ময়মনসিংহের মসূয়া থেকে কলকাতার বিশপ লেফ্রয় রোডের রায়দের তিন প্রজন্মের বাড়ির কাহিনি

আর পাঁচটা জমিদার বাড়ির মতোই পুকুর আর শান বাঁধানো পুকুর ঘাট রয়েছে। এখানে হয়ত একসময় বাড়ির মেয়ে-বৌদের অবসর সময় কাটাত। গল্পে, খুনসুটিতে মুখর হয়ে উঠত ঘাট।
না, ঘাটের কথা লিখতে বসিনি। এই ঘাটের সঙ্গে যুক্ত একটি অতি বিখ্যাত পরিবার ও তাঁদের বাড়ির কথা বলাই আমার উদ্দেশ্য। বর্তমানে এই ঘাট থাকলেও সে বড় নিঃসঙ্গ, একাকী। ঘাটের মালিক আজ আর নেই। তাই ঘাট ও তার সংলগ্ন বাড়ি আজ জরাজীর্ণ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ধ্বংস হওয়ার পথে।

এই ঘাটের পশ্চিমদিকে কয়েক একর জায়গা জুড়ে ছিল হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়ি। পূর্বদিকে ছিল প্রাচীর আর সিংহ দরজা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ তা বিলুপ্ত। পশ্চিমদিকে রয়েছে ভগ্নপ্রায় ভবন। বর্তমানে সেটি "ভূমি অফিস" নামে পরিচিত। বাড়ির ভিতরে রয়েছে কারুকার্য খচিত প্রাচীন দালান, বাগানবাড়ি, হাতি পুকুর, খেলার মাঠ ইত্যাদি। এই মাঠেই হয়তো একসময় কামদারঞ্জন খেলে বেড়াতেন। অবশ্য তখন তাঁর নাম বদলে হরিকিশোর রায়চৌধুরী রেখেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

প্রাকৃতিক পরিবেশ, পুকুর-নদী-নালা, বাঁশের ঝাড় আর আম-কাঁঠালে ভরা স্নিগ্ধতার পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছিলেন উপেন্দ্র কিশোর। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া উদ্দাম ব্রহ্মপুত্র ছিল তাঁর দুরন্ত বাল্য সঙ্গী।
ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামের কাশীনাথ রায় ওরফে মুন্সী শ্যামসুন্দরের ঘরে ১৮৬৩ সালের ১০ মে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন কামদারঞ্জন। পাঁচ বছর বয়সে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হরিকিশোর রায়চৌধুরী দত্তক নেন এবং নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বালকের নাম রাখেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

মসূয়ার হরিকিশোরের বাড়িতেই কেটেছে উপেন্দ্রকিশোরের বাল্য ও কৈশোর। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। বাঁশি, বেহালা, গান, ছবি আঁকা সবেতেই ছিলেন তুখোড়।
এখানে স্কুলে পড়াকালীন সহপাঠী বন্ধু গগন হোমের সঙ্গে আলাপ। গগনচন্দ্রের হাত ধরেই রামমোহন ও ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে পরিচিত হন। পরবর্তী কালে তিনি নিজেই এই ধর্ম গ্রহণ করেন। যুক্তিবাদী মননশীলতা গড়ে ওঠার পিছনে গগন চন্দ্র হোমের বড়ো ভূমিকা ছিল।

১৮৭৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার স্কুল থেকে পনেরো টাকার বৃত্তি নিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় তাঁর প্রাথমিক ঠিকানা হয় একটি ছাত্রাবাস। ১৮৮৪ সালে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ( বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ) থেকে বি.এ. পাশ করেন।
গান-বাজনার সুবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলাপ হল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর। দু'বছরের ছোট উপেন্দ্রকিশোরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্ব পরবর্তীকালে গভীর হয় তা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা।

১৩ নং কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়ি

ব্রাহ্ম সমাজের পরিচিত মুখ দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলাপ হয়। এই সময় উপেন্দ্রকিশোর ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মনেতা দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে বিধুমুখীকে বিবাহ করেন। সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরে ব্রাহ্ম মতেই বিবাহ হয়েছিল তাঁদের। তারপর মন্দিরের সামনে ১৩ নং কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের বিরাট লাল বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার জীবন শুরু করেন। রায় পরিবারের কলকাতা বাসের প্রাণকেন্দ্র ছিল কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের ১৩ নং বাড়ি। কলকাতায় তিনি যত থিতু হলেন, ময়মনসিংহের সঙ্গে তত ক্ষীণ হল যোগাযোগ।

এই বাড়িতে উপেন্দ্রকিশোর এবং বিধুমুখীর তিন মেয়ে সুখলতা, পুণ্যলতা, শান্তিলতা এবং দুই ছেলে সুকুমার ও সুবিনয়ের জন্ম। এই বাড়িতে একটি অন্ধকার ঘর ছিল। সেই ঘরে উপেন্দ্রকিশোরের ছবি তোলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলত। ১৮৯৫ সালে কর্ণওয়ালিসের এই বাড়িতেই তিনি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে যার নাম হয় "ইউ রায় অ্যান্ড সন্স"। নিজের খরচে বিলেত থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে এলেন। শুরু করলেন হাফটোন ব্লক প্রিন্টিংয়ের কাজকর্ম। ভারতে এই প্রথম। এই ছাপাখানা আর তার বিরাট যন্ত্রপাতি রাখার অসুবিধা হচ্ছিল ১৩ নং কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে।

৭ নং শিবনারায়ণ দাস লেন

৭নং শিবনারায়ণ দাস লেনে রায় পরিবার উঠে এলেন। সবচেয়ে ছোট ছেলে সুবিমল রায় এই বাড়িতেই জন্মায়। একটি ঘরে হল ছবি তোলার আর আঁকার স্টুডিয়ো। একটি ঘরে করা হল প্রেস। অন্য ঘর আর বারান্দা মিলিয়ে সাজানো হল বাকি দরকারি যন্ত্রপাতি। একটি ছোট স্নানঘর হল ডার্করুম। ছাপাখানা আরও বড়ো হওয়ায় ফের বাড়ি বদল।

২২ নং সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়ি

ছাপাখানা ক্রমশ বড়ো হল। জায়গার অপ্রতুলতায় রায় পরিবার চলে এলেন ২২ নং সুকিয়া স্ট্রিটের একটি বাড়িতে। সময়টা ১৯০০ সাল। সুকুমার রায়ের বয়স তখন তিন বছর। বাড়ির একতলায় হল ছাপাখানা আর দোতলা এবং তিনতলায় থাকতেন উপেন্দ্রকিশোরের পরিবার। ছোটদের "রামায়ণ", "মহাভারত", বাংলা উপকথার সংকলন "টুনটুনির বই" এই বাড়ি থেকেই প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৯১৩ সালের বৈশাখ মাসে জন্ম নিল "সন্দেশ" পত্রিকা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বয়স তখন পঞ্চাশ। " সন্দেশ" পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ২২নং সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়ি থেকেই। বাংলায় ছোটদের লেখালেখির এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এই পত্রিকার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে জগদীশ চন্দ্র বসু, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন।

এই বাড়িতেই সুকুমার রায়ের শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে। প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন নিয়ে পড়াকালীন তিনি সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে "ননসেন্স ক্লাব" তৈরি করেন। এই ক্লাবের একটি হাতে লেখা পত্রিকা ছিল। নাম "সাড়ে বত্রিশ ভাজা"। "ননসেন্স ক্লাবের" সদস্যদের জন্য সুকুমার রায় এই বাড়িতেই দুটি নাটক লিখেছিলেন। "ঝালাপালা" এবং " লক্ষ্মণের শক্তিশেল"। ১৯১১ সালে গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি নিয়ে সুকুমার রায় বিলেত যান। ১৯১৩ সালের অক্টোবর মাসে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে দু’মাসের মধ্যেই সুকুমার রায় বিয়ে করেন। জগৎচন্দ্র দাসের কন্যা সুপ্রভা দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১০০ নং গড়পার রোডের বাড়ি

১৯১৪ সালে ফের বাড়ি বদল। নতুন ঠিকানা ১০০ নং গড়পার রোড। এই বাড়ির নক্সা উপেন্দ্রকিশোর নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। এই বাড়ির সামনের অংশে ছিল মুদ্রণ শিল্পের যাবতীয় কার্যের ব্যবস্থা। পিছনের দক্ষিণ অংশে ছিল বসত বাড়ি। বিলেত থেকে ফিরে এসে সুকুমার রায় সন্দেশে যুক্ত হলেন। তাঁর গল্প, কবিতা আর তুলি দিয়ে আঁকা সাদা-কালো ছবি "সন্দেশে" অন্য মাত্রা যোগ করল। "সন্দেশ" প্রকাশের দুবছরের মধ্যে ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পাড়ি দিলেন শান্তির জগতে।

পিতার মৃত্যুর পর সুকুমার রায় "সন্দেশ" পত্রিকার যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। "সন্দেশের" জন্য তাঁর প্রথম রচনা ছিল "খিচুরি" (১৯১৫)। যা পরে " আবোলতাবলে" স্থান পায়। গড়পারের বাড়িতেই গড়ে তুলেছিলেন "মন্ডা ক্লাব"। যার ইংরেজি নাম ছিল "মনডে ক্লাব"। এই ক্লাবের সদস্য ছিলেন সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত, অতুল প্রসাদ সেন, প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবীশ, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এই ক্লাবের সদস্যদের জন্য আমন্ত্রণ পত্র সুকুমার রায় নিজে রচনা করতেন এবং ছাপা হতো "ইউ অ্যান্ড রায় সন্স" থেকে।

১৯২১ সালে সুকুমার রায়ের কালাজ্বর ধরা পড়ে। তখন সুকুমার রায়ের বয়স তেত্রিশ। সেই বছরই সুকুমার রায়ের একটি পুত্র সন্তান হয়। নাম রাখা হয় সত্যজিৎ। ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সকালে আড়াই বছর ধরে রোগের সঙ্গে কঠিন সংগ্রাম করে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯২৬ সালে পাঁচ বছর বয়সে সত্যজিৎ ওরফে মানিক মা সুপ্রভাদেবীর হাত ধরে "সোনামামার" "বকুল বাগানের" বাড়িতে উঠে আসেন।

বকুল বাগান রোডের বাড়ি

সোনামামা ওরফে প্রশান্ত কুমার দাসের বাড়িতে সত্যজিতের রায়ের ছোটবেলার একটা অংশ কাটে। অনেক মামা, মাসি, কাকাদের মাঝে বড় হতে থাকেন মানিক। এই বাড়িতেই পরিচিত হলেন সার্কাস আর ম্যাজিকের সঙ্গে। ম্যাজিক অবশ্য কলেজ জীবন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গী ছিল। বকুল বাগানের বাড়ি থাকাকালীই আলাপ হয়েছিল ক্যামেরার সঙ্গে। পরে তা গভীর ভালোবাসায় পরিণত হয়। এই বাড়িতেই দেখেছিলেন প্রথম নির্বাক ছবি "কালপরিণয়"।

বকুল বাগান বাড়িতে তাঁর প্রথম আলাপ হয় বিজয়া দাসের সঙ্গে। পাটনা থেকে তিনি ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁরা পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। বকুল বাগান থেকে ১৯৩২ সালে বেলতলা রোডের বাড়িতে আসেন। দু'বছর পর আবার বাসা পরিবর্তন। ১৯৩৪ সালে রাসবিহারী এভিনিউয়ের একটি বাড়িতে থাকা শুরু করেন। এই বাড়িটি তাঁর সোনামামা তৈরি করেছিলেন।

১/১বিশপ লেফ্রয় রোডের পূর্ববর্তী বাড়ি

শান্তিনিকেতন থেকে বি.এ. পাশ করার পর ডি.জে.কেরমার বিজ্ঞাপন সংস্থায় মাসিক আশি টাকা দিয়ে সত্যজিৎ রায় তাঁর কেরিয়ার জীবন শুরু করেন। সেই সময় বালিগঞ্জ গার্ডেন ফ্ল্যাটে একা থাকতেন। তখন তাঁর বয়স ২২ বছর। ১৯৪৮ সালে বিজয়াদেবীকে বিবাহ করেন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তাঁরা ৩১ লেক অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ছিলেন। এরপর ৩ নং লেক টেম্পল রোডের চার কামরার ফ্ল্যাটে উঠে আসেন।

১৯৫৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এখানেই থাকতেন। বিজয়া রায় এই বাড়িটি ঠিক করেছিলেন। মাসিক ভাড়া ছিল ৬৫০ টাকা। নীচের তলায় তাঁরা থাকতেন। এই বাড়িতে থাকাকালীন "সন্দেশ" পত্রিকা পুনরায় প্রকাশিত হয়। "পথের পাঁচালি", "পরশ পাথর", "জলসাঘর", এবং অপুর সংসারের মতো কালজয়ী সিনেমা এই বাড়ি থাকাকালীন সত্যজিৎ রায় তৈরি করেছিলেন।

১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ি

১৯৭০ সালে লেফ্রয় রোডের বাড়িতে উঠে আসেন। এই বাড়িতে তিনি দু'দশক ছিলেন। বিশপ লেফ্রয় ছিল সাহেব পাড়া। রাশিয়ান কলোনির পরিবেশ থাকায় প্রতিবেশির সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ খুব কম ছিল। উত্তর কলকাতায় জন্ম এবং সেই পরিবেশ তাঁর কাছে ছিল অত্যন্ত প্রিয়। তাই লেক টেম্পল রোডের মধ্যবিত্ত পরিবেশ তাঁর বেশি পছন্দ ছিল। দু'দশক এই বাড়িতে থাকার দরুণ তিনি বাড়িটিকে নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালের তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিগুলি এই বাড়ি থেকেই হয়। "প্রতিদ্বন্দ্বী" থেকে "আগন্তুকের" মতো সিনেমা এই বাড়িতে থাকাকালীন তৈরি করেন। সিনেমা জগতের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার "অস্কার" এই বাড়ির শোভা বৃদ্ধি করেছে। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সিনেমা তথা সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতির দিন। এই দিন সত্যজিৎ রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্তমানে ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোড সিনেমা প্রেমী তথা সাধারণ মানুষের কাছে এক তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিনে অগুন্তি মানুষ এখানে আসেন তাঁর স্মৃতির সান্নিধ্য পেতে। তিন প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা শিল্পকৃতির চিহ্ন বয়ে নিয়ে চলেছে বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...