সারদামণি মানেই মাতৃত্বের অপার ভাণ্ডার

মাতৃত্বের অপার ভাণ্ডার খুলে দিয়েছিলেন দেবী সারদা মণি। ঠাকুর পরমহংস তাঁকে পুজো করেছিলেন ষোড়শী রূপে। তিনি ছিলেন নরেনের জ্যান্ত দুর্গা। বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গা পুজো হয় ১৯০১ সালে, মা সারদার নামে পুজোর সংকল্প করা হয়। তাঁকে আলাদা করে জ্যান্ত দুর্গা রূপে পুজোও করেন স্বামী বিবেকানন্দ। জগতের মায়া কাটিয়ে মা ফিরে গেলেও তাঁর মাতৃত্বের ভাঁড়ার এখনও উন্মুক্ত। শ্রীশ্রী মা বলতেন, তিনি সকলের মা। এই তিনটি শব্দের অভিঘাত আজ মহিরূহে পরিণত হয়েছে। 

তাঁর মাতৃত্ব ছিল সহজাত। ঠাকুরের প্রয়াণের পর নরেন সহ তাঁর ত্যাগী ভক্তেরা গৃহত্যাগ করেছেন। দোরে দোরে ঘুরছেন ছেলেরা। ১৮৯০ নাগাদ বুদ্ধগয়া ভ্রমণে গেলেন মা। সেখানকার মঠে সাধুদের সংঘবদ্ধ জীবন দেখে ছেলেদের দুঃখের কথা মনে পড়ল মায়ের। ব্যথিত হলেন মা। ঠাকুরের কাছে চাইলেন, তাঁর ছেলেদের যেন স্থায়ী আশ্রয় জোটে। এ আকুতি তো এখন মায়েরই থাকে। মায়ের ভাবনা থেকেই তো রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের জন্ম। ঠাকুর যে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন তাতে তেল ঢেলে, সলতে পাকিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মা-ই! নিভতে দেননি কোনও মতে।

ভক্ত মাত্রেই তাঁর কাছে সন্তানসম। মা বলতেন, জগৎকে আপনার করে নিতে শেখো। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার। শ্রীম থেকে শম্ভু মল্লিক, ভয়ঙ্কর ডাকাত থেকে সারা বুল, ওলি বুল, মুসলমানের এঁটো পাত সাফ করা থেকে নিবেদিতাকে নিজে হাতে খাইয়ে দেওয়া, কে তাঁর মাতৃত্বের ছোঁয়া পায়নি? 

মায়ের এক ভক্ত আমজাদ। নিজের হাতে তাকে খেতে দিয়েছিলেন, এমনকী খাওয়া শেষে এঁটো থালা পরিষ্কার করতেও মায়ের কোনও দ্বিধা ছিল না। আমজাদ সম্পর্কে মা বলেছিলেন, শরৎ (স্বামী সারদানন্দ) যেমন ছেলে (তাঁর ছেলে অর্থে), ওই আমজাদও তেমন ছেলে। রক্ষণশীলতার বেড়াজালকে নিজে হাতে সরিয়েছেন। অপার মাতৃত্বের স্নেহে কাছে টেনে নিয়েছেন সকলকে, পশুপাখিরাও তাঁর সন্তানস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি।

আত্মসিদ্ধি নয় পরহিতে কাজ, অপরের জন্য কাজ; রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মূল সুর তো তিনিই বেঁধে দিয়েছিলেন। মা সারদার হাত ধরেই এগিয়েছে রামকৃষ্ণ ভাব আন্দোলন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের লোকসেবার ভাবনা, সারদামণি ছাড়া সুসংহত রূপ পেত না। মায়ের শিখিয়ে দেওয়া মহামন্ত্রই নরেনদের চাবিকাঠি। তাই তো তিনি এক অর্থে দেবী আর এক অর্থে মা। দেবী ও মা একে অন্যের আত্মপ্রকল্প। সত্য জননী। কেবল লীলাসঙ্গিনী হিসাবে নয়, সাধনপথে ঠাকুরকে শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিলেন সারদা দেবীই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...