সংসার সামলাতে হুগলীর সুপ্রীতি আজ ডেলিভারি গার্ল, সঙ্গী বাইক আর অদম্য জেদ

রানার চলেছে, রানার !

রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার ।

দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-

কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার …

এ গান যেন লেখা হয়েছিল সুপ্রীতির জন্যই। তফাৎ শুধু পিঠের বোঝায়। রানারের পিঠে খবরের বোঝা। সুপ্রীতির কাঁধে পণ্যের।  সেই বোঝা নিয়ে এক প্রান্ত থেকে আর প্রান্তে সে ছুটে বেড়ায়। দরজায় দরজায় পৌঁছে দিতে। সুপ্রীতি পেশায় আজ ‘ডেলিভারি গার্ল’।  যদিও একদিন স্বপ্ন ছিল অন্য আকাশে উড়ান দেওয়ার।

হুগলী জেলার রাজহাটের বারল গ্রামের বাসিন্দা সুপ্রীতি সিং। সংসারে দায়িত্বের বোঝা আর ভার খানিক লাঘব করতে পিঠে তুলে নিতে হয়েছে প্রোডাক্ট ডেলিভারির ঢাউস ব্যাগ। এ পথে তাঁর সহায় সঙ্গী বলতে একটি বাইক আর অদম্য জেদ। সেই নিয়েই তিনি পৌঁছে যান দূর-দূরান্তে। পুরুষ প্রধান পেশায় এ বড় সহজ কাজ নয়। তবে সেই ভাবনাকে মনের মধ্যে ছায়া ফেলতে দেননি তিনি। 

খুব সকালে দিন শুরু হয় তাঁর। সকাল-সকাল বেরিয়ে পড়তে হয় বাড়ি থেকে। ব্যান্ডেল-রাজহাট-সুগন্ধার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে তাঁর সহকর্মীরাও।

দুই সন্তানের জননী তিনি। এছাড়াও বাড়িতে আছেন বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ি। স্বামী স্বপন সিং বেসরকারী সংস্থায় গাড়ি চালকের কাজ করেন। কিন্তু তাঁর একার পেশায় সংসার চলে না। তাই বিকল্প আয়ের খোঁজে সুপ্রীতির এ পেশায় আসা।

জীবনে টিকে থাকার সংগ্রাম তাঁর আজকের নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই শুরু। বাবা ছিলেন পেশায় রিকশা চালক। চরম দারিদ্রের মধ্যেও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। অঙ্কের ভাল ছাত্রী ছিলেন। করোনার আগে দিল্লী রোডের ধারে একটি ভাতের হোটেলে কাজ করতেন। কিন্তু অতিমারীর মন্দায় তা শেষ হয়ে যায়। বাড়িতে মুদির দোকান দিয়ে আয়ের চেষ্টা করেছিলেন সেই চেষ্টাও খুব সফল হয়নি।  তাই শেষ পর্যন্ত একটি বহুজাতিক সংস্থায় ডেলিভারি গার্ল। 

এই পেশায় ছুটির সুযোগ কম । উৎসবের মরসুমে কাজের চাপ অসম্ভব বেশি। বাড়ির সঙ্গে সময় কাটাবার অবসর বিশেষ পাওয়া যায় না। তবে তা বিন্দুমাত্র আফসোস নেই তাঁর। তিনি চান ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হোক, আর ঘুরে দাঁড়াক পরিবার।

পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাঁচানো টাকায় জমানো টাকায় তিনি অনাথ শিশুদের জামাও দেন। বাড়ির কাজ সামলে স্থানীয় শিশুদের পড়িয়ে থাকেন। সুপ্রীতির জীবনযুদ্ধের কাহিনি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রতিদিনের দায়-দায়িত্ব সামলেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছেন কুর্নিশ জানিয়েছে নেটিজেনরা। পাশাপাশি পরামর্শ এসেছে গৃহশিক্ষিকা বা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার।  সুপ্রীতি কিন্তু  জানেন যেভাবেই হোক একদিন আলোর স্পর্শে কেটে যাবেই তাঁর দুঃখকাল।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...