কালী কথা: মালঞ্চের দক্ষিণা কালী মন্দির

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরে পুরাতন মালঞ্চে রয়েছে দক্ষিণা কালী মন্দির। যদিও মন্দিরটি মালঞ্চ ডাকাত কালী মন্দির নামেই জনপ্রিয়। মন্দিরের দেবীর ডাকাত কালী হিসাবেই পরিচিতা। তিন শতক পেরিয়ে আজও ভক্তরা ভিড় জমান মন্দিরে। মন্দিরের বয়স প্রায় তিনশো বছরের বেশি। প্রতিষ্ঠাফলক অনুযায়ী মন্দিরটি ১৭১২ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। গোবিন্দরাম রায় এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী চার চালায় মন্দিরটি নির্মিত। মন্দিরের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। তাতে শোভা পাচ্ছে রাম, বারণ রামায়ণ, মহাভারতের দৃশ্য।

মারাঠা দস্যু বর্গীনেতা ভাস্কর পণ্ডিত এই মন্দিরেই থাকতেন। তখনও জনবসতি গড়ে ওঠেনি। জঙ্গলে ঘেরা মালঞ্চে তখন হিংস্র জীবজন্তু দৌড়ে বেড়াত। এই মন্দিরে আঠারো শতকে আত্মগোপন করেছিলেন বর্গী নেতা। কোথাও বেরনোর আগে মন্দিরে পুজো দিয়ে যেতেন। বর্গীদের কাজ ছিল লুঠপাট। লুঠে বেরোনোর আগেও মা কালীকে পুজো দিতেন ভাস্কর। সেই থেকে এই মন্দিরের মা কালী ডাকাত কালী হিসাবে পরিচিতি পায়। যারা ডাকাতি করতেন তারা এখানে পুজো দিয়ে যেতেন। আজও মানুষ ডাকাত কালী বলেই ডাকেন দেবীকে। 

প্রতি বছর কার্তিকের অমাবস্যায় মহাধুমধাম করে এখানে কালীপুজো হয়। কালী পুজোর দিন প্রচুর ভিড় হয়। কালীপুজোর দিন তন্ত্র মতে পুজো হয়। বছরের অন্যান্য দিন বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। দেবী ভীষণ দর্শনা। মায়ের মুখশ্রী মোম দিয়ে তৈরি। ভিতরে পাথরের কলসের ওপর মোমের প্রলেপ দিয়ে দেবী কালিকার বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে। কলসের ভিতরে থাকে অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি। মন্দিরে দুর্গা ও রাধাবল্লভেরও পুজো হয়। প্রতি বছর দুর্গাষষ্ঠীর দিন মূর্তির ওপর মোমের প্রলেপ দেওয়া হয়।

পঞ্চ মুণ্ডের আসনের উপর দেবী প্রতিষ্ঠিতা। কোনও এক তান্ত্রিক দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রায় বংশের আদি বাড়ি ছিল খড়্গপুরের জকপুরে। মন্দিরের পাশেই ছিল জমিদারদের আর একটি বাড়ি। গোবিন্দরাম রায়ের উত্তরাধিকারী হিসাবে কালীগতি রায় পুজো দেখরেখ করতেন। কালীগতি ছিলেন নিঃসন্তান। কালীগতি রায় মারা যাওয়ার সময় মন্দিরের নামে ষাট হাজার টাকা রেখে গিয়েছেন। একটি ট্রাস্ট এখন মন্দিরের দেখভাল করে। বংশ পরম্পরায় রায় পরিবারের সদস্যরাই  ট্রাস্টের সভাপতি পদে আসীন হন। 

দৈনিক দেবীর নিত্যপুজো চলে। প্রতি দিন দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। আগে প্রতি দিন পাঁচপোয়া চাল নিবেদন করা হত ভোগে। এখন তার পরিমাণ কমে গিয়েছে। ডাকাত কালী নামে পরিচিত হলেও, এই মা আদপে দক্ষিণা কালী। স্থানীয়রা মন্দিরে পুজো দিতে আসেন নিত্যদিন। তাঁদের মতে, মা খুব জাগ্রত, পুজো দিলে মনস্কামনা পূরণ করেন দেবী।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...