ভাত না রুটি, বেশি উপকারী কোনটি

ভারতীয় খাবারের মধ্যে মূলত পড়ে ভাত আর রুটি। কোনো কোনো জায়গায় ভাত বেশি প্রসিদ্ধ তো কোনো জায়গায় রুটি। কোন জায়গায় আবার ভাত ও রুটি একই সাথে খাবারের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু কোনটির কি গুনাগুণ তা কি জানা আছে? চলুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক ভাত ও রুটির কিছু নিজস্ব গুণ।

প্রথমেই আসা যাক ভাতের কথায়। ভাত হলো শরীরের মধ্যে যাওয়া কার্বোহাইড্রেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ সোর্স। তাই আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির বেশিরভাগটাই আসে ভাত থেকেই। সাদা চাল ও ব্রাউন চাল দুই ধরণের চালেরই আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ রয়েছে। সাদা চালের মধ্যে যেমন পাওয়া যায় প্রচুর পরিমানে মিনারেলভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সেরকমই ব্রাউন রাইসে থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। তাই ব্রাউন রাইস খাওয়ার ফলে হজম ভালো হয়। ব্রাউন রাইসে প্রচুর পরিমানে নিউরোট্রান্সমিটার থাকায় নানা মানসিক রোগ হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে এই চাল। চালে থাকা অ্যান্টি- অক্সিড্যান্ট ধর্ম হার্ট এটাক বা স্ট্রোক রোধ করতে পারে। বলা হয়,  ব্রাউন রাইসে প্রচুর ফাইবার থাকার ফলে এটি নানাধরণের ক্যান্সারের হাত থেকেও শরীরকে বাঁচায়। রোগ হওয়ার জন্য আজকাল অনেকেই ভাতের উপর ভরসা করেন। কারণ চালে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট উপাদান ওজন কমানোর সহায়ক। এছাড়াও চালে খুব অল্প পরিমান সোডিয়াম থাকে তাই এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চালে থাকা অত্যধিক ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

এবার আসা যাক রুটির কথায়। সাধারণত আমাদের এখানে গমের রুটি তৈরী হয়। গম ভাঙিয়ে আটা বানিয়ে সেই আটা জল দিয়ে মেখে তাই দিয়ে রুটি বানিয়ে খাওয়াটাই দস্তুর। গবেষণায় দেখা গেছে, রুটির মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমান দ্রবণীয় ফাইবার রক্ত সংবহন তন্ত্রের ভিতর থেকে প্লাক নির্গত করতে সাহায্য করে। রুটির মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে শক্তির সঞ্চার করে। রুটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম হওয়ার কারণে রক্তচাপের হেরফের ঘটে না। কিছু মানুষ আছেন যাদের গ্লুটেন সহ্য হয় না তাদের ক্ষেত্রে বাজরা দিয়ে রুটি করা হয়ে থাকে। রুটিতে থাকে প্রচুর পরিমান প্রোটিন এবং খুব অল্প পরিমান ফ্যাট কনটেন্ট। বিশেষ করে আটা বা বাজরা দিয়ে তৈরী রুটি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হয়ে থাকে। কিন্তু ময়দা আসলে রিফাইন ফ্লোর তাই ময়দা দিয়ে তৈরী রুটি খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকে যায়। রুটিতে থাকে প্রচুর পরিমান ভিটামিন যেমন- বি ১, বি ২, বি ৩, বি ৬ প্রভৃতি। এছাড়াও রুটিতে থাকা সেলেনিয়াম ও অন্যান্য উপাদান ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।

তাহলে ভাত না রুটি রোজকারের খাদ্যতালিকায় আপনি কোনটি রাখবেন?  প্রথমেই মনে রাখা দরকার, ভাত ও রুটি দুটিতেই সমান পরিমান কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং এই দুটি খাদ্যের ক্যালোরিফিক ভ্যালুও একই। কিন্তু তাও পুষ্টিগুণে এই দুই খাদ্যের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোনটি খাওয়া উচিত এবং কেন?

১) চাল ও গমের দুটোরই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমান। তাই এই দুটো খাদ্যই রক্তচাপের উপর সমান প্রভাব ফেলে।

২) রুটিতে সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের পরিমান বেশি থাকে তাই যেসব মানুষের এই দুটি উপাদান খেতে অসুবিধা আছে বা ডাক্তারের বারণ আছে তাদের ক্ষেত্রে ভাতই বেস্ট অপশন।

৩) পেটের সমস্যায় বেশি ভোগেন যারা তাদের ক্ষেত্রে ভাত বেশি ভালো। কারণ ভাতে থাকা উপাদান খাবার তাড়াতাড়ি হজম করতে সাহায্য করে।

৪) যাদের রক্তে শর্করার পরিমান বেশি অর্থাৎ যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই রুটি এক উত্তম আহার্য বস্তু।

৫) ওজন হ্রাস করতে চাইলে ভাতের পরিমান কমিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ দিনে বেশিবার ভাত খেলে বিশেষ করে রাতের বেলা ভাত খেলে শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা থাকে। তাই সেক্ষেত্রে রুটি খাওয়াই ভালো। 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...