বাড়িটা ঠিকানা ১৯এ, গুরুসদয় রোড। বাড়িটা দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়ে একটা বিরাট আকারের বাষ্পীয় বিম ইঞ্জিন। ১৮৪০ সাল নাগাদ স্টিম টাগ অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি কোম্পানি ইঞ্জিনটি ভারতে নিয়ে এসেছিলেন। কোম্পানির ট্যাগবোর্ড মেরামতি কারখানায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানোর জন্যই ভারতে আনা হয়েছিল। প্রিন্টার অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানেজিং এজেন্ট ছিলেন টেগোর এন্ড কোম্পানি। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন এই কোম্পানির অন্যতম অংশীদার। ১৮৪৪ থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত এই এঞ্জিনসমেত স্টিম টাগ অ্যাসোসিয়েশনের সমস্ত সম্পত্তি আটান্নহাজার টাকায় কিনে নিয়েছিলেন ইন্ডিয়া জেনারেল স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি। নানা হাত ঘুরে এঞ্জেনটি পেয়েছিলেন বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। গুরুসদয় রোডের বাড়িতে ঠাকুর পরিবারের স্মৃতি এই স্টিম ইঞ্জিনটি।
ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি একটা বাষ্পীয় বিম এঞ্জিনের হাত ধরে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরদের স্টোর রোডের বাড়ির উঠোনে পৌঁছানো যায়। এই বাড়িটিতেই থাকতেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ভারতের প্রথম আইসিএস। বাড়িটি পরে বিড়লাদের কাছে যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংগ্রহশালা তৈরি করার জন্যই তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে বাড়িটি তুলে দেন। এই বাড়িটি এখন হয়েছে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম। উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে এটি প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সংগ্রহশালা।
তিন তলা বিশাল বাড়ি। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি হিসেবেই পরিচিত। বিড়লাদের সময়ে বাড়িটির নাম ছিল বিড়লা পার্ক। দুটি প্লট সমেত বাড়িটি তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তুলে দিয়েছিলেন। মূলত সংগ্রহশালা করার জন্যই বাড়িটি তুলে দেওয়া হয়। এই প্লট দুটিতে জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৮ হাজার বর্গফুট ও ৬৮ হাজার ৫০০ বর্গফুট।
মহাত্মা গান্ধী কলকাতায় এলে মাঝে মাঝেই এই বাড়িতে উঠতেন। তিনতলা পর্যন্ত যে কটি ঘর রয়েছে সবকটিতেই মিউজিয়াম ও মিউজিয়ামের অফিস রয়েছে।
১৯৫৯ সালের ২রা মে মিউজিয়ামটি উদ্বোধন করেছিলেন তদানীন্তন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়। মিউজিয়ামের প্রথম ভিজিটর হিসেবে তাঁর নামই লেখা আছে। মিউজিয়াম হিসেবে বাড়িটি ঘোষিত হওয়ার পর পুরনো বাড়িটির কিছু বদল করা হয়েছে। বর্তমানে যেখানে ট্রান্সপোর্ট গ্যালারি রয়েছে সেখানেই আগে ছিল নাচ ঘর। আগে কোন অডিটোরিয়ামও এই বাড়িতে ছিল না। পরে তৈরি হয়েছে। জাতীয় বিজ্ঞান মিউজিয়াম পর্ষদের অধীনে বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ভালোভাবেই চলে। ভেতরের চেহারা তেমন বদলায়নি। যদিও ঠাকুর পরিবারের তেমন নিদর্শন এখানে পাওয়া যায় না।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান নিয়ে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ চর্চা করেন। এই বাড়িতে এখনো মরসুমী ফুল এবং অর্কিডের বাগান রয়েছে। তবে ইতিহাসের পাতায় এই বাড়ির উল্লেখ সেভাবে নেই। যদিও কলকাতার অসংরক্ষিত ইতিহাস আজও এই বাড়িতে রয়েছে।