গাড়ির চাকা কালো হয় কেন

অফিসকাচারী, স্কুলকলেজ যেখানেই যাওয়া হোক না কেন যানবাহন কিন্তু আমাদের লাগেই লাগে।বাস, ট্রাম, অটো কিংবা রিকশা যার কথাই বলুন না কেন রাস্তায় বেরোলে এদের প্রয়োজনই আমাদের সবার আগে পড়ে থাকে।যাতায়াতের পথে আমাদের চোখে অনেক কিছু পড়ে। কখনো আবার আপন চিন্তায় ডুবে থাকি আমরা। কিন্তু যাত্রাপথে বা অবসর সময়ে এটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন গাড়ির চাকা সমসময় কালো রঙেরই কেন হয়? অন্য রঙের চাকা হলে কি অসুবিধা হতো? কালো চাকা হওয়াতেই বা কি সুবিধা হয়? জানা আছে কি? চলুন আজ এই বিষয়ে জানা যাক..................

গাড়ি এগোনোর জন্য প্রয়োজন কম করে একজোড়া চাকা। তা সে সাইকেলই বা হোক না কেন। এটা আমাদের সকলেরই জানা যে টায়ারের গ্রিপ চাকাতে রাস্তায় পিছলে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এর সাথে কি চাকার রং কালো হওয়ার কোনো সম্পর্ক রয়েছে? দুইচাকার সাইকেলের চাকাও কিন্তু কালো রঙেরই হয়। কেন বলুন তো? কিছুসময় আগের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, একসময় গাড়ির চাকার টায়ারের রং ছিল কিন্তু সাদা। কিন্তু তা বদলে কেন গেলো? ওইসময় গাড়ির সাদা রঙের চাকাকে আভিজাত্যের প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হতো। সেই সময় 'ক্লাসিক' গাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল সেইসব সাদা টায়ারযুক্ত গাড়ি। এই টায়ার পরিষ্কার করা হতো বিশেষ পদ্ধতিতে।

এটা সকলেই জানা যে, গাড়ির টায়ার তৈরী হয় রাবার দিয়ে আর সেই রাবারের রং হয় হালকা ধূসর। আগেকারদিনে টায়ার মজবুত করার জন্য এর সাথে মেশানো হতো জিঙ্ক অক্সাইড। এই ধাতব মেশানোর ফলে টায়ারের রং সাদা হয়ে যায়। বর্তমানেও জিঙ্ক অক্সাইডের ব্যবহার আমরা দেখতে পাই টায়ার প্রস্তুতিতে। কিন্তু তাহলে বর্তমানে টায়ারের রং সাদা হয় না কেন? টায়ারের রং বদলের এই ব্যাপারটি প্রথম খেয়াল করেন সাংবাদিক ডেভিড ট্রেসি। তিনি ফোর্ড পিকিউ অ্যাভিনিউ প্লান্ট মিউজিয়ামে একটি সাদা টায়ারযুক্ত গাড়ি দেখতে পান। গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৯১৭ সাল থেকে টায়ারে কার্বন ব্ল্যাক মেশানো হয়।কার্বন ব্ল্যাক হলো এমন একধরণের মৌলিক কার্বন যা কার্বনের অসম্পূর্ণ জ্বালানির ফলে সৃষ্টি হয়।এটি টায়ারকে সূর্যের ইউভি রশ্মির হাত থেকে যেমন রক্ষা করে সেরকমই অতিরিক্ত গরমের ফলে টায়ার ফেটে যাওয়ার ভয় থাকে না। এই কার্বন ব্লকের ব্যবহারের ফলে টায়ারের কার্যকারিতা আগের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন টায়ার প্রস্তুতকারক সংস্থার দাবি, আগে যখন টায়ারে কার্বন ব্ল্যাক ব্যবহার হতো না তখন সেইসব গাড়ি পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত খুব ভালোভাবে চলতো। কিন্তু তার পরেই সমস্যা শুরু হয়ে যেত। বর্তমানে কার্বন ব্লকের ব্যবহারের ফলে সেইসব গাড়িই পঞ্চাশ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত চলছে।
এই কার্বন ব্লকের ব্যবহার কিন্তু গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা এতকিছু জেনে শুরু করেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বুলেট তৈরী করার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল প্রচুর জিঙ্ক অক্সাইডের। সেই সময় একপ্রকার বাধ্য হয়েই এইসব টায়ার প্রস্তুতকারক সংস্থা কার্বন ব্লকের ব্যবহার শুরু করে। এর পর থেকেই কার্বন ব্ল্যাক টায়ারের শক্তি বাড়ানোর মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানেও টায়ার প্রস্তুতিতে সামান্য পরিমান জিঙ্ক অক্সাইডের ব্যবহার হলেও প্রায় ৭০ ভাগ কার্বন ব্ল্যাকই আজও ব্যবহৃত হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...