টলটলে অ্যাভোন নদী। পানকৌড়ি আর রাজহাঁস জলে সাঁতার কাটছে নিজের মনে। ঝরা পাতা আর জলের শব্দটুকু ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। তার পাশেই ইট-কাঠের দোতলা বাড়ি। ছয় শতাব্দী পেরিয়ে গিয়েছে তার বয়স।
সবুজ ঘাস ঢাকা বাগান। সকালের রোদ ছুঁয়ে বাগানটুকু হেঁটেই পার হতে হয়।
জায়গাটার নাম ‘স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন’। উত্তর ইংল্যান্ডের এক শান্ত গ্রাম। বাড়িটা মহাকবির। ফলকে লেখা উইলিয়ম শেক্সপিয়র। এই বাড়ি তাঁর পৈত্রিক বাড়ি।
শেক্সপিয়রের পুরনো বাড়ি মিউজিয়ামের রূপ পেয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটক, ছাত্রছাত্রীরা বারবার আসেন এখানে।
বাড়ির ভিতরের আদল বদলায়নি। শেক্সপিয়রের বিভিন্ন নাটকের অংশ পারফর্ম করেন শিল্পীরা এখানেই। সেখানেও দর্শক ভিড় কম নয়।
শেক্সপিয়রের বাড়ির বাগানটিও কম আকর্ষণের নয়। গ্রীষ্মের অবকাশে ফুলে ভরে থাকে বাগান। আলাদা করে চোখ টানবেই।
শেক্সপিয়রের এই বাগানে আসীন ‘প্রাচ্যের শেক্সপিয়র’ রবীন্দ্রনাথ। দ্বিতীয় কোনও কবি, লেখকের স্মরণিকা সেখানে নেই।
দুজনের মধ্যে বয়সের দূরত্ব শত-শত বছরের। একজন ৪৫০ বছর পেরিয়ে গিয়েছেন, আর একজন সবে ১১০ পার করেছেন। মাঝখানে প্রায় ৩০০ বছরের ব্যবধান। তবু একে ওপরের সঙ্গে মিলে গিয়েছেন তাঁরা।
ভিন্ন ভাষার সাহিত্যিক হয়েও তাঁদের লেখা মিল পান সাহিত্যের গবেষকরা।

১৯৯৫ সালে ভারতীয় হাইকমিশনার পক্ষ থেকে শেক্সপিয়র বার্থ ট্রাস্টকে উপহার দেওয়া হয়। ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য।
রবীন্দ্রনাথ জীবনের শুরু থেকেই ইংল্যান্ড আলাদা দাগ রেখেছিল। প্রথমবার ইংল্যান্ড আসা ১৭ বছর বয়স। ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।
তখন সবে পা রেখেছেন যৌবনে। আইন পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনে। তরুণ রবির টানে মুগ্ধ হয়েছিল বিলেত সমাজ। কিন্তু প্রথম দিকে এই বিদেশ কবিকে বিশেষ আকৃষ্ট করেনি। চিঠিপত্রেও উঠে এসেছে সে কথা।
‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’, ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি’, ‘জীবন স্মৃতি’র পাতায় পাতায় উঠে এসেছিল সাগরপারের জীবন।
প্রায় দেড়বছর ছিলেন সেখানে। ইংল্যান্ডের একা জীবন তাঁকে অন্যভাবে জীবন দেখতে শিখিয়েছিল।
In English

