কর্মসংস্কৃতির নতুন ধারায় চিন্তিত মনোবিদরা

করোনা বদলে দিয়েছে সারা পৃথিবীর কাজের ধারা। আগে ওয়ার্ক ফ্রম হোম মানে ছিল ছুটির দিনে ‘এক্সট্রা কাজ’ কিংবা অসুস্থতার দিনগুলোতে বাড়ি থেকেই কাজ করার উপায়। যেখানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হয় না অথচ দিব্যি সময়ের কাজ সময়ে হয়ে যায়। করোনা সেই ব্যবস্থাকেই পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে তুলেছে।

বিশ্বব্যাপি করোনা এবং লকডাউনের জেরে গত কয়েকমাস ধরেই বাড়িই এখন হয়ে উঠেছে মিনি অফিস।

ল্যাপটপ মোবাইলে ঘরের কোণই ব্যস্ততার অফিস কিউবিকল। অনলাইন মিটিং, প্রেজেন্টেশন আর ডেডলাইনের চাপ মিলিয়ে ব্যস্ততাটা একই। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মনোবিদরা।

অফিস সংস্কৃতি ব্যাপারটার আমূল বদল ঘটেছে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে। অফিস মানে কাজের জায়গা। তার সঙ্গে মানুষের মুক্তিরও। কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষ, সহকর্মী, বস তাদের মধ্যে সম্পর্ক মানুষের মধ্যে একধরনের সহজাত সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করত। কিন্তু ওয়ার্ক ফ্রম হোম সেই সম্পর্কগুলো বদলে তো দিয়েছে। এখন অফিসের কাজ করতে করতে ব্রেক নিয়ে রান্না করে আসা বা বাচ্চার অনলাইন ক্লাস কেমন চলছে চোখ বুলিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যস্ত সকলেই। দ্রুত মানিয়ে নিতে হচ্ছে নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে।

কিন্তু এই মানিয়ে নেওয়া সব সময় মধুর হচ্ছে না। অনেকটা অস্বস্তি-অসুবিধার পরিসরও তৈরি হয়েছে। যাতে জন্ম হচ্ছে মানসিক সঙ্কটের। আগের জীবনের সঙ্গে এই জীবনের কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। আমূল বদলে গিয়েছে অতীতের রুটিন। আগে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকত। এখন অফিস ঢুকে পড়েছে একেবারে বেডররুমে। তাই ফেরার তাড়া ব্যাপারটাই ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছে জীবন থেকে। কাজের সময়সীমাও তাই বল্গাহীন। ‘ মি টাইম’ ‘ ফ্যামিলি’ টাইম বলেও কিছু নেই। সব সময়ই পরিবার চোখের সামনে। তাই অনেক সময়ই বদলে যাচ্ছে চেনা সম্পর্ক। বিবাদ বাড়ছে। সম্পর্কে জটিলতার আশংকাও অমূলক নয়।

নতুন ‘ওয়ার্কস্পেস’ সন্তোষ জাগাতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ব্যাপারটা পরিবারের বাকি সদস্যদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। উইকএন্ড বা ছুটির দিনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছে তারা ‘বাড়ি থেকে কাজ’-এর ব্যাপারটি।

মনোবিদদের মত মানুষের মন মেজাজ বদলে দিচ্ছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম সংস্কৃতি। আগে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার জন্য যে ফাঁক খুঁজত এখন সেই মানুষটিই বাড়ি থেকে অফিস ফেরার জন্য সুযোগ খুঁজছে!   

মনোবিদরা জানাচ্ছেন এই পরিস্থিতির মোকবিলা করতে নিজের অপ্র নিয়ন্ত্রণ আর নিয়ামানুবর্তীতা খুব জরুরী। বাড়িতে থেকে অফিসের কাজ করলেও তার মধ্যে যাতে ব্যালেন্স থাকে সেই ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। ডারউইনকে স্মরণ করিয়েছেন তাঁরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে যারা সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে তারাই টিকে থাকে এই পৃথিবীতে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...