সংসারহীনা নারীরা কাজ করতেন রাজার বিশ্বস্ত গুপ্তচর হিসেবে

রাজার সঙ্গেই থাকতেন এই বুদ্ধিমতী মহিলা। একবার রাজার কাছে এক বার্তা নিয়ে এসেছিলেন এক অন্য রাজ্যের দূত। বার্তার কাগজ উল্টে-পাল্টে দেখলেন রাজা। কিছুই লেখা নেই তাতে। এ কেমন বার্তা! বিভিন্ন উপায়ে সেই বার্তার কাগজের মধ্যে কোন ইঙ্গিত বা লুকোনো কোন কথা খুঁজতে শুরু করলেন রাজ-মন্ত্রীরা। যথারীতি সেখানেও ব্যর্থ সকলে। এর খানিকক্ষণ পরেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। রাজা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

অন্য এক রাজ্য থেকে আসা এক বার্তা রাজাকে অসুস্থ করে দিল! যে কাগজে কোন বার্তাই নেই!  অবাক হয়েছিলেন সেদিন রাজ্যের সকলে। রাজার এক চতুর, বুদ্ধিমতী মহিলা গুপ্তচর ছিলেন। ‌ তিনি প্রথম থেকেই বার্তার ওই কাগজ রাজাকে খুলতে নিষেধ করছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃত অর্থে ওই বার্তার কাগজে মাখানো রয়েছে বিষ। সেই মুহূর্তে ওই গুপ্তচরের কথা কেউ শোনেননি। তবে অসুস্থ রাজাকে সারানোর জন্য ডাকা হলো রাজবৈদ্যকে।

রাজবৈদ্য রাজার শরীর পরীক্ষা করে একই কথা জানালেন। রাজার শরীরে মেশানো হয়েছে বিষ। সে যাত্রায় রাজা বেঁচে গেলেও তিনি বুঝতে পারলেন এমন বুদ্ধিমতী, চতুর গুপ্তচর আগামী দিনেও তাকে এমন অনেক অতর্কিত আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে।

অর্থশাস্ত্রমতে এই ঘটনার পরেই রাজা সঞ্চার গুপ্তচরদের একটি বিশেষ ভাগ নির্দিষ্ট করে দেন। এই বিশেষ অংশে ভিক্ষুকী গুপ্তচরদের যুক্ত করেন তিনি।

চাণক্য বা কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রে বুদ্ধিমতী ও সুচতুর বৈশিষ্ট্যযুক্ত দরিদ্র, বিধবা, ব্রাহ্মণী যিনি নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য যে কোনো কার্যসম্পাদনে ইচ্ছুক এমন স্ত্রীলোকেরা যদি রাজার গুপ্তচরের কাজে নিযুক্ত হন তাদের ভিক্ষুকী বলা হয়। এক্ষেত্রে কাজে নিযুক্ত ব্রাহ্মণী ভিক্ষুকীরা যথাক্রমে পরিব্রাজিকা কিংবা মুন্ডিত মস্তকধারীরা  শূদ্র জাতিভুক্ত হলে তারা বৃষালি নামে পরিচিত হত।

চাণক্য বা কৌটিল্যের মতে এই ধরনের গুপ্তচরেরা সবচেয়ে বুদ্ধিমতী হতেন। যেমন রাজার দরবারেও রাজাকে সাহায্য করতেন তেমন এর বাইরেও রাজার নানা কাজে গোপন পরামর্শ দিতেন। এঁদের বাসস্থান মূলত রাজ-অন্দরমহলেই থাকত। চাণক্যের মতে মোট ১১ ধরনের বেতনের ব্যবস্থা ছিল রাজ গুপ্তচরদের জন্য। এই ভিক্ষুকী গুপ্তচরদের বেতন যথেষ্ট বেশি ছিল।

ভিক্ষুকী গুপ্তচরদের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলা হয়েছে অর্থশাস্ত্রে। এঁরা সাধারণত দরিদ্র ব্রাহ্মণী হতেন। বিধবা না হলে এই ধরনের গুপ্তচর হওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত না। ইতিহাসের পাতায় নানা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজকার্যে এই ধরনের গুপ্তচরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাওয়া গেছে।

এই গুপ্তচররা শুধু রাজা নয় রানীর গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করতেন। তাই রাজ্য চালানোতে এদের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় এই বৃক্ষ কি গুপ্তচররা রাজার অত্যন্ত বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে উল্লেখিত থাকতেন। এঁরা রাজ-পরিবারের ভেতর ষড়যন্ত্র হলেও রাজাকে সঠিক সময় খবর পৌঁছে দিতেন। সাজ-পোশাক দেখে অবশ্য এঁদের গুপ্তচর বলে সহজেই অনুমান করা যেত। সাধারণত এদের মাথা মোড়ানো থাকতো। তবে ব্যক্তিত্বের জন্য এই ধরনের গুপ্তচরদের সকলেই ভয় পেতেন। ইতিহাসের পাতায় এই ধরনের গুপ্তচরদের সরাসরি নাম না পাওয়া গেলেও পরোক্ষে এরা অনেক যুদ্ধে এবং রাজার বিভিন্ন কাজে নিজেদের প্রাণ নিবেদন করেছেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...