বাংলার এলিট ক্লাসের সিগনেচার মিষ্টি

আজ বলব বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড মিষ্টির কথা। যদিও তার সৃষ্টিকর্তা বা জন্মসাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও কথিত আছে ১৮৫৪ সালে বাংলায় প্রথম রেলপথ তৈরির আগেই নৌকাপথে এই মিষ্টি কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্নস্থানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু কোথায় ছিল তার বাস? কার কথাই বা বলছি? সব বলব।

বলছি হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ার গুপো থুড়ি গুঁফো সন্দেশের কথা। খাদ্য-রসিক মহলে এই গুঁফো সন্দেশই গুপ্তিপাড়ার প্রধান আকর্ষণ।

Gufo-Sandesh1

এই মিষ্টি প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে গুপ্তিপাড়ার নামের রহস্য উদ্ঘাটন প্রয়োজন। ধর্মচর্চার পীঠস্থান গুপ্তিপাড়াকে 'গুপ্ত বৃন্দাবন' বলা হত। ক্রমে 'গুপ্ত বৃন্দাবন পল্লী', তার থেকে 'গুপ্তপল্লী' এবং পরিশেষে ‘গুপ্তিপাড়া’ নাম হয়। আর কথিত আছে এই গুপ্তিপাড়া নাকি সন্দেশের আঁতুড়ঘর! এখানেই প্রথম তৈরী হয় মাখা সন্দেশ।

পরে সেই মাখা সন্দেশকেই আকার দিয়ে তৈরী হয় গুপো সন্দেশ। কলকাতায় এই সন্দেশ জনপ্রিয় হলে তা 'গুপ্তি পাড়ার সন্দেশ' বা সংক্ষেপে 'গুপো সন্দেশ' বলে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় উচ্চারণ দোষে দুষ্ট হয়ে নাম হয় 'গুঁফো সন্দেশ'। তবে ভিন্ন মতে সন্দেশটি খাওয়ার সময় গোঁফে লেগে যায় বলে তার নাম হয়েছে গুঁফো সন্দেশ।

কিন্তু কীভাবে বানানো হয় এই সন্দেশ? গুপো সন্দেশের মূল উপাদান গরুর দুধের ছানা এবং খেজুর গুড়। খেজুর গুড়ই এর অনন্য স্বাদের রহস্য। ক্ষেত্র বিশেষে গুড়ের পরিবর্তে চিনিও ব্যবহার করা হয়। একসময় মাখা সন্দেশ থেকে গুপো সন্দেশ তৈরী হলেও, বর্তমানে মাখা সন্দেশের থেকে গুপো সন্দেশের পাক এক্কেবারে ভিন্ন।

Gufo-Sandesh2

বিশাল কড়াইয়ে ছানা পাক দিয়ে, সেই ছানা কাপড়ে ভরে কাঠ দিয়ে পিটিয়ে বাড়তি জল বের করে দেওয়া হয়। সেই পেটানো ছানায় গুড় মিশিয়ে সন্দেশের পাক দিয়ে ঠান্ডা করে খানিক  মিহি করে দু'টি করে সন্দেশ জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় গুপো সন্দেশ। এই সন্দেশের আরেক নাম জোড়া সন্দেশ।                  
                          
এখন গুপো সন্দেশের চাহিদা কমে এসেছে। কিন্তু বেশ কিছু বাঁধা খদ্দের রয়েছেন, যাঁরা এখনও এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির কদর করেন। সমস্যা হলো এই সন্দেশের ঐতিহ্য বজায় রাখা এখন প্রায় বিশ বাও জলে। কারণ পরবর্তী প্রজন্মর এই ব্যবসার প্রতি অনাগ্রহ।

তাই এই মিষ্টি প্রচারের আলোক থেকে বহু যোজন দূরে। তবে অনলাইনে এই মিষ্টি বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছে বেশ কিছু সংস্থা, কিন্তু সময় মতো সেই চাহিদার যোগান কতটা সম্ভব তার উপর নির্ভর করছে এর ব্যবসায়িক সাফল্য ও ভবিষ্যৎ। যাইহোক, টিকে থাকার লড়াই তো সব ক্ষেত্রেই আছে, এখানেও ব্যতিক্রম নয় - তবে তার মধ্যেও স্বাদের সন্ধানে খোদ গুপ্তিপাড়ায় পাড়ি দেওয়া যেতেই পারে।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...