ক্রিকেটে একজন ওপেনারের কাজ কী? বল দেখে খেলা। অফ স্টাম্পের বাইরে কম খেলা, ভি -এর মধ্যে শট খেলা। প্রথম ১-২ ঘন্টা বোলারদের দেওয়া। এসবের বাইরে তিনি। যতক্ষণ মাঠে থাকবেন চলবে বোলারদের উপর মারদাঙ্গা। তিনি বীরেন্দ্র সেওয়াগ।
ইডেনে টেস্ট ম্যাচ। প্রথম দিনে সেওয়াগ ৮২ রানে অপরাজিত। দ্বিতীয় দিন খেলা শুরু হলে পোলক, এনটিনিদের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে একজন সাধারণ ওপেনার কী করতে পারে? দেখে খেলবে যাতে সেঞ্চুরি হয়। বদলে তিনি বল পাঠালেন ওভার বাউন্ডারিতে। কিছু ওভার বাউন্ডারির পরই আউট হয়ে যান, সেঞ্চুরি হল না। কিন্তু সেওয়াগ এরকমই।
আবার দক্ষিণ আফিকা। এবার ২৯১ অপরাজিত ব্যাটিং করছেন সেওয়াগ। নেগেটিভ বোলিং করা হচ্ছে শট না মারতে দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে পল হ্যারিসকে চ্যালেঞ্জ "রাউন্ড দি উইকেট এসো না, প্রথম বলই ওড়াব" - চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড এবং ওই ওভারের প্রথম বলই বাউন্ডারির বাইরে! সেওয়াগ ইজ জাস্ট লাইক দ্যাট।
২০০৩-০৪ বক্সিং ডে টেস্ট, ১৯৫ রানে আউট , ছয় মারতে গিয়ে নিশ্চিত দ্বিশতরান থেকে বঞ্চিত। হর্ষ ভোগলে প্রশ্ন বললেন "বীরু আর মাত্র ৫ রান করলেই তো ২০০ হয়ে যেতো"! উত্তর তিনি বলেছিলেন "বলটা আর মাত্র তিন গজ পিছনে পড়লেই ছয় হয়ে যেতো"!!! ল্যাঙ্কাশায়ার টীমে সতীর্থ জেরেমি স্নেইপ ব্যাট করার সময় বললেন পুরনো বলের সুইং সামলাতে একটু সমস্যা হচ্ছে ..। আপনি এমন মারলেন, বল হারালো, আম্পায়ার নতুন বল নিলেন, তখন স্নেইপকে নাকি বলেছিলেন "ভাই নতুন বলে অন্তত ২ ঘন্টা তোমার কোনো সমস্যা হবে না, রিভার্স সুইং তো অত আর হবে না"

মুলতানে ব্যাট করছেন শচীনের সঙ্গে। তিনি বারন করেছিলেন উল্টোপাল্টা শট না মারতে .. ২৯৫ তে এসে " পাজী, এবার একটা ছয় মারি না ?" ছয় মেরেই তিনশো করেছিলেন। ২০০২, ন্যাটওয়েস্ট ট্রাফির সেই ঐতিহাসিক ফাইনাল। সৌরভের সঙ্গে প্রথম ১০ ওভারে ভালো রান ওঠার পর সৌরভ যখন তাঁকে বললেন , রনি ইরানি বল করতে আসছে , উৎসাহিত হয়ে উইকেট না দিতে .. বলে দিলেন তো ঠিক আছে দাদা .. কিন্তু করলেন ঠিক উল্টো .. এক ওভারে মারলেন ২২।
শোয়েবকে স্লেজিং এর জবাব ? সেই যে আপনাকে বাউন্সার দিয়ে দিয়ে বলছিলেন " হুক পুল মেরে দেখা " সটান জবাব " আরে ভিক্ষা চাইছিস নাকি !! নন স্ট্রাইকারে তোর বাবা (সচিন) দাঁড়িয়ে আছে .. ওকে গিয়ে বল , মেরে দেখাবে " অথবা মাইকেল ক্লার্ক যখন সচিনকে উত্ত্যক্ত করছিলেন " তোমার বয়স তো হলো, আর কেনো ?" আপনার হজম হয় নি ঠিক ব্যাপার টা .. " তোমায় ড্রেসিংরুমে pup বলে ডাকে তো ?" "হ্যাঁ কেন ?" " কোন প্রজাতির pup তুমি ?" ...
২০০১ সালেই নাকি লক্ষণকে কথা দিয়েছিলেন যে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ওনার ২৮১ করেও তিনশো না করার দুঃখ মেটাবেন , কথা রেখেছিলেন ২ টো তিনশো মেরে ... ১৪৯ বলে ওয়ান ডে ক্রিকেটে দ্বিশতরানের তাণ্ডবের সাক্ষীও তো আমরা ... টেকনিক ভালো না ... পা নড়ে না...এমন নানা কথার মাঝে টেস্ট অভিষেক ঘটিয়েও ১০৫, সেটাও কোথায়? দক্ষিণ আফ্রিকার ডেরায়, ব্লুমফোন্টেন...

এম সি সি কোচিং ম্যানুয়ালকে আপার কাট মেরে নিজের মতো শট খেলা ... ভি? ওটা তো মনে হয় বাউন্ডারির ছাদ ছিল বীরুর কাছে!! ফুটওয়ার্ক না করেও এমনভাবে দুঃস্বপ্ন দেখাতেন বোলারদের, যে নাম শুনলেই ধুকপুকানি শুরু হয়ে যেত! কিশোর কুমারের গান গাইতে গাইতে ছয় মারতেন। ইয়ান চ্যাপেল তো বলেই দিয়েছিলেন "মোজেস যেমন রেড সী দু'ভাগ করেছিলেন, তেমনি সেহবাগ ক্রিজে থাকলে প্রতিপক্ষকে চিরে দিয়ে বেরিয়ে যাবে"!!
জাহির খানের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব ... না শুধু ওনার বোলিংয়ের জন্য নয়, সৌরভকে সেওয়াগের নামটা ওপেনার হিসাবে সুপারিশ করার জন্য। যদি কেউ ক্রিকেট শেখে এবং ভাবে ওপেন করতে নেমে বীরুর মতোই খেলবে তাহলে সে মহাভুল করবে। বল ও বোলারের হাত দেখে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়। কারনা 'মুলতান কা সুলতান' কোটিতে একজনই হন।
 In English
													
