গ্রীষ্মকাল মানেই আমের মরসুম। হিমসাগর হোক বা ফজলি, প্রায় সবার বাড়িই আমের গন্ধ ম-ম করছে। অনেক আমপ্রেমী আবার একটু বেশি দাম দিয়ে অ্যালফান্সো কিনে মনের শান্তি মেটান। কিন্তু কখনও একটি মাত্র আমের জন্য ১০ হাজার টাকা ব্যয়ের কথা ভাবতে পেরেছেন কখনও?
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, ১০ হাজারের বিনিময়ে একটি আম!
শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার এক শপিংমলে শুরু হয়েছে তিনদিনের এক আম উৎসব। অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (এসিটি) এবং মডেল কেয়ারটেকার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল (এমসিসিএস)-এর যৌথ উদ্যোগে, ৯ জুন থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে। চলবে ১২ জুন পর্যন্ত।
আম উৎসবে ২৬২ বেশি জাতের আম প্রদর্শিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ৯ জেলার ৫৫ জন আম চাষি এই উৎসবে অংশ নিয়েছেন। প্রদর্শনীতে আলফোনসো, ল্যাংড়া, আম্রপালি, সূর্যপুরী, রানিপাসন্দ, লক্ষ্মণভোগ, ফজলি, বিরা, সিন্দু, হিমসাগর, কোহিতুর এবং অন্যান্য আমের প্রদর্শন চলছে। আর ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের আলোচানাতেই ‘আমের রাজা মিয়াজাকি’। এই জাপানি আম একবার চাক্ষুষ দেখার আশায় ভিড় করছে লোকজন। শুধু একবার চোখের দেখা দেখতেই সবাই আসছেন, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এই আম বিক্রি হয় ২.৫ লক্ষ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে। ভাবতে পারেন এক কেজি আমের দাম আড়াই লক্ষ টাকা!
আম উৎপাদক শওকত হোসেন বীরভূমের দুবরাজপুরের এক মসজিদ চত্বরে জাপানি মিয়াজাকি আম গাছ লাগিয়েছিলেন, সেখানেই পাওয়া যায় এই আম। বীরভূম থেকে আম শিলিগুড়ি আনতে বেশ কসরত করতে হয় তাঁকে। যে কোনও বাক্সে যেমনতেমন করে আনলে আম থাকবে না, তাই বাক্সের ভিতর তুলোর মধ্যে রেখে প্রচন্ড যত্নে নজর কাড়া দশটি লাল আম নিয়ে আসেন আম উৎসবে। তিনি জানান প্রতিটি আম বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তার সবকটা আমই বিক্রি হয়ে গেছে।
এটি আসলে জাপানি প্রজাতির আম। অনলাইনে লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়। জাপানে একটি মিয়াজাকি আমের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ হাজার টাকারও বেশি। মুখে দিলেই নাকি গলে যায়, আর চিনির মতো মিষ্টি। অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও বিটা ক্যারোটিন ও ফলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। চোখের পক্ষেও উপকারী। বর্তমানে ভারতের কয়েকটি জায়গায় এই আম হয়। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে পাহারা দিয়ে এই আম চাষ করা হয়।
জাপানি মিয়াজাকি আম উৎপাদনকারী কৃষক শওকত বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী এই আমের দাম ১০ হাজার টাকা প্রতি কেজি হিসেবে বিক্রি করেছি। কেউ পাঁচ হাজার টাকা করেও আম নিয়ে গিয়েছে আমার থেকে। আমি চাই আমার আম সবার কাছে পৌঁছে যাক। চাহিদা বাড়লে এই আম নিলামও করা হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রায় দেড় বছর আগে বিদেশি জাপানি মিয়াজাকি আমের ৫টি গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। সেই গাছগুলির মধ্যে একটি গাছে ৩৮টি আম হয়েছে। বীরভূমে এই আম নিলামে বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ১০ হাজার টাকায়। এখানেও ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা দিয়ে অনেকেই আম নিয়ে গিয়েছেন। মিয়াজাকি আম কিনতে আসা অভিজিৎ ভাটিয়া জানান, ‘‘বহুদিন ধরেই এই আমের কথা অনেকের কাছে শুনেছি তবে কিনতে পারব ভাবিনি। আম উৎসবের সৌজন্যে মিয়াজাকি আম বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সকলের সঙ্গে উপভোগ করব।”