মহাকালকে ধারণ করেই দেবী কালী জগন্ময়ী হয়েছেন। তিনি মৃত্যুর দেবী, জ্ঞানশক্তিই কালী। মহাকালী পৃথিবীর পরম জ্ঞানের প্রতীক। কালী শিবের উপরে দাঁড়িয়ে থাকেন। কালী যেমন শক্তিশালী, তেমন শক্তিকে ধারণ করতে শিবতত্ত্বের প্রয়োজন হয়। শিবতত্ত্বের উপস্থিতিতেই কালী শক্তি মঙ্গলময় হয়ে ওঠে। মা কালীর রূপ ভয়ংকর। যা গভীর এবং অনন্ত। রাতের গভীরতাই ভয় সৃষ্টি করে। রাতের রঙ আর কালীর রঙ এক। মা কালীর শক্তির বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাকে কেবল অনুভব করা যায়। তিনি শ্মশান বাসিনী। শ্মশানের আগুনে তাঁর অধিষ্ঠান। তিনি মুক্তকেশী, চামুণ্ডার মতো অতি শীর্ণকায়া, অতি ভীষণা। তিনিই সৃষ্টি এবং স্থিতির পর প্রলয় আনেন। শ্মশান তাঁর প্রতীক। জগতের অন্ত ক্ষণ ও স্থল শ্মশানে দাঁড়িয়ে কালী অন্তিমে কৈবল্য প্রদান করেন। কালী সংহাররূপ ধারণ করেন, অগ্নিময়ী রূপ ধারণ করেন, সেই জন্যেই তিনি শ্মশানের অধিশ্বরী।
আজ তিনি বাঙালির, বাংলার ঘরের দেবী। কিন্তু আজও দিকে দিকে শ্মশানে তিনি পুজো পান, শ্মশানে রয়েছে তাঁর অজস্র মন্দির। নিত্য পুজো পান তিনি। দিনাজপুরের চকভৃগুর শ্মশানকালীর পুজো খুবই বিখ্যাত। বালুরঘাট শহর ছুঁয়ে প্রবাহিত হয়েছে আত্রেয়ী নদী। সেখানে চকভৃগু এলাকায় রয়েছে শ্মশান। সেখানেই পূজিতা হন দেবী। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন দেবীর পুজো হয়। এখানে মা তন্ত্র মতে পূজিতা হন। রয়েছে দেবীর মন্দিরও।
আজ থেকে প্রায় আশি বছরেরও বেশি আগে আত্রেয়ী নদীর তীরে চকভৃগু শ্মশানে মা কালী প্রতিষ্ঠিতি হন। নিশি রাতে খুব গোপনে কয়েক জন ভক্তদের উপস্থিতিতে শ্মশানকালীর পুজো হত। পুজোয় পৌরহিত্য করতেন বুধূ সান্যাল। কিছুদিন পর হঠাৎ করেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী প্রজন্ম পুজোর দায়িত্ব নেন। লালু, দিলীপ, গৌতম, প্রবীর, আলয় প্রমুখেরা এগিয়ে আসেন। পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব নেন তন্ত্র সাধক আদিত্য নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ফটিক ব্যানার্জি নামে পরিচিত। ভক্তদের সাহায্যে আজ শ্মশান কালীর মন্দির গড়ে উঠেছে।
আজও নিয়ম মেনে চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন চকভৃগু শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মায়ের পুজো হয়। পুজো উপলক্ষ্যে দিন দুয়েকের মেলা বসে। আজও পুজোয় পৌরহিত্যের দায়িত্ব পালন করে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। দেবী চতুর্ভুজা, তাঁর পদতলে থাকেন শিব। শবরূপী নন এখানে শিব জীবিত। দেবীর গলায় থাকে মুণ্ডমালা। হাতে কদমা। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী করুণাময়ী তাঁদের মনোবাসনা পূরণ করেন। মানত পূরণ হলে ভক্তরা, সোনা, রুপোর অলঙ্কার দিয়ে পুজো দেন। পাঠা বলি দেন। বীরাচারী নিয়ম মেনে নিশি রাতে শ্মশান কালীর পুজো হয়। বলিদান, হোম-যজ্ঞ চলে। মায়ের পুজো দিতে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। পুজোর পর দিন জমজমাট হয়ে ওঠে মেলা চত্বর।