শুরু হল ১৮তম জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব, কেন শুরু হয়েছিল এই উৎসবটি?

২৮ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, শুরু হল ১৮তম জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব। প্রতি বছর প্রায় জাঁকজমক ভাবেই হয় এই উৎসব। জানা গিয়েছে যে এলাকার প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এই উৎসবটি শুরু করছিলেন জয়চন্ডী পাহাড় ঘিরে পর্যটনের বিকাশের জন্য।

২৮ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি অবধি পাঁচদিনব্যপী চলবে এই উৎসবটি।  

এদিন বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সত্যজিৎ রায় মঞ্চে হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আদিত্য বিক্রম হীরানি, রঘুনাথপুরের এসডিও তামিল ওভিয়া এস, কমিটির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, সম্পাদক তথা রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান তরণী বাউরি, রঘুনাথপুরের এসডিপিও অবিনাশ ভীমরাও যাধোয়ার, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী-সহ আরও জেলা প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তিরা।  

maxresdefault44

প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই প্রয়াত হয়েছেন বাসুদেব আচারিয়া। সেইজন্য উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

উৎসব কমিটির সম্পাদক তথা রঘুনাথপুর পুরসভার পুরপ্রধান তরণী বাউরি এদিন জানান যে ১৭ বছর আগে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহর সংলগ্ন জয়চণ্ডী পাহাড়কে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার জন্যই শুরু হয়েছিল এই পর্যটন উৎসব। তাঁর দাবি, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সেটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। বর্তমানে এই উৎসবকে ঘিরেই অনাবিল আনন্দে মানুষ মেতে ওঠে এবং সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন পুরুলিয়াবাসীদের সঙ্গে রাজ্যবাসী এমনকি পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মানুষেরা।

অন্যদিকে, উৎসব কমিটির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া জানান যে এই উৎসবে পর্যটনের অঙ্গ হিসেবে হস্তশিল্পীদের বিশাল বাজার বসবে। রাজ্যের নানা কুটির শিল্পের পসরা মিলবে এই মেলায়। এছাড়া থাকবে ২০০টির বেশি স্টল। সেই সঙ্গে পর্যটকদের আনন্দ দিতে পাহাড় ছুঁয়ে নাগরদোলা, টয়ট্রেন থাকবে। এছাড়া জেলা আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে পুরুলিয়ায় ঠান্ডা পড়েছে এবার যথাসময়ে। সঙ্গে উত্তরে হাওয়া ও অন্যদিকে কুয়াশা। দুয়ে মিলিয়ে চাদরে -জ্যাকেটে একেবারে জবুথবু অবস্থা মেলায় আসা পর্যটকদের।

প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে সত্যজিৎ রায় মঞ্চে কলকাতার নামী শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে।

কিন্তু কেন আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এই পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড়?

জানা গিয়েছে যে জয়চন্ডী রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুরুলিয়ার অন্যতম আকৰ্ষণটি। তবে, শুধু জয়চন্ডী রেল স্টেশন নয়, আদ্রা স্টেশন থেকেও এখানে চলে আসা যায়।  

এই পাহাড়ে আরও একটি আকর্ষন রয়েছে, সেটি হল এই পাহাড়েই  সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির শুটিং হয়েছিল। ফলে শীতের আমেজে বহু পর্যটক এখানে ভিড় জমান। এছাড়া আরও বেশ কিছু ছবির শুটিং হয়েছে এখানে।

অন্যদিকে, এই জয়চন্ডী পাহাড়ের ওপরে রয়েছে জয়চন্ডী মন্দির ও বজরং মন্দির। কেউ যদি পুরুলিয়া ঘুরতে আসে তাহলে দেখার যায়গা এখানে মোতেই কম নয়। পর্যটকদের জন্য এই জেলায় আকর্ষণের নানা কারণ ছড়িয়ে রয়েছে বিস্তৃত ভাবে।

কি কি আকর্ষণ রয়েছে পুরুলিয়া জেলায়?  

প্রথমেই আসছে অযোধ্যা পাহাড়। এই পাহাড় পুরুলিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং বিখ্যাত পর্যটন গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি। কারণ প্রধান শহরের কেন্দ্র থেকে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত এই পাহাড়টি। এছাড়া অনেকের বিশ্বাস রয়েছে যে স্থানটির পৌরাণিক গুরুত্ব রয়েছে। সেটা হল যে কথিত আছে যে ভগবান রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ তাদের নির্বাসনের সময় এখানে বসবাস করেছিলেন।

এরপর আসে গড়পঞ্চকোট মন্দির। জানা গিয়েছে যে এই মন্দির ছিল সিং দেও রাজত্বের অংশ। এখানের সব মন্দিরগুলি বর্গী আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গিয়েছে এবং অধিকাংশ ধ্বংসো হয়ে গিয়েছে।  তবে, এখনো সেসব মন্দিরের কিছু অবশিষ্ঠ আছে। পুরুলিয়া শহর থেকে গড়পঞ্চকোটের দূরত্ব মাত্র ৫৫ কিলোমিটার। 

তৃতীয় স্থানে পড়ছে পাঞ্চেৎ ড্যাম। এই ড্যাম দেখতে হলে গড় পঞ্চকোট হয়ে যেতে হবে। তাতে দুরত্বটা কম হবে। মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাঞ্চেৎ ড্যাম। এই ড্যামটি পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খন্ড দুই রাজ্যের বর্ডারে রয়েছে। এখানে এলে যে কাউকেই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ করবেই।

এখানেই শেষ নয়, রয়েছে আরও এক স্থান। সেটা হল সাহেব বাঁধ। এই বাঁধ হল পুরুলিয়ার সবচেয়ে অন্তর্নিহিত জলাশয়, যা ৫০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে থাকা কর্নেল টিকলি এই স্থানটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন। একটি ইতিহাস রয়েছে এই জলাধারের পেছনে। কর্নেল টিকলি বেশ কয়েকজনকে এই জলের ঝরনার জন্য খনন শুরু করতে বাধ্য করেন। আর তাই এই বিশাল ট্যাঙ্কটি তৈরি করতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। বর্তমানে এই স্থানটি পুরুলিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...