অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিভাবে নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটি মানালেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির চরিত্রে অভিনয় করতে?

এ বছরের পুজোয় নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একটু অন্যরকম চমক দেখাতে চলেছে। এই প্রথমবার তাঁদের ছবি মুক্তি পাচ্ছে পুজোর সময়। অন্যদিকে, এই প্রথম তাঁরা থ্রিলার ছবি বানিয়েছেন। এই প্রথম দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির গল্প বড় পর্দায় দেখতে চলেছেন দর্শকেরা। এই প্রথম কোনও বাংলা ছবির শুটিং রাইসিনা হিল্‌সে হয়েছে। তাই, সব মিলিয়ে চলতি বছরের পুজোটা তাঁদের কাছে খুবই ‘আকর্ষণীয়’। শুধু তাঁদের কাছে নয় আমজনতার কাছেও খুবই ‘স্পেশাল’ এইবার।

পরিচালকেরা, ২০১৪ সালে ‘খাগড়াগড়-কাণ্ড’ ঘিরে ‘রক্তবীজ’-এর গল্প লিখেছেন। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যে কোনও বাস্তবিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে পর্দায় গল্প করলে বাস্তবের চেয়ে খানিক আলাদা করে চরিত্র গড়ে তুলতে হয়। শিবপ্রসাদ-নন্দিতাও ঠিক সেটাই করেছেন।

গল্পে ভিক্টরের চরিত্রের নাম অনিমেষ। অনিমেষের দিদিকে দেখা যাবে হুইলচেয়ারে। তবে, বাস্তবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিদির সঙ্গে সে দিকে থেকে কোনও মিল নেই।

অভিনেতা ভিক্টর সময়ের সঙ্গে কাজের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। এই চরিত্রে তাঁকে কীভাবে রাজি করা গেল? এই উত্তরে নন্দিতা জানান যে, ‘‘ সবকিছু শিবুই করিয়েছে। তবে নন্দিতা বলেছিলেন কথা বলতে, কী আর হবে? বড় জোর ‘না’ বলবেন। তাই দোলের আগের দিন একটা মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তাঁরা।

অন্যদিকে শিবপ্রসাদ মেসেজ পাঠিয়ে বার বার ফোনটা দেখছিলেন। কিন্তু কোনও উত্তর নেই। হটাৎ পর দিন সকালে ১১টায় দেখা যায়,  উত্তর এল। তারপর, তাঁরা সাহস করে ফোন করে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর, ছবির কথা বললেন। তাতে ভিক্টর বলেছিলেন যে তাঁদের পরিচালনা নিয়ে যেমন সুখ্যাতি যেমন শুনেছে, তেমনি তাঁরাও নিশ্চয়ই তাঁর কুখ্যাতি শুনেছেন। তিনি এটাও বলেন তিনি নাকি খুব একটা সহজ মানুষ নয়।

 তার পর তো সামনাসামনি দেখা করে চিত্রনাট্য দিয়ে যাবতীয় কথা হয়ে গেল। এবং পর দিনই চুক্তিপত্রে সই করলেন।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে গল্প ফাঁদার ভাবনা দু’জনের বহু দিনের। তাই লকডাউনের পর নতুন কিছু করার তাগিদ তৈরি হয়। তাঁদের মনে হয়, এ বার নতুন কিছু করতে হবে। তাই ‘গ্র্যান্ড স্কেলে’ একটা ছবি তৈরির ইচ্ছেটা জাগে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের মনে। তখনি এই ছবি এসে গেল তাঁদের মাথায়।

তাঁদের ছবি মূলত পারিবারিক-ড্রামা নিয়ে হয়। গল্পের প্রেক্ষাপট বেশির ভাগ সময় চার দেওয়ালের মধ্যেই থাকে। কিন্তু এবার আউটডোর শুটিং হয়েছে বহু দিন। প্রচুর অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে তাঁদের ছবিতে। সন্ত্রাসবাদ, থ্রিলার, রহস্য— সবই রয়েছে এই গল্পের মধ্যে। কিন্তু শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সিনেমার মূল ইউএসপি হল পারিবারিক গল্প।

এই বিষয়ে শিবপ্রসাদ বললেন এই ছবি সম্পূর্ণ একটা বাঙালি গল্প নিয়ে। দুর্গাপুজো আছে, বাঙালি রাষ্ট্রনায়কের গল্প আছে, তাঁর ঘরে ফেরার গল্প আছে, ভাই-বোনের গল্প আছে। কিন্তু ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে, এটা শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি। তাঁর সেই দুর্দান্ত এক সিগনেচার রয়েছে। রাষ্ট্রনায়কের ব্যক্তিগত জীবনের গল্পই তাঁদের বেশ আকর্ষণ করছিল।

দুর্গাপুজোর আবহে ‘রক্তবীজ’-এর এই গল্প। তাই প্রথমবার পুজোর সেই ছবির দৌড়ে নেমেছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদও। তাঁদের টিমের সকলে খুবই খুশি। এই প্রথম পুজোয় তাঁদের ছবিরও প্রিমিয়ার হবে।

পরিবারের সকলের সঙ্গে পুজোয় নিজেদের ছবি দেখতে যেতে পারবেন। কিন্তু পুজোয় তো মোট চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বক্স অফিসে প্রতিযোগিতা নিয়ে কোনও রকম ভয় করছে না? এই বিষয়ে নন্দিতার জানান, ‘‘সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী আর দশমী। দর্শক চার দিনে চারটে ছবি দেখে নেবেন। এতে আর ভয় কী!’’ শিবপ্রসাদ আরও জানালেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার মতো। নিজের মাঠে তো রোজই খেলি। এটা যেন লর্ডসে খেলতে নামছি!’’ হল পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে? নন্দিতার আত্মবিশ্বাসী উত্তর, ‘‘আমরা তো নতুন পরিচালক নই। এত বছর ধরে ভাল ভাল ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছি। ডিস্ট্রিবিউটাররা আমাদের প্রাপ্য নিশ্চয়ই দেবেন। এ নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করে কোনও লাভ নেই।’’

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির গল্প দেখানো হবে এই আসন্ন ছবিতে। এছাড়া, গল্পের বড় অংশ জু়ড়ে রয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের এক মহা ঝামেলা।

সেন্সর বোর্ডের চিন্তা নিয়ে নন্দিতা জানালেন, ‘‘লেখার সময় শিল্পী হিসাবে যা ভেবেছিলাম, মন খুলে লিখেছি। পরে যা হবে, দেখা যাবে ভেবে নিয়েছিলাম। কিন্তু শিবুর প্ল্যান বি তৈরি ছিল। অনেক জায়গায় আপত্তি হতে পারে ভেবে ও শুটও করে রেখেছিল। সেন্সর বোর্ড কিন্তু খুব সহযোগিতা করেছে। এই ছবি যে একদম আনকাট ইউ/এ শংসাপত্র পাবে, আমরা ভাবতেই পারিনি!’’

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...