন ছিল না। বর্তমানে তাঁর এই সংস্কার প্রকল্পের দরুন সকলের জন্য অবারিত রয়েছে বিশ্বের প্রথম গ্রন্থাগারের দ্বার।
.jpg?1564575543832)
এখন যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন এই শতাব্দী প্রাচীন লাইব্রেরীতে, একদা যা ছিল বুদ্ধিজীবিদের জ্ঞানের শাখা। শুধু তাই নয়, গ্রন্থের পাশাপাশি লাইব্রেরীতে পান্ডুলিপি সহ অন্যান্য মূল্যবান বস্তুও যত্ন সহকারে সংরক্ষিত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে আজিজা বলেছেন, প্রকল্পটি শুরু করার সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন কারণ এটা তাঁর কাছে বিরাট ব্যাপার ছিল যে, লাইব্রেরীটির আবিষ্কর্তা ছিলেন একজন মহিলা, আর তার কয়েক শতক পর একজন মহিলার হাত ধরেই লাইব্রেরীটি পুনরায় সংরক্ষিত হতে চলেছে।
.jpg?1564575559296)
তিনি আরো জানিয়েছেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী প্রকল্প। কারণ, মরোক্কোর মহিলারা সাধারণত এ ধরনের কাজ করেন না। ফতিমার মতো তিনিও সমাজের গতে বাঁধা নিয়ম ও লিঙ্গভিত্তিক ‘ট্যাবু’ ভেঙ্গে দিয়েছেন তাঁর কাজের মাধ্যমে।
বিশ্বের প্রথম লাইব্রেরী তৈরী হওয়ার নেপথ্যে এই দুই মহিলার দুই ভিন্ন অবদান নিঃসন্দেহে পাঠক মহলে অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিশ্ববাসীর কাছে তাঁরা এই বার্তা রাখেন যে, কোনো কাজের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য ঠিক নয়। চাইলেই যে কোনও কাজ করতে পারেন মহিলারা, শুধু তার জন্য সমাজের ঠিক করে দেওয়া বাঁধা ধরা নিয়ম ভেঙে ফেলার দুঃসাহস প্রয়োজন। আর এই দুঃসাহস যোগানোর ক্ষেত্রে অনেকটাই অনুপ্রেরণা জোগাবেন ফতিমা-আজিজা’রা।
In English

