সুন্দর চট্টোপাধ্যায় থেকে ‘ধৃতিমান’

উত্তাল সত্তর। সময়টা আগুনে। খেয়ে পরে বাঁচার জন্য শ্বাস নিতে চাইছে মানুষ। চারপাশে হতাশার পাঁচিল ভাঙতে চাইছে প্রাণপনে, কিন্তু পারছে না।

কাজের দাবিতে, ভাতের দাবিতে, সুস্থির জীবনের দাবিতে চলছে লড়াই। সত্তরের কলকাতার আরও বহু মুখের সঙ্গে সেই লড়াইতে সামিল তরুণ সিদ্ধার্থও।চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে ঘোরে সে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, কিন্তু তবু আদর্শের সঙ্গে আপোস করতে পারে না।
সিদ্ধার্থ ভিতর ভিতর ক্ষেপে ওঠে। ক্ষোভ জমে। একদিন বিস্ফোরণও ঘটে যায়। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে তোলপাড় করে সে বোর্ড রুম।

dh-1
ছবির সিদ্ধার্থ সেদিন আরও বহু সিদ্ধার্থের সার্থক প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিল পর্দায়। বহু যুবক যেন নিজেকেই খুঁজে পেয়েছিল প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকারে জ্বলজ্বলে বোর্ডরুমে।
অভিনেতা হিসেবে এবভাবেই সফল হয়ে উঠেছিলেন সুন্দর চট্টোপাধ্যায়, ওরফে ‘ধৃতিমান’। সত্যজিতের আবিষ্কার।

dh-2
ছবির দুনিয়ার ধৃতিমান। আসল নাম সুন্দর চট্টোপাধ্যায়।
জন্ম কলকাতায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক দু বছর আগে। ১৯৪৫-এ।
বাড়িতে ছোট থেকেই সিনেমার পরিবেশ। বাবা-মা দুজনেই ফিল্ম সোসাইটির সদস্য। ছোটবেলায় বাবাকে দেখতেন ক্যামেরা হাতে। ছবির প্রতি টান তখন থেকেই।
দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন।
প্রথম কেরিয়ার শুরু করেন রেডিয়োতে। ঘোষক হিসেবে। পরে বিজ্ঞাপন সংস্থায় যোগ দেন।
বিজ্ঞাপনের মানুষ সুন্দর চট্টোপাধ্যায় ছবির জগতে প্রবেশ করেন সত্যজিতের সূত্রে। প্রথম ছবি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’।
তার পরেই ডাক আসে মৃণাল সেনের কাছ থেকে। ‘পদাতিক’ ছবির জন্য। কয়েক বছর পর ‘আকালের সন্ধানে’। সত্যজিতের শেষ ছবি ‘আগন্তুক’-এ দেখে গিয়েছিল তাঁকে।
বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে কখনও আসেননি তিনি। হিন্দি, ইংরেজি, সিংহলী ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন।
হলিউডের ‘ হলি স্মোক’- ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সহঅভিনেত্রী ছিলেন কেট উইন্সকেট।
কোনও একটিমাত্র মাধ্যমে আটকে থাকেননি কোনওদিনই। বিজ্ঞাপন, তথ্যচিত্র, ছবি পরিচালনা, লেখালিখি, ফটোগ্রাফি সব অর্থেই তিনি বহুমাত্রিক। সবই তাঁর ভাললাগার বিষয়।
‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র সেই রাগী যুবক এখন দর্শকদের প্রফেসর শঙ্কু।

dh-3
ছবির জগতে তিনি উজ্জ্বল তারকা। তবুও বিজ্ঞাপনের দুনিয়াকেই নিজের প্রথম পেশার মর্যাদা দেন। এই জগৎ থেকেই তাঁর সিনেমার জগতে আসে। প্রথম স্বাবলম্বী হওয়ার স্বাদও পেয়েছেন বিজ্ঞাপনের কাজেই।
সিলভ্যার স্ক্রিনে আসা সেই ওরিয়েন্টাল লং ম্যানের সঙ্গে। নিজেকে কোনদিন আঞ্চলিক গন্ডিতে ফেলতে চাননি। শুরু থেকেই তিনি আন্তর্জাতিক। সেই ধারাতেই তিনি আবহমান…

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...