প্রথম ব্রিটিশ মহিলা গুপ্তচর ভারতীয় বংশোদ্ভুত নূরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় হিটলারের নাৎসিবাহিনী

মেয়েটা সাহসী। ছোট থেকেই বুদ্ধিমতী। ঝড়ের মত এলোমেলো। আবার শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। আশ্চর্য মুক্তোর মত চকচকে একটা মেয়ে। ভারতীয় মেয়ে। আমেরিকান মা ও ভারতীয় রাজ‌ পরিবারের সদস্য বাবার সন্তান নূর। ছোট থেকেই সাহসী, বুদ্ধিমতী নুরের ইচ্ছে ছিল অন্যরকম কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

IMG-20230822-WA0011

নুরের শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ হয়েছিল ফ্রান্সে। পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল নূর। সাহসী, বুদ্ধিমতী নূরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স ছেড়ে পাড়ি দিতে হয় ব্রিটেনে। সেখানে গিয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে যোগ দিতে হয় তাঁকে।

সুফি মুসলিম ধর্মাবলম্বী পরিবারের সন্তান ছিলেন নূর। অহিংসা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন নূর। তবে দেশকে বড় ভালোবাসতেন তিনি। তাই স্বেচ্ছায় দেশের জন্যে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে যোগ দেন নূর। নানা দুঃসাহসিক অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি।

IMG-20230822-WA0009

প্রথম ব্রিটিশ মহিলা গুপ্তচর হিসেবে ১৯৪৩ সালে ছেড়ে আসা ফ্রান্সে ফিরে রেডিও অপারেটরের দায়িত্ব সামলাতে শুরু করেন। তবে গুপ্তচরবৃত্তি করাই ছিল মূল লক্ষ্য। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না একেবারে। নাৎসিবিরোধী প্রতিবাদের ঝড় উঠছে চারিদিকে। হিটলারবাহিনী প্রবলভাবে প্রতিরোধ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

নাৎসি বিরোধী প্রতিবাদ দমন করতে অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করে হিটলারের গেস্টাপো বা পুলিশ বাহিনী। নূরও সেই দলভুক্ত ছিলেন। নূরের জীবন-মরণ সমস্যা তখন। জার্মান পুলিশবাহিনী মহিলা হিসেবে নূরকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। নূরকে তাঁরা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল ব্রিটেনে। যদিও নূর তখন গুপ্তচর। সেই পরিচয় ফাঁস হওয়ার ঝুঁকি থেকেই নূর এনায়েত খান সেই ব্রিটেনে‌ ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

তবে এই প্রত্যাখ্যান ভালোভাবে নেয়নি হিটলারের পুলিশ বাহিনী। নূরকে পাঠানো হয় ডাশাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। ১৯৪৪ সালে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি দেশকে ভালোবেসে গেছেন।

মৃত্যুর আগে তাঁর বলা শেষ কথা ছিল 'লিবের্তে', অর্থাৎ স্বাধীনতা।

তবে পরবর্তীকালে সাহসিকতার জন্য নূর এনায়েত খানকে অন্যতম সর্বোচ্চ ব্রিটিশ সম্মান মরণোত্তর 'জর্জ ক্রস' প্রদান করা হয়। তাঁর জীবনীকার শ্রাবণী বসুর নিরন্তর প্রচারের ফলে ২০১২ সালে লন্ডন শহরে নূরের মূর্তি বসায় ব্রিটিশ প্রশাসন।

মধ্য লন্ডনে তাঁর বসতবাড়ির সামনে বসেছে মর্যাদাপূর্ণ ব্লু প্লেক। স্মৃতি ফলক। নূর এনায়েত খানের জীবনীকার শ্রাবণী বসু। তাঁর লেখায় তিনি নূর ইনায়েত খানের জীবন এঁকেছেন। এই সাহসী, বুদ্ধিমতী নারী দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।


এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...